ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

উৎপাদন মৌসুম সমাগত, হ্যাচারী শিল্পে রাত-দিনের ব্যস্ততা

mail-google-comআতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার :::

কক্সবাজারের বাগদা চিংড়ি হ্যাচারী শিল্পে চলছে রাত-দিনের ব্যস্ততা। আসন্ন উৎপাদন মৌসুমকে সামনে রেখে বিভিন্ন মেশিনারী, ট্যাংক ও অবকাঠামো মেরামত এবং সংস্কারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মালিক-শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কক্সবাজার কলাতলী, উখিয়া সোনার পাড়া-ইনানী ও টেকনাফ হ্যাচারী জোনের প্রায় ৬০টি বানিজ্যিক হ্যাচারী প্রাক-উৎপাদন প্রস্তুতির মহা কর্মযজ্ঞে মেতে রয়েছে। মঙ্গলবার হ্যাচারী জোন ঘুরে দেখা গেছে, হ্যাচারীগুলোতে ট্যাংক রিপিয়ারিং, সাগরের পানি ট্রিটমেন্ট-ফিল্ট্রেশন সিসটেম, সী-ওয়াটার লাইন,  পাইপ লাইনসহ যাবতীয় অবকাঠামো মেরামতে আত্মনিয়োগ করেছেন কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও জেনারেটর, বয়লার, ওয়াটার পাম্প, আল্ট্রা-ভায়োলেট ট্রিটমেন্ট, ব্লোয়ার মেশিনসহ রকমারী যন্ত্রাংশ মেরামত ও চেক-আপও করে নেয়া হচ্ছে। ইলেক্ট্রিক ওয়্যারিং ও পিএল ডেলিভারী সেকশন প্রস্তুতির কাজও চলছে পুরোদমে। গভীর সাগর থেকে আহরিত মা-চিংড়ি থেকে নির্গত ডিম ও পোনা প্রতিপালনের জন্য এল আর টি ও নার্সারী ট্যাংক প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব ট্যাংক রিপিয়ারিং করে বিশেষভাবে তৈরি “এ্যাপক্সি মেরিন পেইন্ট” রঙ দেয়ার কাজ চলছে পুরোদমে। বিশেষ উক্ত রঙ আগে বিদেশ থেকে আমদানী করতে হলেও এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশেই তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে। উপরোক্ত সব কাজ সম্পন্ন হলে মা-চিংড়ি (মাদার শ্রীম্প) তোলার পর শুরু হবে বাগদা চিংড়ি পোনা উৎপাদন ও সরবরাহ । আগামী ২০ ডিসেম্বরের পরে বেশীর ভাগ হ্যাচারীতে মাদার শ্রীম্প তোলা হবে বলে জানিয়েছেন টেকনিশিয়ানরা। উৎপাদন প্রক্রিয়া নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে ফিড, মেডিসিন ও আর্টিমিয়াসহ অন্যান্য এলসি আইটেমের দাম নাগালের মধ্যে রাখার দাবী জানিয়েছেন হ্যাচারীখাত সংশ্লিষ্টরা। ইতিপূর্বে ভিনদেশী টেকনিশিয়ানরা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বিগত ৭/৮ বছর যাবৎ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ দেশীয় টেকনিশিয়ানরাই হ্যাচারীগুলোতে প্রোডাকশন দিচ্ছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে হাতে-কলমে নিবিড় প্রশিক্ষন  প্রাপ্ত প্রায় ৪শত দক্ষ দেশীয় টেকনিশিয়ান এখন সাফল্যের সাথে হ্যাচারীখাত নিয়ন্ত্রন করছেন। সোনার পাড়া হ্যাচারী জোনস্হ  নিরবিলি প্লাস হ্যাচারীর ব্যবস্থাপক আমানুল হক বলেন, বিগত প্রায় একদশকে বিদেশী টেকনিশিয়ানদের চেয়ে দেশীয়রা অনেক ভাল প্রোডাকশন করে দেখিয়েছেন, তাই এখন বিদেশী টেকনিশিয়ানদের তেমন চাহিদা নেই। আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষনা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিস’র কক্সবাজারস্থ ল্যাবরেটরি ম্যানেজার পার্থপ্রতিম দেবনাথ বলেন, গত মৌসুমে প্রায় ১৫ কোটি ভাইরাসমুক্ত স্পেসিফিক প্যাথোজেন্ট ফ্রি (এসপিএফ) পোনা উৎপাদন করা হয়েছিল। চলতি মৌসুমে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। কক্সবাজার মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে প্রকাশ, কক্সবাজার জেলায় প্রায় ৭০টি বাগদা চিংড়ি হ্যাচারী রয়েছে। এসব হ্যাচারীতে প্রতি বছর এক হাজার কোটিরও বেশী বাগদা চিংড়ি পোনা উৎপাদন হয়।

পাঠকের মতামত: