ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া পৌর সদর ছিনতাইকারীদের দখলে ‘কানে দিয়েছে তুলা, পিঠে দিয়েছে কুলা’

mr mahএম.আর মাহমুদ :::::

রোম শহর যখন পুড়ে যাচ্ছিল, তখন রোমের শাসক নিরু নিজ প্রাসাদে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিল। ঘটনাটি পুরানো হলেও ইতিহাস থেকে মুছে যায়নি। বর্তমান হাল চিত্র দেখে চকরিয়া পৌর সদরের অবস্থার সাথে তুলনা করা যায়। পৌর সদরে সাধারণ মানুষের দুর্দশা দেখলে, রোম সম্রাট নিরুর কাহিনীটাই বারবার মনে পড়ে যায়। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কিছুই করার নাই। পাবলিক যেন বলির পাঠা। তাই কহনও যায় না, সহনও যায় না। তারপরও নিশ্চুপ কথাই অপরাধ, এ মন্ত্রের বিশ্বাসী হয়ে প্রতিবাদ স্বরূপ বাধ্য হয়ে লিখতে হচ্ছে। ইদানিং চকরিয়া পৌর শহর চিরিংগা অলি গলিতে টোকাই শ্রেণির ছিনতাইকারী দলের তৎপরতা লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। এসব অপরাধীদের অত্যচারে গ্রামের সহজ-সরল মহিলা ও পুরুষরা বড়ই অসহায় পড়ছে। প্রতিদিন এসব ছিনতাইকারী নানা কৌশলে অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আমলে নেই বললেই চলে। এছাড়া প্রতিনিয়ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাগামী ছাত্রীরা ওইসব ছিনতাইকারী দলের রোসানল ও ইভটিজিং থেকে নিস্তার পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে বিনা বাঁধায় এসব অপকর্ম চালাতে গিয়ে শিক্ষানবীশ অপরাধীরা দক্ষ অপরাধীতে পরিণত হচ্ছে। বিভিন্ন মহানগরীতে টোকাই শ্রেণি থেকে গজিয়ে উঠা সন্ত্রাসীরা এক সময় ভয়ঙ্কর অপরাধী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার নজির ভুরি ভুরি। যথা সময়ে ওইসব টোকাই শ্রেণির সন্ত্রাসীদের দমন করতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা এক সময় ভয়ঙ্কর অপরাধী হিসেবে অপরাধ জগতের ডনে পরিণত হয়েছে। কথায় আছে ‘সময়ের এক ফোট, অসময়ের দশ ফোট’।

বেশ কিছুদিন ধরে চকরিয়া পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র চিরিংগা বাণিজ্যিক এলাকার বেশিরভাগ মার্কেট মালিক সাধারণ মানুষের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ভাসমান দোকান বসিয়ে ভালই আয়-রোজি করছে। উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও থানা পুলিশ কালে ভাদ্রে এসব ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করে থাকেন। তবে এসব উচ্ছেদ অভিযান স্থায়ী হয় না। রসিকজনেরা ব্যাঙ্গার্থকভাবে অনেক সময় উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে মন্তব্য করতে শোনা যায়, ‘সন্ধ্যায় গর্ভবতী, সকালে খালাস’। বলাও যায় না, হজম করাও যায় না, সাচ্ছন্দ্যভাবে মার্কেটের সামনে দিয়ে হাঁটাও যায় না। বিশেষ করে বাজারগামী মহিলারা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী ছাত্রীরাই বড় বেকায়দায়। ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে মার্কেটের সামনে দিয়ে হাঁটায় দায়। অপরাধীদের ভিট সবসময় লেগে থাকে। ভিটের সাথে মিশে থাকে টোকাই শ্রেণির ছিনতাইকারীরা। সুযোগ বুঝে মহিলাদের হাতল ব্যাগ খুলে মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। কপাল মন্দ হলে এসব ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধরাও পড়ে। সামান্য উত্তম মধ্যম দেওয়ার পর তাদের সহযোগীরা এগিয়ে এসে মারমুখী আচরণ করে ছিনতাইকারী দলের সদস্যদের ছিনিয়ে যায়। কারও করার কিছু থাকে না। হালে উর্দি পড়া পৌরসভার কিছু পেয়াদা লাঠি নিয়ে রাস্তায় দায়িত্ব পালন করতেও দেখা যায়। তাদের ভূমিকা দেখলে মনে হয়, টোকাই শ্রেণির ছিনতাইকারীদের সাথে উর্দি পরা পেয়াদাদের সম্পর্ক অনেকটা খেজুর গাছ আর কলসির মত। বিষয়টি পৌরসভার নজরে আছে কিনা কারও জানা নেই। গত কয়দিন আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাহেদুল ইসলাম ও পৌর মেয়র আলমগীর চৌধুরীর নেতৃত্বে থানা পুলিশ মার্কেটের সামনে ও রাস্তায় বসানো ভাসমান দোকানগুলো উচ্ছেদ করে। সড়কের একমুখী গাড়ী চলাচল করতে বাধ্য করায় পথচারীরা বিপদ থেকে অনেকটা নিস্তার পেয়েছে। তবে পাবলিকের সুখ বেশিদিন কপালে থাকে কিনা আল্লাহই জানে। চকরিয়া পৌর সদরের বাণিজ্যিক শহর চিরিংগা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। আমরা সাধারণ নাগরিক হিসেবে উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভাকে এককভাবে দায়ী করব না। ইতিমধ্যে তাদের সহযোগিতায় বালিকা বিদ্যালয় সড়ক থেকে আড়ৎদারদের দোকানগুলো বাস টার্মিনালে সরানো হয়েছে। আরেকটু গতিশীল হয়ে চিরিংগা পুরাতন বাস স্টেশন থেকে বাস কাউন্টারগুলো সরিয়ে টার্মিনালে নিয়ে গেলে চকরিয়া সদরের যানজট অনেকটা হ্রাস পাবে। সরকারি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিশাল বাস টার্মিনাল নির্মাণ করেও জনগণ সুফল পাবে না তার কোন অর্থই হয় না। এ পরিমাণ টাকা ব্যয় করে টার্মিনাল নির্মাণ করেও সুফল না পেলে সরকারি কোষাগারে বিশাল অর্থ কি পানিতে যাবে? টোকাই শ্রেণির ছিনতাইকারীদের দাপটের কথা পৌর পরিষদ সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অজানা নয়। তারপরও কিভাবে এসব অপরাধী বিনা বাঁধায় অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে, তা কারও বুঝে আসে না। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কি ‘কানে দিয়েছে তুলা, পিঠে দিয়েছে কুলা’

 

পাঠকের মতামত: