ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

আর্তমানবতার সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল

cox-baitussaraf-pic-2নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :::
আর্তমানবতার সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইনডোর ও আউটডোর মিলে এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চোখের অপারেশন হয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশী রোগীর। এটি অসাম্প্রদায়িক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত চক্ষু রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন অর্ধডজন খানেক চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। রয়েছে দক্ষ ব্যবস্থাপনা কমিটি।
কথায় নয়, কাজেই প্রমাণ কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল। এখানে রয়েছে স্বল্প খরচে চোখের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ অপারেশন ব্যবস্থা। নামমাত্র মূলে রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা, ক্ষেত্র বিশেষে সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসাও দেয়া হয়। এ কারণে বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালের সুনাম-সুখ্যাতি কক্সবাজার ছাড়িয়ে চট্টগ্রামের বাইরেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালের যাত্রা হয় ১৯৯২ সালে। চক্ষু অপারেশন কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৭ সাল থেকে। পীরে কামেল আল্লামা কুতুব উদ্দিন (হুজুর কেবলা) প্রতিষ্ঠানটির মূল অভিভাবক। তার আধ্যাত্নিক ও জ্ঞানগর্ভ নির্দেশনায় এই হাসপাতাল পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে প্রতিদিন আওটডোরে প্রায় ২০০, ইনডোরে ৫০ জন রোগীর সেবা দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ভিজিট ফি নেওয়া হয় মাত্র ১০০ টাকা। বিকাল ৩টার পর চেম্বারে থাকেন স্পেশাল চিকিৎসক।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডিইউ ডিগ্রীধারী চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাক্তার মো. মুশফিকুর রহমান নিয়মিত চেম্বার করেন এখানে। তিনি বর্তমানে হাসপাতালের চীফ সার্জন। তার তত্ত্বাবধানেই প্রতিদিন অন্তত অর্ধশত রোগীর অপারেশন হয়।
তিনি ছাড়াও এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার ডা. সুমাইয়া ইয়াসমিন, ডা.মিশকাত জাহান নূর, ডা. মো. ওমর ফারুক এবং ডা. মো. ইসমাইল হোসাইন। আর সব কিছু সার্বক্ষনিক দেখভাল করেন হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব মাস্টার সিরাজুল ইসলাম। এ কারণে বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল শুধু কক্সবাজারের নয়, এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র সর্ববৃহৎ সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান বলে প্রচার আছে।
বুধবার সন্ধ্যায় সরেজমিন ইনডোরে গিয়ে ষাটোর্ধ রোগী মকবুল আহমদের সাথে কথা হয়। তার বাড়ী চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়।
মকবুল আহমদ জানান, ১০ বছর ধরে তিনি চোখ নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। দুই চোখে কিছুই দেখেননা। হাঁটাচলা করতে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। ১৭ দিন আগে ডান চোখের অপারেশন হয়। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বাম চোখের সফল অপারেশন হয়েছে।
তিনি কৃতজ্ঞতা সূরে বলেন, ‘আপারেশনের পর থেকে ডান চোখে সব কিছু স্পষ্ট দেখতে পাই। বাকী চোখও ভাল হবে আশা করছি। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ।’
পাশের সীটে বসে আছেন রওশান আলী নামের আরেক রোগী। দুই বছর ধরে তিনি দু’চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পাননা। রওশন আলীর বাড়ী পার্বত্য জেলার বান্দরবানে। ১৪ দিন আগে তার ডান চোখ অপারেশন সম্পন্ন হয়। এই চোখ এখন পুরোপুরি ভাল। বুধবার ডান চোখের অপারেশন হয়েছে।
একইভাবে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে চোখের চিকিৎসা করতে আসা শামসুল আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ২ বছর যাবত চোখ নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। বুধবার বাম চোখের অপারেশন হওয়ার পর তিনি স্বস্থি অনুভব করছেন। হাসপাতালের সেবার মান ও চিকিৎসকদের যত্নশীল মনোভাবের কারণে তিনি সন্তুষ্ট।
এরকম চোখের অপারেশনের জন্য গতকাল একদিনের সিরিয়ালে ছিল ৪৩ জন রোগী। এদের মধ্যে ১৮ জন মহিলা ও ২৫ জন পুরুষ। সেখানে অর্ধেকের বেশী রোগীর অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালের সেবা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংবাদিকতা ও গবেষণায় ২০০১ সালে বায়তুশ শরফ সম্মাননাপ্রাপ্ত বিশ্বজিত সেন জানান, পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠির অন্ধত্বের হার কমিয়ে আনতে বায়তুশ শরফ একটি আন্দোলন শুরু করে। শহর ছাড়িয়ে তারা পাহাড়ী অঞ্চলেও সিকিৎসাসেবা পৌঁছিয়ে দিয়েছে। বায়তুশ শরফের কারণে অন্ধত্নের হার অনেকটা কমে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, ব্যয় বহুল হওয়ায় অনেক গরীব-অসহায় মানুষ চোখের চিকিৎসা করতে পারেনা। এসব মানুষের দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল।
হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম কামাল জানান, বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের জন্য বড় ধরণের অশীর্বাদ। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ পর্যন্ত আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে নিম্নশ্রেনীর কর্মচারী পর্যন্ত মানবসেবায় আন্তরিক।
হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রেষ্ট সমাজসেবক পুরস্কৃত জেলার বরেণ্য শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব মাস্টার সিরাজুল ইসলাম জানান, একটি বায়তুশ শরফ হাসপাতাল লাখো মানুষের চোখে আলো ফিরিয়ে দিয়েছে। নামেমাত্র মূল্যে অথবা বিনামূলে হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়। শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৪ লাখ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চোখের অপারেশন হয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশী রোগীর। এটি একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবাই আন্তরিক ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে। হাসপাতালের সেবা আরো প্রশস্ত করতে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

 

পাঠকের মতামত: