ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৩ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

pekuaনিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া :::

পেকুয়ায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৩জন প্রার্থী সদস্য পদে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে ৪নং ওয়ার্ড়। আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪নং ওয়ার্ড় (পেকুয়া) থেকে সদস্য পদে লড়তে এ ১৩জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। গতকাল জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসব প্রার্থীরা তাদের স্ব-স্ব মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন জমাদানে শেষ দিন ছিল গতকাল বৃহষ্পতিবার (১ডিসেম্বর)। সর্বশেষ সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে এসব প্রার্থীরা তাদের মনোনয়ন পত্র গতকাল দাখিল করেছন। ১৩জন প্রার্থীর মধ্যে সদস্য পদে ৪নং ওয়ার্ড়ের জন্য ১১জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। অপর দু’জন প্রার্থী সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য প্রার্থী হয়েছেন। উপজেলার অপর শিলখালী ইউনিয়ন ৫নং ওয়ার্ড চকরিয়া উপজেলার সাথে সংযুক্তি হয়েছে। আগামি ৩ ও ৪ ডিসেম্বর বাছাই চলবে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১১ডিসেম্বর।

প্রতীক বরাদ্ধের দিন ধার্য্য হয়েছে ১২ডিসেম্বর। গতকাল ছিল মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন। নির্বাচনে আগামি ২৮ডিসেম্বর ভোট গ্রহন অনুষ্টিত হবে। সরাসরি গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচন সারা দেশে অনুষ্টিত হচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে পেকুয়ায় অনেকটা চাঙ্গাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। নির্বাচনের আনুষ্টানিকতা শুরু হচ্ছে। তবে নির্বাচনের অআনুষ্টানিকতা গত এক মাস আগে থেকে শুরু হয়েছে। সীমিত ভোটরার এ নির্বাচনে প্রার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ সুত্রে প্রার্থীরা জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। পেকুয়ায় ১৩জন প্রার্থীর মধ্যে ১১জন আওয়ামী লীগ সমর্থিত। অপর দু’জন প্রার্থীর মধ্যে একজন জাতীয় পার্টি সমর্থিত। অপরজন নির্দলীয়। ক্ষমতাসীন দল সমর্থিতরা হলেন জেলা আ’লীগ সদস্য এস.এম গিয়াস উদ্দিন, জিএম কাসেম, আবু হেনা মোস্তাফা কামাল চৌধুরী, উম্মে কুলসুম মিনু, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, রাজাখালী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ খান রাজু, এড.রাশেদুল কবির, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান ফরায়েজী, শিলখালী ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচীর সহ-ধর্মিনী ছৈয়দা নিঘাদ আমীন, মোর্শেদুল ইসলাম, মো.ইকবাল হোসেন, জাতীয় পার্টি পেকুয়ার সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ বিডিআর জাহাঙ্গীর। নির্দলীয় প্রার্থী মো.তারেক ছিদ্দিকী।

এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি ও তার দলগত অনুসারীরা অংশ গ্রহন না করায় বিএনপির সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ কিংবা দল নিরপেক্ষ প্রার্থীকে ভোট প্রয়োগ করতে পারেন। পেকুয়ায় যেসব প্রার্থীরা ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন তারা সবাই পেকুয়ার জন্য অত্যন্ত পরিচিত মুখ। এদের মধ্যে উপজেলার শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিবিদরা এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে প্রবীন ও তারুন্যের উজ্জিবীত ব্যক্তিবর্গ নির্বাচন করছেন। কয়েকজন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃত্বের ব্যক্তিরাও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে চলছে চুল ছেড়া বিশ্লেষন। আনুষ্টানিক নির্বাচনী প্রচারনা এখনো ব্যাপকভাবে শুরু হয়নি। প্রতীক বরাদ্ধের পর থেকে আশা করা হচ্ছে

 নির্বাচনী মাঠ সরগরম হবে। অনেক প্রার্থী হেভিওয়েট সাবেক নেতাদের উত্তোরসুরি হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। প্রার্থীদের মধ্যে এস.এম গিয়াস উদ্দিন উপজেলা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি। এক সময়ের চট্টগ্রাম আইন কলেজেরে সাবেক ভিসি ছিলেন। জেলা আ’লীগের দ্বিতীয় বারের মত সদস্য হয়েছে। পেকুয়া উপজেলা আ’লীগের সাবেক সহ-সভাপতিও ছিলেন তিনি। জিএম আবুল কাসেম জেলা আ’লীগের বর্তমান কমিটির সদস্য। জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতিও তিনি। গত ইউপি নির্বাচনে বারবাকিয়া ইউনিয়ন থেকে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি ওই ইউপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। পেকুয়ায় তার পরিচিতি রয়েছে। আবু হেনা মোস্তফা কামাল চৌধুরী মগনামা ইউনিয়নের জমিদার বাড়ির সন্তান। তিনি জেলা আ’লীগের বর্তমান কমিটির সদস্য। সাবেক কমিটিতে প্রচার সম্পাদক ছিলেন। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি কক্সবাজার ইউনিটের সাধারন সম্পাদক। একইভাবে কমিউনিটি পুলিশিং কক্সবাজার জেলার সাধারন সম্পাদক। তিনিও অত্যন্ত পরিচিতি। জাহাঙ্গীর আলম উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। এর আগের কমিটিতে তিনি সাধারন সম্পাদক ছিলেন। সদরের সাবেক ইউপি সদস্য। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন একবার। পেকুয়ায় তারও ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। উম্মে কুলসুম মিনু জেলা আ’লীগের সদস্য। পেকুয়া উপজেলা মহিলা আ’লীগের সাবেক সভানেত্রী। ১ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছিলেন। নারী নেত্রী হিসেবে পেকুয়ায় তার প্রচন্ড পরিচিতি অর্জন করেছেন। তার স্বামী এড. গিয়াস উদ্দিন রাজাখালীর সন্তান। তিনিও আ’লীগের একজন নিবেদীত নেতা। ছৈয়দা নিঘাদ আমীন শিলখালী ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচীর সহ-ধর্মিনী। শাশুর ছাদেকুর রহমান ওয়ারেচী পেকুয়াসহ জেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। দক্ষিন চট্টলার খ্যতিমান রাজনীতিবিদ। পেকুয়া উপজেলা আ’লীগের প্রয়াত সভাপতির পুত্রবধু। ওয়ারেচী পরিবারের আলাদা ইমেজ ও গ্রহন যোগ্যতা রয়েছে এ জনপদে। নির্বাচনে ওই পরিবারের সদস্য হিসেবে তিনি হেভিওয়েট প্রার্থী। এড. রাশেদুল কবির তরুন রাজনীতিবিদ। চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবি। সুচিন্তা বাংলাদেশ এর পেকুয়ার আহবায়ক ছিলেন। তার পিতা এড.কামাল হোসেন পেকুয়ার সর্বজন গ্রহনযোগ্য ও প্রশংসনীয় ব্যক্তিত্ব। যিনি একজন মুক্তিযুদ্ধা। জেলা আ’লীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। পেকুয়া সদর ইউনিয়ন থেকে তার পিতা এড.কামাল হোসেন তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জেলার শ্রেষ্ট চেয়ারম্যান হিসেবে দু’বার স্বর্ন পদক পেয়েছিলেন। পিতার ক্লীন ইমেজ ও তারুন্যের প্রতীক হিসেবে তার পরিচিতি পেকুয়ায় আছে। মেহেদী হাসান ফরায়েজী উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। তার পিতা আ.ক.ম শাহাব উদ্দিন ফরায়েজী উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ছিলেন। ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে খুন হন। তিনি একজন মুক্তিযুদ্ধা ছিলেন। পেকুয়ায় শাহাব উদ্দিন ফরায়েজী অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন। পিতার যুগ্য উত্তোরসুরি হিসেবে মেহেদী হাসান ফরায়েজী সর্বজন গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তার পিতার ইমেজ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ বিডিআর জাহাঙ্গীর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক। পেকুয়া-চকরিয়ার এমপি জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হওয়ায় এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার একটি চমক থাকতে পারে। তিনিও পেকুয়ায় পরিচিত। তারেক ছিদ্দিকী নির্দলীয় প্রার্থী। পেকুয়া কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি.এর সেক্রেটারী। এডভোকেট এর সহকারি তিনি। তারেক মুন্সি নামে তাকে সবাই চিনে। তিনি অত্যন্ত পরিচিতি পেকুয়ার জন্য। নির্বাচনে তাকেও সমীহ করা হচ্ছে। রিয়াজ খান রাজু রাজাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। তার পিতা সেকান্দার আলী রাজাখালীর পরিচিতি মুখ। সমাজসেবায় রাজু খুব অল্প সময়ে প্রসারিত হয়েছেন। তার ইমেজও আছে। ইকবাল হোসেন উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কাসেমের ছোট ভাই। নবীন প্রজন্মরা তাকে চিনেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। জোট সরকারের সময় পরিবারের সব সদস্য ব্যাপক হয়রানি হয়েছেন। ইকবালও একাধিক মামলার আসামি ছিলেন। আ’লীগ সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব মামলা প্রত্যাহার করেন। মোর্শেদুল আলম পেকুয়া জমিদার বাড়ির উত্তোরাধিকারী। রাজনৈতিকভাবে তেমন পরিচিতি না থাকলেও তিনি আ’লীগ সমর্থিত। ভদ্র, ন¤্র, সুশিক্ষিত এ তরুন সমাজ সেবক নিজেকে প্রতিষ্টিত করতে এবারে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

পাঠকের মতামত: