ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় এস.আলম গ্রুপের জমি নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১৩, ব্যাপক গুলাগুলি

pic-pekua-16-11-16পেকুয়া প্রতিনিধি :::

পেকুয়ায় মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিন মগনামা এলাকায় আজ বুধবার (১৬নভেম্বর) সকালে এস.আলম শিল্প গ্রুপের জমি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১৩জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজন ইউপি সদস্যও রয়েছেন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে অন্তত ২০-৩০রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে। খবর পেয়ে পেকুয়া থানা পুলিশ দু’দফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জমি দখলকে কেন্দ্র করে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নে দক্ষিন মগনামার কাজিবাজারে রনক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়েছে। ইটপাটকেলের আঘাতে উভয়পক্ষের লোকজন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনতে দুপুরের দিকে কাজিবাজারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আতংক ছড়িয়ে পড়লে কাজিবাজারে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এ রিপোর্ট লেখা (বিকেল ৪টা পর্যন্ত) দক্ষিন মগনামায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আহতরা হলেন কাদেরবলি পাড়া এলাকার নুরুল আজিম, জসিম উদ্দিন, ওবাইদুর রহমান, আছাদনুর, সালাহ উদ্দিন, মগনামা ইউপির সদস্য ৮নং ওয়ার্ড় সদস্য জাইদুল হক, মরিচ্যাদিয়া এলাকার নুরুল আবছার, ছলিম উল্লাহ, আব্দু ছালাম, বোড়িং পাড়া এলাকার আব্বাস উদ্দিন, সাতঘরপাড়া এলাকার মানিক মাঝি অপর দু’জনের নাম জানা যায়নি। আহতরা চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে মগনামা ইউনিয়নে চট্টগ্রামের এস.আলম শিল্প গ্রুপ কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় ৮শত কানি জমি ক্রয় করেন। ওই জমি এস.আলম গ্রুপ স্থানীয় লবন চাষিদের অনুকুলে লাগিয়ত করেন। চলতি বছরে ওই জমি মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম ও মাষ্টার রিদুওয়ানুল হক লাগিয়ত নেন। তারা লবন উৎপাদনের জন্য জমিতে চাষা দেন। এদিকে এস.আলম গ্রুপের জমি দখলে নিতে মগনামা ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক রশিদ আহমদের নেতৃত্বে ৪০-৫০জনের একটি গ্রুপ গত চার দিন ধরে দখল প্রতিষ্টায় মেতেছেন। এর সুত্র ধরে আজ বুধবার সকালে রশিদ আহমদের লোকজন জমিতে অনুপ্রবেশ করে। এ সময় চাষিরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এর এক ঘন্টা পর চেয়ারম্যান ওয়াসিমের পক্ষে ইউপি সদস্য জাইদুল হক, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক হারুনুর রশিদ মানিক ও আশফাকুল হক লিটনসহ ৪০-৫০জনের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে জমিতে অবস্থান নেয়। এ সময় রশিদ আহমদের লোকজন ওই স্থানে গিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়ার চেষ্টা করলে দ্বিতীয় দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেয়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কাজিবাজারে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে যান। এ সময় তারা আহত হয়েছে। পরে পুলিশ দ্বিতীয় দফা ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনে। কালারপাড়া এলাকার আনোয়ার, ফরিদুল আলম, মানিক, মরিচ্যাদিয়ার নুরুল আবছার, কাইসারসহ স্থানীয় লবন চাষিরা জানায় আমরা এস.আলমের জমিগুলি চেয়ারম্যান ওয়াসিমের কাছ থেকে আগিয়ত নিই। মাঠ প্রস্তুতির কাজ করছি। হঠাৎ রশিদ আহমদ লোকজন নিয়ে আমাদেরকে জমি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। আমরা যেটুকু জানি এস.আলম রশিদ মেম্বারকে জমি লাগিয়ত করেননি। তিনি আ’লীগের জোর দেখিয়ে জমি দখলে নিতে চায়। আমরা টাকা দিয়েছি চেয়ারম্যানকে। রশিদ মেম্বারকে দ্বিতীয়বার টাকা দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা। এ ব্যাপারে মগনামা ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক রশিদ আহমদ জানায় আমি জমি লাগিয়ত নিয়েছি। তারা এসে ভাংচুরসহ কাজিবাজারে তান্ডব চালায়। আ’লীগের অফিস ভাংচুর করে। আফজলিয়াপাড়ার সন্ত্রাসীরাসহ মেম্বার জাইদুল হক, লিটন, শামসুল করিম, আমান উল্লাহ, মোশারফ, রাশেদ, শাহাব উদ্দিন, হারুনুর রশিদ মানিক, শাকের উল্লাহসহ সন্ত্রাসীরা এসে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর গুলি বর্ষন করে। বিষয়টি আমরা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ প্রশাসনকে অবহিত করেছি। আমি ১৮বছর ধরে আ’লীগের সাধারন সম্পাদক। মেম্বার জাইদুল হক আ’লীগকে গালি দিয়েছে। ইউপি সদস্য জাইদুল হক জানায় আমরাও আ’লীগ করি। রশিদ আহমদ ওই জমি লাগিয়ত নেইনি। নিজেই মাস্তানী করে জমি দখলে নিতে আ’লীগকে এখানে জড়িত করার চেষ্টা করছে। আ’লীগ কারো জমি দখল করেনা। রশিদ আহমদ নিজেই অফিস ভাংচুর করে। এখন আমাদের নামে মিথ্যাচার চালাচ্ছে। শতশত লোকজন দেখেছে অফিস কারা ভেঙ্গেছে। মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম জানায় বিষয়টি আমি জেনেছি। সকালে এনজিও সংস্থা মুক্তির উন্নয়ন কর্মসুচি উদ্বোধন করতে আমি শরতঘোনা এলাকায় ছিলাম। আমি বৈধ ব্যবসার প্রেক্ষিতে জমিগুলি এস.আলম গ্রুপ থেকে লাগিয়ত নিয়েছি। রশিদ আহমদ এস.আলমের কাছ থেকে এক ইঞ্চি জমিও লাগিয়ত নেইনি। এরপরেও তিনি কিভাবে জমিতে লোকজন নিয়ে যায় এটি ষ্পষ্ট হয়ে গেছে তার উদ্দেশ্য কি। আমার কোন চাষি গুলি বর্ষন করেনি। আমি চেয়ারম্যান লাভ ক্ষতি সব আমার। সাধারন মানুষের জানমালের ক্ষতি হবে সেটি আমার দ্বারা কখনো সম্ভব নয়। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। জমি নিলে মালিকের কাছ থেকে নিতে হবে। তিনি চাচ্ছেন জোর করে জমি দখল নিতে। পেকুয়া থানার অফিসার ইনর্চাজ জিয়া মো.মোস্তাফিজ ভুঁইয়া জানিয়েছেন মালিকের বৈধ চাষা কে সেটি দেখতে হবে। পুলিশের কাজ আইন শৃংখলা রক্ষা করা। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে। এখনো কোন পক্ষ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

পাঠকের মতামত: