ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় পাসপোর্ট তদন্তের নামে হয়রানী: ডিএসবির কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ

passনিজস্ব প্রতিবেদক :::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় বিদেশগামীদের পাসপোর্ট তদন্তের নামে ডিএসবি পুলিশের এএসআই মো. জিয়ার বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের ব্যাপক হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। আর পাসপোর্ট তদন্ত প্রতিবেদন কক্সাবজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেরণের নামেও ভূক্তভোগী পাসপোর্ট আবেদনকারীদের কাছ থেকেও নেওয়া হচ্ছে গড়ে ৪হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। গত এক বছর ধরে পেকুয়া উপজেলার অসংখ্য পাসপোর্ট আবেনদাকারীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পেকুয়ায় দায়িত্বরত ডিএসবির এএসআই মো. জিয়া। এচাড়াও ডিএসবির এ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের সাথে চরম দূব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে।

 টইটং ইউনিয়নের নিত্যান্দ ঘোনা গ্রামের মো. আনিস অভিযোগ করেছেন, গত এক মাস পূর্বে তার ভাইয়ের একটি পাসপোর্টের আবেদন ভেরিফিকেশনের জন্য ডিএসবির এএসআই জিয়ার কাছে আসে। পরে তার কাছে গেলে আমার সাথে তিনি চরম দূব্যবহার করেছেন। বারাবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী গ্রামের এক দিনমজুর লোকের কাছ থেকে গত দেড় মাস পূর্বে পাসপোর্টের ভেরিফিকেনের রিপোর্ট প্রেরণের নামে জিয়া ৪ হাজার টাকা আদায় করেছেন।

জানা গেছে, পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) কক্সবাজার অফিস গত ৭/৮ মাস পূর্বে এএসআই জিয়াকে পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন রিপোর্ট প্রেরণসহ তদন্তের জন্য পেকুয়া উপজেলায় নিয়োগ করেন।

 অভিযোগ রয়েছে, ডিএসবি পুলিশের এএসআই মো. জিয়া পেকুয়ায় যোগদান করেই পাসপোর্ট তদন্তের নামে শুরু করেন বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্য। গত ৭/৮ মাসে তিনি অন্তত ৪ শতাধিকেরও বেশি পাসপোর্টর আবেদন তদন্ত করে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট জেলা ডিএসবি অফিসে প্রেরণ করেছেন। আর তিনি প্রতিটি পাসপোর্ট তদন্ত করে জেলা ডিএসবি অফিসে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট প্রেরনের নামে গড়ে কমপেক্ষ ৪হাজার টাকার করে সর্বমোট ১৬ লক্ষাধিক টাকারও বেশি অর্থ অবৈধভাবে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট আবেদনকারীদের কাছ থেকে আদায় করেছেন। যাহা সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট আবেদনকারীদের সাথে ডিএসবি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ, দুদুক ও সরকারী অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সরেজমিনে এসে তদন্ত করলে সত্যতা পাওয়া যাবে বলে ভূক্তভোগীরা দাবী করেছেন। ডিএসবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা পেকুয়ায় যোগদান করেই প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকারও দামী একটি নতুন মোটরসাইকেলও ক্রয় করেছেন।

 স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পেকুয়ায় কর্মরত ডিএসবির এএসআই জিয়া পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে পেকুয়ায় বেশ দাপটের সাথে সরকারী চাকুরী করছেন। এ পুলিশ কর্মকর্তা কারো ধার ধারেনা। যে কোন সময় যে কোন লোক নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মন্তব্য করতেও দ্বিধাবোধ করেননা ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

 পেকুয়া উপজেলার পূর্ব মেহেরানা গ্রামের মো. এরশাদ (পাসপোর্ট আবেদন বই নম্বর ১৭২৪৯৯) এর কাছ থেকে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট প্রেরণের নামে গত কয়েক মাস পূর্বে ৭ হাজার টাকা আদায় করেছেন। বারবাকিয়া ইউনিয়নের নতুন পাড়া গ্রামের মো. হোসেন (পাসপোর্ট আবেদন বই নং ১৭৬২৯৮) এর কাছ থেকে ৪হাজার টাকা, মাইজ পাড়া গ্রামের মো. সুমন (পাসপোর্ট আবেদন বই নং (১৭৩৬০২) এর কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা, বটতলী গ্রামের মো. ইসহাক (পাসপোর্ট আবেদন বই নং (১৭২৭৬৮) এর কাছ থেকে ৪হাজার টাকা, মাইজ পাড়া গ্রামের মো. খালেদ হোসেনের কাছ (পাসপোর্ট আবেদন বই নং ১৭৩৮৭৮) এর কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা, নয়াকাটা গ্রামের ফরহাদুল ইসলামের কাছ থেকে (পাসপোর্ট আবেদন বই নং ১৭৯৭৮৩) এর কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা আদায় করেছেন বলে নির্ভর যোগ্য সুত্রে জানা গেছে।

 এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলা কেন্দ্রিক ৪/৫ জন পাসপোর্ট অফিসের দালালের সাথে ওই এএসআই জিয়ার সাথে রয়েছে বিশেষ দহরম মহরম সর্ম্পক। এসব দালালদের মাধ্যমেই সিন্ডিকেট গঠন করে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের নামে বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। পেকুয়ায় যোগদান করার পর থেকে ব্যাপক ঘুষ বানিজ্যে জড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় একাধিক ভূক্তভোগী কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপারসহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

 গোপন সূত্রে জানা গেছে, এএসআই জিয়া জেলা ডিএসবি অফিসের গুটিকয়েক দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে তার এসব ঘুষ বানিজ্য ধামাচাপা দিয়ে রাখেন বলে স্থানীয় সচেতন মহল অভিযোগ করেছেন।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানাতে পেকুয়ায় পাসপোর্ট তদন্তে দায়িত্ব থাকা ডিএসবি পুলিশের এএসআই মো. জিয়ার সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে বক্তব্য পাওয়া গেলে তার গুরুত্ব সহকারে ছাপানো হবে।

 গতকাল ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ৪ মিনিটে এ ব্যাপারে কক্সবাজার ডিএসবি পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভূক্তভোগীদের তার দফতরে অভিযোগ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।

পাঠকের মতামত: