ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

জেলায় এমপি হওয়ার দৌড়ে যারা

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারী। অর্থাৎ আর মাত্র ৪ দিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। কক্সবাজার জেলায় সংসদীয় আসন ৪টি। এ ৪টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৬ জন প্রার্থী। তারমধ্যে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে ৭ জন, কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনে ৬ জন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনে ৬ জন, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে ৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ৪টি আসনে ২৬ প্রার্থী নির্বাচন করলেও প্রতিটি আসনে লড়াইটা জমে উঠেছে কেবল দু’জন করে প্রার্থীর মধ্যে।

কক্সবাজার-২, কক্সবাজার-৩ ও কক্সবাজার-৪ এ তিনটি আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে শক্ত অবস্থানে থাকলেও কক্সবাজার-১ আসনে নৌকার কোন প্রার্থী নেই। কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে বর্তমান সাংসদ জাফর আলমকে হটিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও আইনী জটিলতায় তিনি আর নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকতে পারেননি। তাই কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আওয়ামীলীগের তথা নৌকা প্রতীকের কোন প্রার্থী নেই। কক্সবাজার জেলার ৪টি আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও জনমত জরিপে যাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে প্রতিবেদনটিতে সেটি তুলে আনা হয়েছে।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) :
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনটিতে নির্বাচন করছেন ৭ জন প্রার্থী। কক্সবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনের মধ্যে তফসিল ঘোষণার পর থেকে আলোচনায় ছিল কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনটিকে ঘিরে। বিশেষ করে কার হাতে উঠবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন এ বিষয়টি নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বর্তমান সাংসদ জাফর আলমকে হটিয়ে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে যান কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি। মনোনয়ন পাওয়ার পর এলাকায় এসেও বিশাল সংবর্ধনা পান তিনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাদরে গ্রহণ করে তাঁকে। পরে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।

জানা যায়, জনতা ব্যাংক লালদীঘি শাখা থেকে ‘ফিস প্রিজারভারস’ নামক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপিসহ অন্য পরিচালকগণ প্রায় অর্ধ শত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। যা পরবর্তীতে খেলাপি হয়। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন হলেও ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ি সালাহ উদ্দিন আহমদ এখনো সেই ঋণের একজন জামিনদার। গত ৩০ নভেম্বর ২০২৩ইং তারিখে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনও বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) রিপোর্ট অনুযায়ি সালাহ উদ্দিন আহমদ একজন ঋণখেলাপি ছিলেন।

এদিকে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর থেকে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন মনোনয়ন ফিরে পেতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ঋণ খেলাপির দায়ে তাঁর মনোনয়ন বাতিলই থেকে যায়। তাই শেষ পর্যন্ত আসনটিতে আর আওয়ামী লীগের তথা নৌকার কোন প্রার্থী নেই। মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপির কপাল পুড়লেও কপাল খুলে গেছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমের। কেননা সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপির মনোনয়ন বাতিল হওয়ার আগে তেমন জোরেশোরে নাম শুনা যায়নি সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমের। সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর চকরিয়া-পেকুয়ায় হেভিওয়েট প্রার্থীতে পরিণত হয়েছেন সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়ার পরদিন থেকে তার নির্বাচনী মাঠে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, চকরিয়া পৌর মেয়র মোঃ আলমগীর চৌধুরী, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনসহ চকরিয়া-পেকুয়ার হাজার হাজার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতারা কোমর বেঁধে নেমেছেন সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে বিজয়ী করতে। কদিন আগেও চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষের কাছে সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম তেমন পরিচিত ছিলেন না। আজ তিনি বর্তমান সাংসদকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ার দিনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন বর্তমান সাংসদ জাফর আলম। এরপর থেকে নির্বাচনী এলাকায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা পাশে না থাকলেও আঞ্চলিকতাকে পূজি করে চকরিয়া-পেকুয়ার সাধারণ ভোটারদের পাশে পাচ্ছেন সাংসদ জাফর আলম এমনটিই দাবী তাঁর কর্মী-সমর্থকদের।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চকরিয়া-পেকুয়ার আসনটিতে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এ দু’প্রার্থীর মধ্যে। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম (হাতঘড়ি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সাংসদ জাফর আলমের (ট্রাক) মধ্যে।

এ আসনটিতে আরও নির্বাচন করছেন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ি), জাতীয় পার্টির প্রার্থী হোসনে আরা (লাঙ্গল), ইসলামিক ফ্রন্টের প্রার্থী মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী তুহিন (ঈগল), স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুদ্দিন আরমান (কলার ছড়ি)।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) :
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনটিতে নির্বাচন করছেন ৬ জন প্রার্থী। এ আসনে সবসময় হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু মহেশখালীর মাতারবাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার পর সবকিছুর অবসান ঘটে। প্রধানমন্ত্রী আশেক উল্লাহ রফিককে জনতার হাতে তুলে দেন। এরপরই বুঝা গিয়েছিল উক্ত আসনটিতে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হচ্ছেন আশেক উল্লাহ রফিক। শেষ পর্যন্ত সেটিই সঠিক হল। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এলাকায় ফেরার পর জনতা ফুলে ফুলে বরণ করে নেন ক্লিন ইমেজের এ প্রার্থীকে। প্রথমদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেও শেষ পর্যন্ত কেউই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়নি। তবে একসময় আওয়ামী লীগ করা শরীফ বাদশাহ উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে বিএনএম’ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করে প্রার্থী হয়েছেন। আর তাতেই জমে উঠেছে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার নির্বাচন।

স্থানীয়দের মতে, আশেক উল্লাহ রফিক মহেশখালী-কুতুবদিয়ার উন্নয়নযজ্ঞের অগ্রনায়ক। সে হিসেবে নির্বাচন জয়ী হতে তাঁর জন্য তেমন কঠিন হবে না। টানা ১০ বছর এমপি ছিলেন। প্রতিটি ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে দলের বিপুল কর্মী-সমর্থক রয়েছে। তবে শরীফ বাদশার সমর্থক গোষ্ঠীরা মনে করছেন, মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় শরীফ বাদশার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভোটের মাঠে সবসময়ই তিনি একজন শক্ত খেলোয়াড়। ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত শরীফ বাদশাই জিতবেন বলে মনে করেন তাঁর সমর্থক গোষ্ঠী। তাই এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিকের (নৌকা) শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনএম’র প্রার্থী শরীফ বাদশাহ (নোঙর)।

এ আসনটিতে আরও নির্বাচন করছেন ইসলামী ঐক্য জোটের প্রার্থী মোহাম্মদ ইউনুস (মিনার), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (চেয়ার), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপির প্রার্থী মোহাম্মদ খায়রুল আমীন (একতারা), বাংলাদেশ ন্যাশালিস্ট পার্টি-এনপিপির প্রার্থী মাহবুবুল আলম (আম)।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) :
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনটিতে নির্বাচন করছেন ৬ জন প্রার্থী। এ আসনটি কক্সবাজারের মূল কেন্দ্র। তাই আসনটিতে হেভিওয়েট প্রার্থীও বেশি ছিল। জেলার আওয়ামী রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বেশিরভাগেরই বসবাস এ আসনে। তাই এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হচ্ছেন এ নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রতিদিন ফেসবুক ও স্যোশাল মিডিয়ায় একেক জনের নাম শোনা যাচ্ছিল। প্রতিটি প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের প্রার্থীই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন এরকম পোষ্ট করেছেন। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত টানা ৪র্থ বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল। মনোনয়ন নিয়ে কক্সবাজার পৌঁছতেই নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন টানা দুই বারের এই সাংসদকে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ফিরে আসার পর কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাকে সাধুবাদ জানানো হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

প্রথমদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নাম শুনা যায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের। মুজিবুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী এ খবরে নেতাকর্মীরা দু’ভাগে বিভক্ত হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন না বলে জানান। এমনকি তিনি কোনদিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন না বলেও ঘোষণা দেন।
অপরদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েও দল তথা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের পক্ষে নির্বাচন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন কক্সবাজার সদর-রামু-ঈদগাঁও’র আরেক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম। প্রতিদিন কক্সবাজার পৌর এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের পক্ষে গণসংযোগ ও পথসভা করছেন তিনি।

গত ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ আসনটিতে বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত উল্লেখযোগ্য তেমন কোন প্রার্থী ছিল না। কারণ আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাওয়া কেউই প্রার্থী ছিলেন না। কিন্তু ১৩ ডিসেম্বর গণমাধ্যমে খবর আসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। এরপর ১৫ ডিসেম্বর জানা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদের মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই শেষে মনোনয়নপত্রে সমর্থনকারীদের স্বাক্ষরে অসঙ্গতি থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে গত ২১ ডিসেম্বর প্রার্থীতা ফিরে পান ব্যরিস্টার মিজান সাঈদ।

এরপরই এ আসনটির নির্বাচন জমে উঠেছে। প্রতিদিন সমানে পথসভা, গণসংযোগ করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। একে অপরের বিরুদ্ধে পোষ্টার ছিড়া, গাড়ি ভাংচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগ করছেন। গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ এনে একটি মামলাও করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ।
এ আসনে টানা ১০ বছর এমপি থাকায় বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন করেছেন সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল এমনটাই জানাচ্ছেন তাঁর পক্ষের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। তাই তাঁর বিকল্প কেউ হতে পারে না বলে জানান তারা। তাঁর একাধিক নেতাকর্মী জানান, প্রতিটি পাড়া, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে এমপি কমলের কর্মী ও সমর্থক রয়েছে। সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলও প্রতিটি পথসভায় তিনি জনগণের নিরাপদ প্রার্থী বলে দাবী করছেন।

অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদও ২১ ডিসেম্বর প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ার পর থেকে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। যেখানে যাচ্ছেন সেখানে সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান তার সমর্থকরা। প্রথমদিকে এ আসনটিতে একেবারেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না এরকম মনে হলেও ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ার পর আসনটিতে নির্বাচন জমে উঠেছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাই এ আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এ দু’প্রার্থীর মধ্যে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদের (ঈগল)। এ আসনটিতে আরও নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী আব্দুল আওয়াল মামুন (হাতঘড়ি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রার্থী শামীম আহসান ভুলু (কুঁড়েঘর), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের প্রার্থী মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন)।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) :
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনটিতে নির্বাচন করছেন ৭ জন প্রার্থী। অন্যান্য আসনগুলোর মতো এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তেমন জলঘোলা হয়নি। বেশির ভাগ নেতাকর্মীরা ধারণা করেছিলেন সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির ঘরেই কেউ না কেউ মনোনয়ন পাবেন। তিনি, তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তার নইতবা তার শ্যালক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।

শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন ঘোষণার দিন দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির স্ত্রী বর্তমান সাংসদ শাহীন আক্তারের নাম ঘোষণা করেন। এ নিয়ে টানা ২ বার মনোনয়ন পেলেন তিনি। সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি ও তার স্ত্রী শাহীন আক্তার দুজনে দু’বার করে টানা ৪ বার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন। এ আসনটিতে প্রথম দিকে তেমন হেভিওয়েট কোন প্রার্থী ছিল না। মনে হচ্ছিল খালি মাঠে গোল দিয়ে পুণরায় সাংসদ নির্বাচিত হবেন শাহীন আক্তার। কেননা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন দাখিল করা সোহেল আহমদ বাহাদুরের মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হয়ে যায় ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর চৌধুরী ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টের আদেশে নির্ধারিত সময়ের ১১ দিন পর মনোনয়ন জমা দিয়ে ১৫ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাইয়ে ঝরে পড়েছিল। কিন্তু ২১ ডিসেম্বর নিজের প্রার্থীতা ফিরে পান নুরুল বশর চৌধুরী। এরপর থেকে উখিয়া-টেকনাফ আসনটির নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিশেষ করে টেকনাফ উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও ভোটাররা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। কেননা দু’জনই টেকনাফ উপজেলা থেকে প্রার্থী হয়েছেন।

টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে উখিয়া-টেকনাফের অলিতে গলিতে অনেক উন্নয়ন করেছেন সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি ও তার স্ত্রী বর্তমান সাংসদ শাহীন আক্তার। এরই প্রেক্ষিতে তাদের সমর্থকরা মনে করছেন এবারও ক্ষমতার চেয়ারে বসবেন বর্তমান সাংসদ শাহীন আক্তার। অপরদিকে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর চৌধুরীর সমর্থকরা বলছেন উখিয়া-টেকনাফের মানুষ পরিবর্তন চায়। তাই এবার তারা নুরুল বশর চৌধুরীকে সাংসদ হিসেবে দেখতে চান।
তাই এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন আক্তারের (নৌকা) শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর চৌধুরী (ঈগল)।

এ আসনটিতে আরও নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল আমিন ভুট্টো (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মুজিবুল হক মুজিব (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্য জোটের প্রার্থী মোহাম্মদ ওসমান গণি চৌধুরী (মিনার), বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব)।

পাঠকের মতামত: