ঢাকা,সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 ফসলি জমি ক্ষতি, পরিবেশ বিপর্যয়ে কক্সবাজারবাসী

মাতামুহুরীর ৩০ পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর অন্তত ৩০টি পয়েন্টে শক্তিশালী ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এসব বালু বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমির ওপরও স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। ড্রেজার, শ্যালো মেশিনের সাথে বড় বড় পাইপ সংযুক্ত করে অনেকদূর পর্যন্তও এই বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এতে বহুমুখী সমস্যা দেখা দিয়েছে। তন্মধ্যে ফসলি জমি নষ্ট করে ফেলায় সবজিসহ রকমারি ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, কৃষকের মাথায় হাত উঠা, মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করা, নদীর তলদেশে চোরাবালি সৃষ্টি হওয়া, বর্ষায় ভয়াবহ ভূমিধসের আশঙ্কা ছাড়াও বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়েছে নদীর ওপর নির্মিত পালাকাটা ও বাঘগুজারা নামের দুটি রাবার ড্যাম (রাবার ব্যারেজ)। পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে চললেও তা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ধরণের তৎপরতা নেই। এতে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটগুলো দিন-রাত সমানে এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

সরজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং সচেতন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর বিএমচর ইউনিয়নের পুচ্ছলিয়া পাড়া পয়েন্ট, কোনাখালী, পৌরসভার আমান পাড়ার থেকে মাতামুহুরী ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক সিন্ডিকেট, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পালাকাটা ও সওদাগরঘোনা, বরইতলী ইউনিয়নের বাঘগুজারা পয়েন্টেসহ অন্তত ৩০টি পয়েন্টে রমরমাভাবে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনযজ্ঞ। এসব পয়েন্টে শক্তিশালী ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে বড় বড় পাইপ দ্বারা বালু উত্তোলনের কারণে মাতামুহুরী নদীর দুই তীরে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক জায়গা থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের কারণে নদীতে সৃষ্টি হচ্ছে অসংখ্য চোরাবালি। এতে গোসল, মাছ ধরাসহ প্রাত্যহিক কাজ-কর্ম সারতে গিয়ে প্রতিনিয়ত চোরাবালিতে তলিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।

সরজমিন আরো দেখা গেছে, পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের আমান পাড়ায় মাতামুহুরী নদীতে অসংখ্য ড্রেজার এবং শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। এতে একদিকে পরিবেশের বিপর্যয়, অন্যদিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতি হচ্ছে নদী তীরের ফসলি জমি। আবার ফসল ফলানো জমির ওপর একের পর এক বালুর স্তুপ করে রাখায় গত কয়েকবছর ধরে চাষাবাদও হচ্ছে না বিপুল পরিমাণ জমিতে। এই অবস্থায় নিজেদের জমিতে ফসল ফলাতে না পেরে প্রান্তিক কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চকরিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের পরিবেশ সচেতন বেশ কয়েকজন দৈনিক চকরিয়া নিউজকে জানান, দেশ স্বাধীনের পর দীর্ঘ ৪৫ বছর পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর দুই পয়েন্টে মাটির বাঁধ (ক্রসবাঁধ) দিয়ে প্রতিবছর ইরি-বোরো চাষের সুবিধার্থে মিঠা পানি ধরে রাখতো। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে প্রতিবছর সরকারকে গচ্চা দিতে হতো কোটি কোটি টাকার। সেই পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে নদীর পালাকাটা ও বাঘগুজারা পয়েন্টে দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করে। তন্মধ্যে বাঘগুজারা রাবার ড্যামটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাবার ড্যাম।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা (এসও) শাহ আরমান সালমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, রাবার ড্যামের আশপাশের যেসব পয়েন্টে বালু উত্তোলন করা হয়েছিল তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে অতিদ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ইতোপূর্বে অসংখ্যবার বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

একই কথা জানিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ-জামান। তিনি বলেন, যখনই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তাৎক্ষণিক অভিযান চালানোসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জামাদিও জব্দ করা হয়েছে। আগামীতেও অভিযান অব্যাহতভাবে চলবে।

পাঠকের মতামত: