ঢাকা,সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সেন্টমার্টিন নামিয়ে বলত, ‘মালয়েশিয়া এসেছে’ চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক :: চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে মানবপাচার সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ ৫ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৭। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভুয়া নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়ার মোজাফফর আহমদের ছেলে মো. ইসমাইল (৩২) ও শফিউল আলম (৩৭), কক্সবাজারের পেকুয়া থানার রাজাখালীর সেকান্দার আলীর ছেলে রিয়াজ খান রাজু (৪১), বাঁশখালীর ছনুয়ার মৃত চান মিয়ার ছেলে মো. হোসেন (৬০) ও একই উপজেলার পশ্চিম সেলবনের মৃত সৈয়দ আহম্মদের ছেলে মো. ইউনুছ মাঝি (৫৬)।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া মানব পাচার চক্রের মূলহোতা ইসমাইল ও শফিউল আলম সম্পর্কে তারা আপন ভাই। বাঁশখালী ও পেকুয়ার বিভিন্ন নিরীহ মানুষকে স্বল্প খরচে বিদেশ পাঠানোর কন্ট্রাক নিত তারা। এরপর তাদের কাছ থেকে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে কিছু টাকার বিনিময়ে তাদের সহযোগী রাজুকে পাসপোর্ট বানাতে দেয়। রাজু পাসপোর্ট তৈরি করে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে। নিরীহ এসব মানুষ রাজুকে বিশ্বাস করে মালয়েশিয়া যাওয়ার অর্ধেক টাকা জমা করতো। এরপর রাজু তাদের গভীর রাতে ট্রলারে তুলে দিত। ট্রলারে তুলে দেয়ার আগে তাদের সবার পাসপোর্ট রেখে দিতো রাজু। তাদের বলতো বিদেশ পৌঁছানোর পর বাকি টাকা পরিশোধ করলে তাদের পাসপোর্ট দেবে। অপর সহযোগী ইউনুচ তাদের এই কাজে সহযোগিতা করতো। গ্রেপ্তারকৃত ইসমাইল ও শফিউলের নামে মানবপাচার আইনে ৭টি মামলা রয়েছে।

র‌্যাব আরও জানায়, জয়নাল আবেদীন নামে এক ভুক্তভোগী রাজুকে বিশ্বাস করে পাসপোর্ট তৈরি করতে যায়। রাজু জয়নালকে কম টাকার মধ্যে মালয়েশিয়া পাঠাতে পারবে বলে জানায়। এর ভিত্তিতে জয়নাল রাজুকে পাসপোর্ট তৈরির জন্য প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার টাকা দেয়। কিছু দিনের মধ্যে রাজু ভিকটিমকে পাসপোর্ট তৈরি করে দেয়। তখন ভিকটিম রাজুকে বিশ্বাস করে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য পুনরায় আরও ১ লাখ টাকা দেয়। টাকা দেওয়ার ১৫ দিন পর রাজু জয়নালকে গভীর রাতে পেকুয়ার একটি ঘাট থেকে ট্রলারে উঠিয়ে দেয়। ট্রলারে মানবপাচার চক্রের কয়েকজন সদস্যসহ ১৫-২০ জন বিদেশগামী লোক ছিল। পরে তাদের নিয়ে ২/৩ দিন গভীর সাগরে ঘুরে ফিরে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নামিয়ে দিয়ে বলে মালয়েশিয়া এসেছে। সকাল হলে ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারে রাজু প্রতারণা করে তাদেরকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নামিয়ে দিয়েছে। পরে তারা বাড়ি ফিরে এসে রাজুর কাছ থেকে টাকা ফেরত চাইলে তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। রাজু পেকুয়ার রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার ভয়ে এলাকার কোন লোক কথা বলার সাহস পায় না। তার সাথে লাগতে গেলে বাড়িঘর দখল করে বাড়ি ছাড়া করে দেয় এবং তার ভয়ে কেউ থানায় অভিযোগও করার সাহস পায় না।

অন্যদিকে মোক্তার আলী নামে আরেক ভুক্তভোগী গ্রেপ্তার আসামি হোসেনের মাধ্যমে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে যান। সেখানে গিয়ে এই চক্রের মাধ্যমে অপহরণের শিকার হন। পরে গ্রেপ্তার হোসেনের ছেলে এমরান অপহৃতের ভাই জয়নালকে জানায়, হোসেন আলীকে নগদ ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিলে মোক্তারকে মুক্তি দেয়া হবে। জয়নাল তার ভাইকে ফিরে পেতে হোসেনের বাড়িতে গিয়ে টাকা দিয়ে আসে। এরপরও মোক্তারের কোন খোঁজ না পেয়ে জয়নাল বাদী হয়ে হোসেনসহ তার দুই ছেলে ও আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার বলেন, ‘এরকম পাঁচ ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল রবিবার বিকাল ৩টায় বাঁশখালী ও পেকুয়ায় অভিযান চালিয়ে ৫ মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’

পাঠকের মতামত: