ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

সালাহউদ্দিন আহমদের রায় আবারো পেছালো, ৯ নভেম্বর ধার্য্য

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :   ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে অবস্থানরত বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের মামলার রায় ৬ষ্ট বারের মতো পিছিয়ে আগামী ৯ নভেম্বর শুক্রবার পূণঃ ধার্য্য করা হয়েছে। ১৪ অক্টেবর সোমবার রায় প্রদানের জন্য ৫ম ধার্য্য দিন নির্ধারিত ছিল। ভারতের ১৯৪৬ সালের বৈদেশিক নাগরিক অনুপ্রবেশ আইনের ১৪ ধারায় সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে নর্থইষ্ট খাসিয়া হিল এলাকায় আদালতে এই মামলা দায়ের করা হয়। আদালতের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ ডিজি খার সিং পূণঃনির্ধারিত ধার্য্য দিনে এ রায় প্রদান করবেন। রায় প্রদান ৬ষ্ট বারের মতো পিছিয়ে যাওয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য পেছানো হচ্ছে বলে বাংলাদেশের জনমনে সন্দেহ জাগছে। একজন মেধাবী, চৌকস ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদকে বছরের পর বছর নির্বাসনে রেখে জনসেবা থেকে তাঁকে বন্ঞ্চিত রাখাকে সালাহউদ্দিন আহমদের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা পেকুয়া-চকরিয়ার জনগন সহজে মেনে নিতে পারছেননা। সোমবার শিলং আদালত থেকে জানানো হয়, রায়টি পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় রায় প্রদান করা যাচ্ছেনা। তাই অত্র মমালার রায়ের দিন আগামী ৯ নভেম্বর শুক্রবার পূণঃনির্ধারন করা হল। এই আইনে অপরাধ প্রমানিত হলে সর্বোচ্চ ৫বছরের সাজা ভোগ করার বিধান রয়েছে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তাল সময়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র মুখপাত্র হিসাবে সফলভাবে দায়িত্বপালনকালে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকাস্থ উত্তরার একটি বাড়ী থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে অচেনা মুখোশধারী অপহরনকারীরা সালাহউদ্দিন আহমদকে চোখ বেঁধে গুপ্ত স্থানে তুলে নিয়ে যায়। তখন থেকে দীর্ঘ ৬২ দিন নিখোঁজ থাকার পর একই বছরের ১১ মে সালাহউদ্দিন আহমদকে মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সিলং শহরে গলফ লিংক মাঠে পাওয়া যায়। সেখান থেকে তাঁকে প্রথমে শিলং মানসিক হাসপাতালে, পরে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেঘালয় রাজ্যের পুলিশ ২০১৫ সালের ৩ জুন ভারতে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগ এনে সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রথমে হাসপাতালে চিকিৎসা ও পরে শিলং জেলে পাঠানো হয়। পরে শিলং আদালত থেকে শিলং শহর ছেড়ে না যাওয়ার শর্তে বিজ্ঞ আদালত সালাহউদ্দিন আহমদকে জামিন প্রদান করেন। তখন থেকে নির্বাসিত অবস্থায় দীর্ঘ ৩ বছর ৫ মাস ধরে খাসিয়া খ্রীষ্টান অধ্যূষিত এলাকা শিলং শহরে সানরাইজ গেষ্ট হাউজ নামক একটি দোতলা ভাড়া বাড়ীতে তিনি বসবাস করে মামলা পরিচালনা করে আসছেন। মামলা দায়েরের পর মেঘালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সালাহউদ্দিন আহমদকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করে ২০১৫ সালের ২২ জুলাই মামলার চার্জশীট দেয়া হয়। চার্জশীটে “সালাহউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলার গ্রেপ্তারী পরোয়ানা এড়াতে উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিতভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়”। সালাহউদ্দিন আহামদের কৌশুলী ভারতের বিখ্যাত আইনজীবী এস পি মোহন্ত জানান, ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই মামলার বাদী- আসামীর জবানবন্দি, সাক্ষীর সাক্ষ্য, জেরা, শুনানী, যুক্তিতর্ক সহ সব ধরনের কার্যক্রম শেষ করে ২০১৮ সালের ১৩ আগষ্ট সর্বপ্রথম মামলাটি রায়ের জন্য ধার্যদিন রাখা হয়েছিল। তিনি জানান, মামলায় ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমদ স্বেচ্চায় ভারতে অনুপ্রবেশ করেননি, তাঁকে অপহরনকারীরা জোর করে চোখ বাঁধা অবস্থায় এখানে এনে রেখে দিয়েছে, সেটা আদালতে সালাহউদ্দিন আহমদের আইনজীরীরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করতে সক্ষম হয়েছেন। মিঃ এসপি মোহন্ত জানান, মামলা শুনানীর সময় আদালতে তাঁরা এ সংক্রান্ত জাতি সংঘের কার্যবিবরনী, আমেরিকার মানবাধিকার রিপোর্ট, আ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট, যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের আর্লিডে মোশান, ভারতের উচ্চ আদালতের রেফারেন্স, বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের আদেশ, গুমকালীন সময়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট সহ আন্তজার্তিক বিভিন্ন আইন ও নজীর আদালতে উপস্থাপন করে আদলতকে সন্তুষ্ট করেছেন। এমনকি মেঘালয়ের একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা স্বয়ং তাঁর সাক্ষ্যদানকালে সালাহউদ্দিন আহমদ একজন সাবেক মন্ত্রী, তিনি কখোনই ভিন্ন দেশে অনুপ্রবেশ করার লোক নয় বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত ও আইনী যুক্তি উপস্থাপন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। তাই আইনজীবী মিঃ এসপি মোহন্তের দৃঢ় বিশ্বাস, এ মামলায় সালাহউদ্দিন আহমদ বেকসুর খালাস পাবেন। অপরদিকে, সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন বলে সরকার পক্ষের আইনজীবী পিপি মিঃ রাজীব নাথ দাবী করেছেন। মামলাটির চুড়ান্ত যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর রায় প্রচার এই নিয়ে পর পর ৬ষ্ট বারের মতো পিছানো।হলো। যা এজাতীয় মামলার রায় প্রদানের ক্ষেত্রে এত দীর্ঘ বিলম্ব হওয়া, খুবই বিরল ঘটনা বলে মিঃ এস পি মোহন্ত জানান।

এদিকে, সালাহউদ্দিন আহমদের সাথে থাকা তাঁর সহকারী জানান, মামলাটি নিষ্পত্তি করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে আসার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। সালাহউদ্দিন আহমদ এদেশের মাটি ও মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার সুরক্ষা নিয়ে প্রতি মুহুর্ত উদ্বিঘ্ন থাকেন।নুরুল ইসলাম হেলালী জানান, শিলং এর আদলতে সঠিক, ন্যায়, নিরপেক্ষ ও সুষ্ট বিচারের ব্যাপারে সালাহউদ্দিন আহমদ খুবই ইতিবাচক ধারণা পোষন করছেন। তাই শিলং আদালতে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন এবং মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়ে শীঘ্রই মুক্ত হয়ে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি দেশবাসীর কাছে তাঁর শারিরীক সুস্থতা, মামলা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া ছেয়েছেন।

পাঠকের মতামত: