শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥
বিড়ম্বনার আরেক নাম কক্সবাজারের ‘মহেশখালী-কক্সবাজার’ ফেরিঘাট। দীর্ঘদিন ধরে লাখ লাখ মানুষ এই ঘাটে বিভিন্ন ভাবে বিড়ম্বনার শিকার হয়ে আসছে।
মহেশখালী-কক্সবাজার ফেরিঘাট ও জেটি ইজারা পদ্ধতি বাতিল, ৬ নং ঘাটে ৫ টাকা টোল আদায় বন্ধ এবং বি আই ডব্লিউ টি এ-এর নেতৃত্বে সময়-সূচি মেনে গণপরিবহন চালুর দাবিতে মানববন্ধন ও নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ ডিসেম্বর বুধবার সকাল ১১ টায় উপজেলা সদরে মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং উপজেলা সিটিজেন ফোরামের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা মহেশখালী-কক্সবাজার ফেরিঘাটে পারাপারের নানা দুর্ভোগ তুলে ধরেন।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে মহেশখালী-কক্সবাজার ফেরিঘাট পারাপারে সময়সূচি মেনে চলে যাত্রী পারাপার করে এমন কোনো গণপরিবহন নেই। হাজার হাজার যাত্রী ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল স্পীডবোটে করে যাতায়াত করতে বাধ্য করছে। এতে প্রায় সময় ঘাটের উভয় পাড়ে শত শত যাত্রী আটকা পড়ে। মহেশখালী সদর থেকে জেলা সদরে আসার পথে জেলা প্রশাসন হাজার হাজার যাত্রী সাধারণকে এই স্পীডবোটে চড়তে বাধ্য করছে। তাতে নারী-শিশু-বৃদ্ধ ও রোগী এবং দরিদ্র যাত্রীসাধারণ এক অসাধারণ দুর্ভোগে পড়ে। প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী গণপরিবহনের অভাবে ঘাটে আটকে পড়ে, চলার পথে সময় নষ্ট হয় এবং যথাসময়ে অকুস্থলে যাত্রীরা পৌঁছাতে পারে না।
বক্তারা বলেন, হাজার হাজার যাত্রীসাধারণ মহেশখালী-কক্সবাজার ফেরিঘাটের স্পীডবোড ব্যবসার ফাঁদে পড়ে আছে।
বক্তারা বলেন, কক্সবাজার উপজেলা থেকে মহেশখালী উপজেলা পাড়ি দিতে ব্যয়বহুল বোটভাড়ার অতিরিক্তি ৬ নং ঘাটে যাত্রীপ্রতি ৫ টাকা টোল দিয়ে যেতে হয় যেন তারা বার্মায় বা ভারতে যাচ্ছে! বক্তারা বলেন, কক্সবাজারের ৬নং ঘাট হয়ে মহেশখালীর কোনো লোক কেনাকাটা করে কোনো জিনিষ আনতে পারে না। ১০/২০ কেজি জিনিষের জন্য ৩০/৫০ টাকা ট্যাক্স দাবি করে যেন লোকজন বিদেশ থেকে মাল নিয়ে আসছে। দেখার ও বলার কেউ নেই। ঘাটে লোক দেখানে টোল আদায়ের একটি চার্ট ইজারাদার রেখেছে। তাতে লেখা রয়েছে ১০০ কেজি মালামাল কোনো যাত্রী ফ্রি নিতে পারবে তার পরবর্তী ১০০ কেজির জন্য ৩ টাকা টোল দিতে হবে। অথচ বিআইডব্লিউ –এর এই টোলের তালিকা ইজারাদার পরোয়া করে না। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৬ নং ঘাটে বহু যাত্রী নাজেহাল ও লাঞ্চিত হয়েছে।
বক্তারা বলেন, মহেশখালী উপজেলায় আইন-শৃংখলা বিষয় প্রতিমাসে সভা হয় কিন্তু ফেরিঘাটের বিশৃংলা সভায় স্থান পায় না। সভায় ফেরিঘাট বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন হয় না।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের কোনো উপজেলায় অন্য উপজেলায় যেতে টোল দিতে হয় না। কিন্তু কক্সবাজার উপজেলা থেকে মহেশখালী উপজেলায় যেতে জনপ্রতি ৫ টাকা টোল দিয়ে যেতে হয়। বক্তারা এই টোলপ্রথা বাতিলের দাবি জানান।
মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তৃতা করেন নুরুল আমিন -সভাপতি, মহেশখালী উপজেলা সিটিজেন ফোরাম, ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউদ্দিন আহমদ-সভাপতি, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন সিটিজেন ফোরাম, বশির আহমদ আজাদ-সভাপতি, শাপলাপুর ইউনিয়ন সিটিজেন ফোরাম, মকবুল আহমেদ, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, মহেশখালী কলেজ, ডাঃ মোঃ সলিমুল্লাহ খান , মুক্তিযোদ্ধা; আবুল বশর পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক, প্রেস ক্লাব; এডভোকেট ফারুক ইকবাল, আইনজীবি মহেশখালী আদালত, অধ্যাপক মোস্তফা কামাল সোহাগ, মহেশখালী কলেজ, জাকের হোসেন, সভাপতি, কালারমারছড়া ইউনিয়ন সিটিজেন ফোরাম, ফরিদুল আলম দেওয়ান, হোয়ানক ইউনিয়ন সিটিজেন ফোরাম, সাদেকুল্লা সিদ্দিকী, সভাপতি, মহেশখালী তাঁতী লীগ, আশরাফুল করিম মিয়া, আহবায়ক, মহেশখালী উপজেলা জাসদ প্রমুখ।
মহেশখালী-কক্সবাজার ফেরিঘাট পারাপারে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজিত পারাপারের দুর্দশার অবসান কল্পে ফেরিঘাট পরিচালনায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পরিবর্তে বি আই ডব্লিউ টি এ-এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে সময়সূচি মেনে চলার উন্নত গণপরিবহন সার্ভিস চালু করার দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী বরাবরে হস্তান্তর করা হয়। স্মারকলিপির ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন আন্দোলণকারীরা।
পাঠকের মতামত: