এম.এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার ::
জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালে ডাঃ নুরুল করিম খাঁনের ভুল চিকিৎসায় দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই শিশুর স্বজনরা ঘন্টাব্যাপী হাসপাতালে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। বুধবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগে জানা যায়, গত শুক্রবার উখিয়া মরিচ্যার পাগলির বিলের মাহমুদুল হকের পুত্র শিশু মোঃ রাইয়ানের পায়ে গরম পানি পড়ে ঝলসে যায়। এসময় তাকে উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। দুইদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে সোমবার ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের ৫ম তলার ৫০৬ নাম্বার কেবিনে ভর্তি করা হয়। সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ নুরুল করিম খাঁনের তত্বাবধানে চিকিৎসা দেয়া হয়। তারপরও শিশু রাইয়ানে অবস্থা বেগতিক দেখে তার স্বজনরা ডাঃ আবদুস ছালামকে দেখানো হলে তিনি কিছু ওষুধ পরিবর্তন করে দেয়। পরে বিষয়টি ডাঃ নুরুল করিম খাঁনকে জানানো হলে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। অন্য ডাক্তারকে আনায় তিনি ক্ষীপ্ত হয়ে শিশু রাইয়ানের ফাইল ছুঁড়ে ফেলে দেয় এবং হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে অনেক আকুতি মিনতি করে তাকে শান্ত করে স্বজনরা। সর্বশেষ বুধবার রাইয়ানের শ্বাস প্রশ্বাস বেড়ে গেলে তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়। এদিকে ইনজেকশন দেয়ার পর শিশু রাইয়ান ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে মারা যায়। এতে হতবাক হয়ে পড়ে স্বজনরা। এসময় তাদের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠে হাসপাতালের আকাশ। এদিকে মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে তার চিকিৎসার ফাইল খুঁজতে গেলে নানা তালবাহানা করে উল্টো চিকিৎসার টাকা দাবি করা হয়। এতে অসহায় স্বজনরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে লাশ রেখে বিক্ষোভ শুরু করলে কর্তৃপক্ষ মৃত্যু হওয়া শিশু রাইয়ানকে সদর হাসপাতালে রেফার করে দেয়। এ ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সুধী মহলে। রাত ৮টার দিকে হলদিয়া পালং এর সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল হক আমিন ও সদর থানার এসআই রাজিব পোদ্দার নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে বিক্ষোভরত স্বজনদের শান্তনা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পরে ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (প্রশাসন) সেলিম উল্লাহ সুজনের সাথে সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল হকের নেতৃত্বে বৈঠক করেন স্বজনরা। সেখানে ঘটনার দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়।
শিশু রাইয়ানের মামা মিজানুর রহমান বলেন, তাকে ভর্তি করার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসায় চরম অবহেলা করে। অহেতুক তাকে পাওয়াফুল ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়। যার জন্য তার মৃত্যু ঘটে। তিনি রাইয়ানের মৃত্যুর জন্য দায়ী চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিচার দাবি করে।
হলদিয়া পালং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল হক আমিন বলেন, হলদিয়াপালং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হন। তিনি জানান, শিশুটা মারা যাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ছাড়পত্রে লেখা হলো, সরকারি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ করার জন্য এবং শিশু মারা যাওয়ার পর পরই সবাই লাপাত্তা হয়ে যায়। হাসপাতালের কেউ কথা বলতে চাচ্ছে না। এর থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সত্য।
সদর থানার এসআই রাজিব পোদ্দার বলেন, স্বজনদের অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন খন্দকার বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ শাহ আলম বলেন, শিশু রাইয়ানের চিকিৎসায় কোন অবহেলা ছিলনা। হাসপাতালের সবাই তার চিকিৎসায় খুব আন্তরিক ছিল। মৃত্যু-জন্ম আল্লাহর ইচ্ছায় হয়।
পাঠকের মতামত: