ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় সরকারের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় জামায়াত নেতার অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় গ্যাস সঞ্চালন লাইনের জন্য সরকারের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় এবার অবৈধ উপায়ে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী এক জামায়াত নেতা!  সরকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ওই প্রভাবশালী জামায়াত নেতা রাতারাতি সরকারের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় গত কয়েক দিন ধরে অনেকটা বিনা বিধায় পাকা স্থাপনার নির্মানের কাজ চালাচ্ছেন। সরকারী জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের কাজে ওই জামায়াত নেতাকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করছেন আরেক প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান! আর জামায়াত নেতার স্থাপনা অপসারণে স্থানীয় প্রশাসনও উদ্যোগ নিচ্ছেনা। এ নিয়ে সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

987সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মহেশখালী থেকে পেকুয়া উপজেলার উপর দিয়ে যাওয়া আনোয়ারা পর্যন্ত ৯৩ কিমি দীর্ঘ গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ গত ২০১৫ ইংরেজীর সেপ্টেম্বরে শেষ হয়। সরকার বিদেশ অপরিশোধিত তরল গ্যাস আমদানি করে থেকে মহেশখালী হয়ে আগামী ২০১৮ সাল থেকে এ লাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন। সরকার এ লক্ষ্যে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত পাইপ স্থাপনের কাজও গত বছরে শেষ হয়েছে। সরকারের পেট্রোবাংলার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত ২০১৫ ইংরেজী ২৬ জানুয়ারি থেকে গ্যাস লাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ণ করেন ৫টি কোম্পানি। ইতিমধ্যে মহেশখালী ও পেকুয়ার অংশের প্রায় ৪৫ কিমি পাইপ লাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য পেকুয়া উপজেলায় নির্দিষ্ট পরিমান জমি অধিগ্রহণ করে সরকার যথানিয়মেই ক্ষতিপূরণের অর্থও সংশ্লিষ্ট জমির মালিকের পরিশোধ করেছেন।

৪ ফেব্রেুয়ারী বিকালে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, গ্যাস সঞ্চালন লাইনের পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া বাজারের পূর্ব পার্শ্বে ইসলামী ব্যাংকের পশ্চিমাংশে যে স্থান দিয়ে গ্যাস লাইনের পাইপ বসানো হয়েছে তার উপরেই স্থানীয় প্রভাবশালী জামায়াত ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের বারাইকাটা গ্রামের বাসিন্দা মৌলভী আশরাফ পাকা ভাউন্ডারী দিয়ে সীমানা প্রচীর নির্মান করেছে। উল্লেখ্য, জামায়াত নেতা আশরাফ হচ্ছেন চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে সংগঠিত বহুল আলোচিত এইট মার্ডার মামলার অন্যতম প্রধান আসামী জাপানে অবস্থানরত শিবির নেতা এটিএম মিজবাহ উর রহমান চৌধুরীর পিতা। গ্যাস লাইনের পার্শ্বে বিগত কয়েক বছর পূর্বে এটিএম মিজবাহ উর রহমার জাপান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাঠিয়ে তার পিতা ও শিলখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা নুরুল হোছাইনের মাধ্যমে কিছু জমি কেনেন। এ জমি থেকে কিছু অংশ গ্যাস লাইনের জন্য সরকার অধিগ্রহণও করে। অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অধিগ্রহণ শাখা থেকে উত্তোলনও করে নিয়েছেন জামায়াত নেতা মৌলভী আশরাফ। আর গ্যাস সঞ্চালন লাইনের উপরেই অবৈধভাবে পাকা দোকান নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যেই পাকা ভবন নির্মাণের কাজও শুরু করেছেন ওই জামায়াত নেতা। অথচ, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ওই জামায়াত নেতার জমি ও পাশের জমির উপর দিয়ে গ্যাস লাইন যাওয়ায় সরকার জমিগুলো অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরনের টাকাও সংশ্লিষ্ট জমির মালিকের কাছে পরিশোধ করেছে। এরপরেও জামায়াত নেতা মৌলভী আশরাফ বেশ দাপটের সাথে সরকারী অধিগ্রহণকৃত জায়গার উপর অবৈধ টাকার প্রভাব খাটিয়ে রাতারাতি পাকা স্থাপনা নির্মাণের কাজ চালাচ্ছেন। আর তাকে সহায়তা করছেন শিলখালীর ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপির আরেক প্রভাবশালী নেতা নুরুল হোছাইন।

অভিযোগের ব্যাপারে জামায়াত নেতা মৌলভী আশরাফের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে ৪ ফেব্রেুয়ারী বিকালে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার জায়গার উপর দিয়ে গ্যাস সঞ্চালন লাইন গেছে। সেখানে তাদের কিছু জমিও সরকার অধিগ্রহণ করেছে। তার জায়গাগুলো তদারক করছেন শিলখালী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন। তিনি জরুরুী কাজে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করায় এ বিষয়ে শিলখালীর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইনের সাথে কথা বলার জন্য ও পরামর্শ দেন।

শিলখালী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইনের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভূলে গত গ্যাস লাইনের উপর স্থাপনা নির্মাণের কাজ করা হয়েছে। এখন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: