মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় সড়ক সংস্কারে নিয়োজিত এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সরকারী ভবন ও খেলার মাঠ দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঠিকাদার কর্তৃক সরকারী ভবন ও মাঠ দখল করে নির্মাণ সামগ্রী রেখে সরকারী খেলার মাঠের ক্ষতি সাধন করলেও স্থানীয় উপজেলা নিরব রয়েছে। প্রশাসনের নিরবতায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা যায়, পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নের খেলোয়াড়দের খেলাধুলার জন্য একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ স্থান পেকুয়া ক্রীড়া কমপ্লেক্স। পেকুয়া উপজেলার সদরের সিকদার পাড়ায় ৫একর জায়গায় নির্মিত পেকুয়া উপজেলা শহীদ জিয়া ক্রীড়া কমপ্লেক্সে সারা বছর ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলার সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। ইনডোরে রয়েছে বাস্কেটবল ও ব্যাটমিন্টন কোর্ট। খেলোয়াড়দের শরীর চর্চার জন্য রয়েছে নানাবিধ সরঞ্জাম। যা পেকুয়ার খেলোয়াড়দের শরীর চর্চা ও অনুশীলনের উপযুক্ত স্থান।
স্থানীয় ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, সারাবছর যেখানে খেলাধুলার একটা পরিবেশ থাকে সম্প্রতি তা দখলে চলে গেছে মেসার্স মো. জামিল ইকবাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভবন ও মাঠে সড়ক সংস্কারের মালামাল মজুদ করার ফলে বন্ধ হয়ে গেছে পেকুয়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার সকল খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত বিভিন্ন ক্রিকেট, ফুটবলসহ ক্রীড়া একাডেমির কার্যক্রম। কিছু ক্রীড়া একাডেমি তাদের অনুশীলন কার্যক্রম পেকুয়া কলেজের মাঠে স্থানান্তরিত করলেও বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের অনুশীলন। আর খেলার মাঠে ইট, কংকর ও বালির স্তুপ করে রেখে সরকারী মাঠের ব্যাপক ক্ষতি সাধনও করছে ঠিকাদার। অন্যদিক মাঠের পূর্বকোণায় অবস্থিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভবনে ঠিকাদার নিযুক্ত প্রায় শতাধিক শ্রমিক বসবাস করছেন। এভাবে সরকারী ভবন ও খেলার মাঠ দখল করে ঠিকাদার অবৈধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও কোন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, পেকুয়া উপজেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সবুজ ঘাসের মাঠের উপর মজুদ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ইট, বালির বিশাল বিশাল স্তুপ। পুরো মাঠজুড়ে ইট ভাঙছে শতাধিক শ্রমিক। ফুটবল গ্রাউন্ডের দুই গোলবারের একটি উপড়ে ফেলা হয়েছে। অন্যটি ডুবে আছে ভাঙা ইটের স্তুপে। ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠে বড় বড় ক্রেনে ইটপাথর ও বালু স্থানান্তর করা হচ্ছে। মাঠে রাখা হয়েছে সড়ক সংস্কার কাজে ব্যবহৃত ২০-৩০টি বড় ছোট ট্রাক। মাঠের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে শ্রমিক বসবাসের শেড। ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ইনডোরে বাস্কেটবল কোর্টের রিম গুটিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে এক পাশে। সেখানে বসবাস করছে শ্রমিকরা। খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুম ব্যবহৃত হচ্ছে কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বাসস্থান ও কার্যালয় হিসেবে। কৌতুহলী শ্রমিকরা ব্যবহার করছে জিমনেশিয়ামের নানা উপকরণ।
সামাজিক সংগঠন আমরা পেকুয়াবাসীর মহাসচিব আবদুল হামিদ জানান, বরইতলী-মগনামা সড়কের সংস্কার কাজে সরবরাহের জন্য নানা কাঁচামালের স্তুপ করা হয়েছে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠে। এতে পেকুয়ার সকল খেলোয়াড় তাঁদের অনুশীলন ও শরীর চর্চার একমাত্র ভেন্যুটি হারিয়েছে। যা খেলোয়াড়দের শরীর চর্চা ও স্কিল ঠিক রাখার অন্তরায়। তিনি অবিলম্বে ঠিকাদারের কবল থেকে সরকারী ভবন ও খেলার মাঠ জবর দখলমুক্ত করনে উর্দ্ধতন প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা ফুটবল একাডেমির সভাপতি আহমদ শফি বলেন, পেকুয়ার খেলোয়াড়দের অনুশীলন ও শরীর চর্চার জন্য উপজেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স খুবই উপযোগী একটা স্থান। এতে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে সরকারিভাবে সকল সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। বর্তমানে তা বেদখল হয়ে যাওয়ার কারনে খেলোয়াড়দের অনুশীলন বন্ধ হয়ে গেছে। যা খেলোয়াড় উঠে আসার ক্ষেত্রে অন্তরায়। পাশাপাশি নিয়মিত খেলার মধ্যে যেসকল খেলোয়াড় রয়েছে তাঁদের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটা বড় বাধা।
পেকুয়া ক্রিকেট একাডেমির সদস্য মো. মোস্তাকিম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠ ইট বালুতে ঢাকা পড়ে যাওয়ার কারনে উপজেলার খেলোয়াড়দের ক্রিকেট খেলা চালিয়ে নিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে। কারণ ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠটি ছাড়া উপজেলায় ক্রিকেট খেলা অনুশীলনের কোন মাঠ নেই। আমরা চাইবো সড়ক সংস্কারের কাঁচামাল গুলো যেন শীঘ্রই অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। আগের মতো সে মাঠে আমরা ক্রিকেট অনুশীলন করতে পারি।
খেলার মাঠ দখলের ব্যাপারে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোতাছেম বিল্লাহ চকরিয়া নিউজকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ভবন ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করেছিল। কিন্তু তাদের অনুমতি দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামিল ইকবাল এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, স্থানীয় সাংসদ জাফর আলমের অনুমতি নিয়ে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ভবন ও মাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বাইরে তিনি আর কথা বলতে রাজি হননি।
পাঠকের মতামত: