চকরিয়া প্রতিনিধি ::
লবণ মাঠ দখল নিয়ে পেকুয়ার মগনামায় হামলার ঘটনায় তোলপাড় চলছে কক্সবাজার জুড়ে। হামলায় সাবেক চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির নেতা ইউনুছসহ ১০জন আহত হওয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যানসহ ৩৭জনকে আসামী করে মামলা করার পর গত তিনদিনে গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র দুইজন। একটি বেসরকারী সংস্থার বিপুল পরিমাণ জমির রক্ষণাবেক্ষণ ও লাগিয়ত দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রমিকদের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলছে।
এসব ঘটনায় পেকুয়া থানা পুলিশ নিরেপক্ষ ভুমিকা না নিয়ে একপক্ষে কাজ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই সংস্থার জমির পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া চেয়ারম্যান ওয়াসিমের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে পেকুয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান একচোখা নীতি অবলম্বন করে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যান ওয়াসিম ও ওসি জহিরুল তাদের সম্পর্ক ও লেনদেন অটুট রাখতে প্রায়শই মগনামা ঘাটে বেড়ানোর নামে গোপন পরামর্শ ও আড্ডা জমাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই ওয়াসিম বাহিনীর সেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে স্থানীয় কেউ কিছু বলতে পারতো না। যে কয়েকজন প্রতিবাদ করেছে তারা বিভিন্নভাবে হয়রানী শিকার হয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া ওসি জহিরুল ইসলাম গত ৫ বছরে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, উখিয়া, চকরিয়া ও সর্বশেষ পেকুয়ায় দায়িত্ব পালনকালে ব্যাপক বির্তকের জন্ম দিলেও রহস্যময় শক্তিশালী খুটির জোরে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেসরকারী সংস্থার বিপুল পরিমাণ ক্রয় করা জমি প্রথমে দেখভাল করতো পেকুয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি বাহাদুর শাহ। পরে ওই জমির পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মগনামা ইউনিয়ন থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমকে। চেয়ারম্যান ওয়াসিম সাবেক শিবির নেতা ও মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাশেম আলীর দেহরক্ষী এবং কক্সবাজারের ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্বও পালন করেছিলেন একসময়। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বেসরকারী সংস্থার জমি পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশিরভাগ নেতা-কর্মী তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও অনেকেই তার পক্ষে অবস্থান নেয়।
ফলে, ওই জমিকে ঘিরে বিএনপি’র পাশাপাশি আওয়ামীলীগের মধ্যে দন্ধ-কলহ গ্রুপিং এর সৃষ্টি হয়। বিএনপি’র মধ্যে বাহাদুর শাহ ও ওয়াসিমের দুটি গ্রুপ জমি কেন্দ্রীক প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ালেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করতে বেশ কয়েকজন নেতা ওয়াসিম বাহিনীসহ নানা ঘটনায় জড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ১৩ জানুয়ারী সকালে সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছ লোকজন নিয়ে মাঠে কর্মরত লবণ চাষিদের তাড়িয়ে দেয় এবং চাষাবাদে ব্যবহৃত আসবাবপত্র গুড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে দু’পক্ষের মধ্যে দিনব্যাপী উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মগনামার কয়েকটি পাড়ায় সশস্ত্র মহড়াও দেয় বেশ কিছু লোক। এখবর অনেকে পুলিশকে অবহিত করলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় সন্ধ্যায় বিতাড়িত শ্রমিকরা ইউনুছ, তার স্ত্রী ও লোকজনের উপর হামলা চালায়। মগনামায় হামলার পর রবি ও সোমবার ওই ঘটনা টক অব দ্যা কক্সবাজারের রুপ পায়। তদুপুরি রবিবার কক্সবাজার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি সভার মূখ্য আলোচনা ছিল মগনামার হামলার ঘটনা ও পেকুয়া থানার ওসি মো.জহিরুল ইসলাম খানের রহস্যজনক ভুমিকা নিয়ে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো.আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তাফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, জেলা পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন, আওয়ামীলীগ নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি, রেজাউল করিম, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলমসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে কয়েকজন নেতা পেকুয়ায় হামলার ঘটনায় চেয়ারম্যান ওয়াসিম ও থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খানকে দায়ি করে বক্তব্য রাখেন। জবাবে জেলা পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন জানান, ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওসি জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় ওই অভিযোগ সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত: