কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
কক্সবাজারের চকরিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার বিপনী বিতানে ঈদ বাজার জমতে শুরু করেছে। এখন বাজারে প্রথম চাহিদার তালিকায় রয়েছে মেয়েদের থ্রী পিচ আর মহিলাদের শাড়ি। তবে সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ প্রতিটি কাপড়ে বেশ কয়েক গুন বেশি দাম নিচ্ছে দোকানদার রা। নিয়ম অনুযায়ী বিক্রয় রশিদ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিচ্ছে না। আর একই কাপড় একেক জন কে একেক রকম দরে বিক্রি করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কাপড়ের দোকানে অভিযান চল্লেও চকরিয়াসহ কক্সবাজারে এখনো তার লক্ষণ নেই। তাই কাপড়ের দোকানদার রা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দ্রুত কাপড়ের মার্কেটে অভিযানে নামার দাবী জানান সাধারণ ক্রেতারা। এদিকে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আনুয়ারুল নাসের বলেন বর্ধিত দামে কাপড় বিক্রি হচ্ছে এ ধরণের তথ্য আছে তাই কাপড়ের দোকানে দ্রুত অভিযান চালানো হবে।
কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট এলাকার ঐতিহ্যবাহী শো রুম রিগেল হোম্ও গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের বেশির ভাগই তাদের শিশু এবং পরিবারের সবার জন্য কাপড় পছন্দ করছে। আলাপ কালে পিএমখালী ইউনিয়নের সুইস গেইট এলাকার দিলারা বেগম বলেন আসছি ঈদের মার্কেটিং করতে এসেছি তবে প্রতিটি দোকানে গিয়ে দেখা গেছে কাপড়ের অস্বভাবিক দাম রাখছে। যেমন আমার এক আত্বীয় একটি থ্রী পিচ কিনেছে ২৫০০ টাকা দিয়ে একই কাপড় একই মার্কেট থেকে আমার মেয়ে কিনেছে ৩৫০০ টাকা দিয়ে যেহেতু মেয়ের পছন্দ হয়েছে তাই বাধ্য হয়ে কিনে দিতে হয়েছে।
শহরের সালাম মার্কেটে গিয়ে বেশ কয়েক জন ক্রেতার সাথে কথা বলে কাপড়ের দাম নিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন কাপড়ের দাম আমাদের কাছে অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে। যেমন ৩ বছরের একটি ছেলের প্যান্ট দাম বলছে ১২০০ টাকা, একটি সার্ট ১৫০০ টাকা একটি পাঞ্জাবি বলছে ২২০০ টাকা যা অস্বাভাবিক। এসময় পার্শবর্তি আরেক অভিবাবক খুরুশকুলের ছৈয়দ নূর বলেন এখন থেকে মুলত ঈদ বাজার শুরু হলো।মনে হচেছ এবারে বাজেট ফেল করবো। প্রথমে অবশ্যই শিশুদের অগ্রাধিকার, তাদের সব কিছু শেষ হওয়া হওয়ার পর আমরা কিছু কিনতে পারি। তিনি জানা শিশুরাই ঈদের প্রধান আকর্ষণ ঈদে তাদের খুশিতে আমরা খুশি হই। তাই আগে শিশুদের পালা। কিন্তু কাপড়ের যে হারে দাম বলছে তাতে হতবাক হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। ফিরোজা মার্কেটে একটি শাড়ি দাম করেছি ৪৫০০ টাকা দিয়ে সে একই রকমের শাড়ি সীকুইন মার্কেট থেকে নিয়েছে ৩২০০ টাকা দিয়ে । তিনি বলেন রোজা আসলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের ব্যবসায়িদের দাম না বাড়ানোর জন্য তদারকি বা ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু যারা সব ছেয়ে বেশি বাজে ধরনের কাজ করে কাপড়ের ব্যবসায়িদের কেন নিয়ন্ত্রন করা হয় না ? সেটা বুঝি না। শহরের সি কুইন মাকের্টের ব্যবসায়ি স্বপন চক্রবর্তি বলেন আমাদের মার্কেটে বেশ কয়েক টি দোকানে ছোট বড় সবার কাপড় আছে বিশেষ করে সাজনী তে আধুনীক মানের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে সী-কুইন মার্কেটের একটি ঐতিহ্যআছে সেটা আমরা সব সময় বজায় রাখতে চাই। ক্রেতা কম বেশি সেটা আমরা চিন্তা করিনা সব সময় কুয়ালিটি ম্যান্টেইন করে চলি। তাই যারা আসল কাপড় চিনে তারা ঠিকই সী- কুইনে আসে।
চকরিয়া পৌরসদরের চিরিঙ্গায় গড়ে উঠা ডজন খানেক মার্কেটে ঈদ বানিজ্যের নামে চলছে গলাকাটা বানিজ্য। ক্রেতাদের শাড়ি, লুঙ্গি, টু পিচ, থ্রি পিচ ও বাচ্ছা পোষাক ক্রয়ে চলছে এসব গলাকাটা বানিজ্য। চকরিয়া সদরের নিউ মার্কেট, আনোয়ার শপিং, ওশান সিটি, ওয়েষ্টার্ন প্লাজা, সুপার মার্কেট, সিটি সেন্টার, মতলব শপিং, সমবায় মার্কেট ও রুপালী শপিং কমপ্লেক্স গুলোতে দোকানীরা ইচ্ছে মতো দাম নিচ্ছে ক্রেতাদের কাছ থেকে । এমনও প্রমা্ন রয়েছে ৫শত টাকা দামের একটি নিম্নমানের থ্রি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন অজুহাতে। চকরিয়া উপজেলার পাশ্ববর্তী উপজেলা লোহাগাড়া-সাতকানিয়া থেকে আসা এক শ্রেণীর মৌসুমী অসাধু ব্যসায়ীরা এসব গলাকাটা বানিজ্য করে গেলেও দেখার কেউ নেই বললেও চলে। সারাদেশে এ সব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হলেও চকরিয়া পৌর সদরের কাপড় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষ্যণ দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে রামুর বেশ কয়েক টি বিপণী বিতানে খুজ নিয়ে জানা গেছে সেখানেও ঈদ বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে. তবে এখনো কাপড় কিনার ছেয়ে মার্কেট ঘরে দেখেছে পছন্দ হলে কিনছে না হলে আরো পরে কিনবে। মূলত আর কয়েক দিন পরেই সবাই সব ধরনের কাপড় কিনবে। চকরিয়া, টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী সব উপজেলাতে খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে ঈদ বাজার দিন দিন ব্যস্ত হয়ে উঠছে বাজারে সব বয়সের মানুষের ভীড় বাড়ছে তবে শিশুদের কাপড় চোপড় বেশি বিক্রি হচেছ। অভিবাবকরা তাদের ছেয়ে মেয়েদের নিয়েও বেশি ব্যস্ত। এদিকে ঈদ বাজার নিরাপদ করতে আইনশৃংখলা বাহিনি সব সময় কড়া প্রহরায় থাকে বলে ও জানা গেছে। এদিকে শহরের কিছু বিপণী বিতানে গিয়ে দেখা গেছে অনেকে সেলাই ছাড়া থ্রী পিচ আগে ভাগেই কিনে পছন্দের টেইলার্সে সেলাই করতে দিচ্ছে। সে জন্য তারা আগেই কিনে ফেলছে তাদের পছন্দের কাপড়।
এদিকে ফিরোজা শপিং কপ্লেক্সের ব্যবসায় নাছির বলেন এবার ঈদে ভাল ব্যবসার আশা করছি কারন আবহাওয়া এখনো খুব ভাল আছে যদি এটা ধারাবাহিক ভাল থাকে তাহলে আমাদের জন্য খুব ভাল হবে। আর আইনশৃংখলা পরিস্থিতিও খুব ভাল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর গ্রাহকদের দাম বেশি বলার প্রবনাতকে তারা নাকচ করে দিয়ে বলেন আমরা ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে মাল কিনে এনে বিক্রি করি সেখানে অনেক খরচ আছে সব মিলিয়ে আমাদের ও ব্যবসা করতে হবে। তাই গ্রাহকদের কাপড়ের দাম বেশি বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ারুল নাসের বলেন কাপড়ের দোকানে অতিরিক্ত দাম রাখা হচ্ছে সে ধরণের অভিযোগ অনেক বেশি আসছে। ইতি মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাপড়ের দোকানে অভিযান পরিচালিত হয়েছে আমরা আসলে কোন ব্যবসায়িকে ঝামেলার মধ্যেফেলতে চাইছিলাম না তবে মনে হচেছ এবার অভিযানে নামতে হবে। এবং খুব দ্রুত বেশি দাম যারা রাখছে সে সব দোকান বা মার্কেটে অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।
পাঠকের মতামত: