এম.আর মাহমুদ:
এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা সাবেক মন্ত্রী, প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন দুঃখ করেই বলেছিলেন, ‘নিষ্ফলা গাছে বানরও উঠেনা।’ যার যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে এখনি। গাছে ফল না থাকলে বানর উঠার প্রশ্নই উঠেনা। সমাজে ভাল বা মন্দ কাজ করতে গেলেই টাকার প্রয়োজন। ধর্ণাঢ্য মুসলমান নর-নারীর জন্য আল্লাহ হজ্ব ও যাকাত ফরজ করেছে। এ দুটি মহৎ কাজ সম্পাদন করতে টাকা লাগে। আবার ইয়াবা, মাদকদ্রব্য সেবনসহ সব ধরণের অনৈতিক কাজ করতেও টাকা লাগে। এক কথায় জন্মে টাকা মরণেও টাকা। সুতরাং টাকা ছাড়া কিছুই হয়না। ঠিকাদারদেরকেও কাজের বিপরীতে পে-অর্ডার দিতে হয়। নীলামে অংশ গ্রহণ করলেও জামানত দিতে হয়। অপরদিকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত অংকে ট্রেজারী চালানে ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে রশিদ মূলে টাকা জমা দিতে হয়। কিন্তু নির্ধারিত সংখ্যক ভোট পেলে ওই জামানত ফেরৎযোগ্য।
সম্প্রতি দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের তৃণমূল ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন তালিকায় নাম উঠাতেও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মোটা অংকের টাকা জামানত হিসেবে দিতে হচ্ছে। শাসক দলের প্রার্থী তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় উপজেলা কমিটি বাধ্য হয়েই হয়ত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাচ্ছে না। প্রতি ইউনিয়নে ৫-১০ জন পর্যন্ত অতি জনপ্রিয় প্রার্থীর ভিড় সামলাতে দলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ত্রাহি মধুসুধন অবস্থা। বেশীরভাগ প্রার্থীর অভিমত জাতির জনকের প্রতীক পেলে তারা বৈ-তরণী পার হয়ে যাবেন অনায়সেই। খ্যাত অখ্যাত প্রার্থীর ভীড়ে “সোনারতরীর” এখন কাহিল অবস্থা। কান্ডারীরা দক্ষতার সাথে হাল ধরতে সক্ষম না হলে তরী ডুবে মরার সম্ভাবনাও কম নয়। এ কারণে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে একটি ইউনিয়ন ছাড়া ১১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী তালিকায় নাম সংযোজন করতে হলে এক লক্ষ টাকা করে আগাম জামানত হিসেবে নিচ্ছে। যা ফেরৎ বা অফেরৎযোগ্যও হতে পারে। যার সম্ভাবনা অর্ধেক অর্ধেক।
বেশীরভাগ প্রার্থী ইতোমধ্যে উপজেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষের হাতে জামানতের অর্থ জমা দিয়েছেন। আর যারা এ টাকা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা জেলা কমিটির কাছে গিয়ে তদবির করছেন। টাকা দিতে অনিচ্ছুক অনেক প্রার্থী দাবী করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্র জীবন থেকে দল করছি। চাঁদাবাজি, দলবাজি, দখলবাজি, পরধন ও কারো টাকা লুট করিনি। সরবে ও নীরবে মানুষের খেদমত করেছি। কিন্তু আজ টাকা দিতে না পারায় মনোনয়ন তালিকায় নাম তুলতেও পারছিনা। তাহলে আমরা যাব কোথায়? সত্যিকার অর্থে যারা দলের নাম বিক্রি করে দখলবাজি, থানায় দালালী ও লুটপাট করে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন, তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে এখন দলে সুদিনে। কারণ এখন ভেজালের ঠেলায় আসল উদাও হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
এদিকে মনোনয়ন তালিকায় নাম উঠানোর অজুহাতে টাকা জামানত নেয়ার বিষয়টি দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। সিংহভাগ নেতাকর্মী বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না। বিষাদসিন্ধুর লেখক মীর মোশারফ হোসেন সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন ”হায়রে অর্থ পাথেয়- অর্থ তুই জগতের সব অনর্থেরই মূল”। তবে শিমারের উক্তিটিও না বললেই হয়না ‘অর্থই সব সুখের মূল।’ যে অর্থ না থাকলে স্ত্রী স্বামীকে পিতা পুত্রকে মা ছেলেকে ভালবাসে না। এ অর্থের কারণে দলের অনেক ত্যাগী ও যোগ্য নেতা বঞ্চিত হচ্ছে। অখ্যাত ও অযোগ্যরা দলীয় প্রতীকে বিজয়ী হলেও দলের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে মনে করা যায় না। বিষধর সাপ সাপুড়ের বক্সে থাকলেও নিরাপদ মনে করা যায়না। সাধারণ মানুষ একজন ব্যক্তিকে দু’কারণে সম্মান করে। কেউ করে গুণীজনকে গুণের কারণে আর কেউ করে সন্ত্রাসীকে ভয়ের কারণে। টাকা দিয়ে যারা নির্বাচিত হবেন দলের দুর্দিনে তাদেরকে এক সময় খুঁজে পাওয়া নাও যেতে পারে। ত্যাগী ও বঞ্চিতরাই দলের দুর্দিনের পরম বন্ধু। ১/১১ এর সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাবেক মন্ত্রী মরহুম তানভীর আহামদ সিদ্দিকীর একটি কথা বারবারই মনে পড়ে। ”খায়া পিয়া ভাগগিয়া, নেহি খায়া নেহি পিয়া মগর ফাস গিয়া”।
পাঠকের মতামত: