ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া-পেকুয়ায় বিএনপিতে গ্রেপ্তার আতঙ্ক: শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের ২টি মামলা

নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া
চকরিয়া-পেকুয়ায় শতাধিক বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২টি মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে দুই মামলায় ৩৯ জনকে। অন্যদের অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গতকাল রবিবার ও আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত এ মামলার এজাহারনামীয় ৪আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান শুরু করেছে। এতে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পুলিশ দাবি করেছে, বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা প্রত্যাহারের দাবিতে গত শনিবার দুপুরে চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গায় ঝটিকা মিছিল বের করেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাঁরা সরকার ও আদালত বিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে আতংক মুলক কর্মকান্ত সৃষ্টি করেন। এসময় তাঁরা একটি ইজিবাইক টমটম ভাঙচুর করে পালিয়ে যান। পরে পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে এ মামলায় ৪জনকে গ্রেফতার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্যারচরের মৃত হাজি আবদুল মতলবের ছেলে ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. জসীম উদ্দিন (৪০), পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত শামশুল আলমের ছেলে ও পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কায়ছার হামিদ (৩০) ও যুবদল নেতা পৌরসভার করাইয়াঘোনা গ্রামের আবদুল গণির ছেলে বেলাল উদ্দিন (৩২)। অপর মামলায় পেকুয়া থানা পুলিশ আসাদ রুবেল নামে ১ জনকে আটক করে।

বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার দাবি, পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে যে মামলাটি করেছে এবং মামলায় যে ঘটনা দেখানো হয়েছে এর কোনো ভিত্তি নেই। বিএনপির মিছিল থেকে কোনো যানবাহন ভাঙচুরও করা হয়নি। শুধু হয়রানি এবং অহেতুক গ্রেপ্তার করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই মামলা রুজু করা হয়েছে।

চকরিয়ায় মামলার বাদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল বাতেন বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা শনিবার ঝটিকা মিছিল বের করে পৌরশহর চিরিঙ্গায় অতঙ্কমুলক কর্মকান্ড সৃষ্টির চেষ্টা এবং একটি ইজিবাইক টমটম ভাঙচুর করে। এ খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় টমটম, ভাঙচুর করা কিছু গ্লাসের টুকরো এবং লাঠিসোঁটা জব্দ করা হয়।’
চকরিয়া থানার ওসি মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিক্ষোভ মিছিলের নামে চকরিয়া পৌরশহরে আতংক মুলক কর্মকান্ড সৃষ্টি এবং যানবাহন ভাঙচুর করার দায়ে এ মামলা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার এজাহারনামীয় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে পেকুয়ায় ১৫ অক্টোবর বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে থানা পুলিশ। ওই মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় ৪১ জন নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে। পেকুয়া থানার এস,আই ইয়াকুবুল ইসলাম ভূঁইয়া বাদী হয়ে পুলিশ এ মামলা রুজু করে। যার নং-০৯/১৮। মামলায় ১৬ জনকে এজাহার নামীয় আসামী করে। এ ছাড়া ২০/২৫ জন অজ্ঞাতসহ দায়েরকৃত মামলায় ৪১ জনকে আসামী করে। এ মামলায় আসাদ রুবেল নামে ১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আটককৃত ব্যক্তি পেকুয়া সদর ইউনিয়নের শেখেরকিল্লাঘোনার শাহ আলমের ছেলে।

অন্যান্য আসামীরা হলেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সদর ইউপির চেয়ারম্যান এম, বাহাদুর শাহকে এ মামলায় প্রধান আসামী করে। মামলায় অপর আসামীরা হলেন-যুবদল পেকুয়ার সভাপতি জেড,এম মোসলেম উদ্দিন, সম্পাদক কামরান জাদীদ মুকুট, বিএনপির সদর পশ্চিমজোন সভাপতি শাহনেওয়াজ আজাদ, পূর্বজোন বিএনপির সভাপতি মাহাবুবুল করিম, উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ রুবেল(২৮), যুবদল নেতা সাজ্জাদ হোসাইন, আরিফুল ইসলাম বিটু, ছাত্রদল সভাপতি সোহেল আজিম, যুবদল নেতা রাশেদুল ইসলাম, যুবদল নেতা সাজ্জাদ, এমডি শওকত হোসাইন, উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রমুখ। এ ছাড়া ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।

এ দিকে দায়েরকৃত মামলায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে বিএনপি পেকুয়া উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে। তাৎক্ষনিক এক প্রতিক্রিয়ায় উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ইকবাল হোসাইন জানায়, এ মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামুলক হয়েছে। বিএনপির যে সব নেতা-কর্মী এ মামলায় আসামী হয়েছেন তারা নির্দোষ ও নিরাপরাধ। মামলাটি গায়েবী মামলা হিসেবে আমরা বিএনপি তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্ত করেছি। বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশ অবস্থান সুসংহত করেছে। সেখানে কোন ধরনের রাজনৈতিক কর্মসুচী পেকুয়ায় হয়নি। বিরোধী শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে দমাতে এ কাল্পনিক মামলা রুজু হয়েছে। আমরা এ মামলায় চরম হতাশা ব্যক্তসহ এ মামলা প্রত্যাহার দাবী করছি।

পাঠকের মতামত: