ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে চিংড়ি প্রকল্প

চকরিয়ায় উচ্ছেদ আতঙ্কে ৪২ ভূমিহীন পরিবার

নিজম্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া  ::

চকরিয়ার উপকূলীয় পশ্চিম বড় ভেওলার ইলিশিয়াস্থ টেকছিড়া, দরবেশ কাটা ও সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালীর নজু বাপের ভিটার প্রায় ৪০ একর জায়গায় বসতি স্থাপন করে অন্তত ৪২টি ভূমিহীন পরিবার। জলবায়ু উদ্বাস্তুর শিকার এসব পরিবার ৫০ বছর ধরে এখানে বসতবাড়ি তৈরি বসবাস ও চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। কিন্তু মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির মাধ্যমে সেই জমি চিংড়ি চাষ উপযোগী মর্মে কাগজপত্র দেখিয়ে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে সমুদয় জায়গা হাতিয়ে নিতে তৎপর হয়ে ওঠে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি চক্র।

চক্রটি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চিংড়ি প্রকল্পের ৯টি প্রস্তাব তৈরি করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। তদ্মধ্যে চারটি প্রস্তাব ইতোমধ্যে পাসও করিয়ে নেয়। এরপর সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিহীনদের সেই জায়গা থেকে অন্তত ১০টি ঘরবাড়ি বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় প্রভাবশালী চক্রটি।

ভুক্তভোগী ভূমিহীন পরিবারগুলো জানায়, তারা ভূমিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পাশাপাশি চিংড়ি চাষ উপযোগী জমি না হলে জালিয়াতির মাধ্যমে মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাস করিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদনও করেন তারা।

জাতীয় চিংড়ি মহাল কমিটির সদস্য মো. আমিনুল করিম জানান, গত ২৯ মে মন্ত্রণালয়ে জাতীয় চিংড়ি মহাল কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রী মহোদয়। এছাড়াও কক্সবাজার- ১ ও ২ আসনের সংসদ সদস্য, ভূমি সচিবসহ মহাল কমিটির সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে মন্ত্রী মহোদয় সচিবকে কঠোর নির্দেশনা দেন মন্ত্রণালয় থেকে পাস করিয়ে নেওয়া চারটি চিংড়ি প্রকল্পের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখতে। পাশাপাশি স্থানীয় যেসব সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী এসব প্রস্তাব প্রেরণের সময় ভুয়া তথ্য ও কাগজপত্র দাখিল করেছেন তাদের ব্যাপারেও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন সচিবকে।

মন্ত্রীর এই নির্দেশনার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন ভূমিহীন ৪২ পরিবারের সদস্যরা। এসব ভূমিহীনদের কয়েকজন হলেন পশ্চিম বড় ভেওলার দরবেশ কাটার ঘুইজ্জাখালীর জয়নাল বৈদ্য, মিজানুর রহমান, লেডু ফকির, রেহেনা আক্তার। তারা জানান, মন্ত্রীর নির্দেশনার পরও সেই প্রভাবশালী ভূমিদস্যুচক্রটি ভূমিহীনদের ভোগ–দখলীয় জায়গায় নতুন করে বাড়ি নির্মাণ শুরু করে। এজন্য সেখানে জড়ো করা হয় সশস্ত্র ও দাগী অপরাধীদের। আর তাদের পাহারায় নিয়োজিত শ্রমিকেরা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরুর খবর পেয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে থানা থেকে একদল পুলিশ সেখানে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ভোগ–দখলীয় জায়গা থেকে ঘরবাড়িসহ ৪২টি পরিবারকে উচ্ছেদ করে সমুদয় জায়গা জোরপূর্বক কেড়ে নিতে কোমর বেঁধে নেমেছে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী চক্রটি।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান  বলেন, মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির মাধ্যমে যেসব চিংড়ি প্রকল্প মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়েছিল, সেইরকম চারটি প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে বাতিল করার জন্য কাগজপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। অতিশীঘ্রই এসব প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে বাতিল করবে মন্ত্রণালয়।

সরেজমিন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, জলবায়ু উদ্বাস্তুর শিকার ভূমিহীন পরিবারগুলো যাতে বসবাস করতে পারে সেজন্য ১৯৫৫ সালে ইলিশিয়ার জমিদার খাঁন সাহেব মকবুল আলী চৌধুরীর নাতি মকবুল কাদের চৌধুরী তাদের মালিকানার জমিতে আশ্রয় দেয়। পরবর্তীতে বিএস জরিপের সময় সেই জায়গা খাস খতিয়ানভুক্ত হলেও তা কোনোভাবেই চিংড়ি চাষ উপযোগী শ্রেণির জমি নয়। মূলত এসব জায়গায় মানুষের বসতভিটা, চাষাবাদের জমি, চলাচল পথসহ মিঠা পানির উৎসের খালও রয়েছে।

 

পাঠকের মতামত: