চকরিয়া উপজেলা সদর থেকে৷ সোজা পূর্বে কাকারা ইউনিয়নের চোট্র গ্রাম মিনিবাজার এলাকার কৃষক মোহাম্মদ কাইছার (৪২) এবার বাড়ির নিকটস্থ মাতামুহুরী নদীর চরে তামাকের বদলে এবার ফেস্টিভ্যাল জাতের স্ট্রবেরি চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেতে যাচ্ছেন। এ জাতের স্ট্রবেরি এ উপজেলায় প্রথম চাষ করা হচ্ছে। ২০০৭ সাল থেকে স্ট্রবেরি চাষ করছেন কৃষক কাইছার। তবে আগের তুলনায় এবছর নতুন জাতের স্ট্রবেরি চাষে আর্থিকভাবে বেশি লাভবান মানে লাখপতি হবার স্বপ্ন দেখছেন সফল কৃষক মোহাম্মদ কাইছার। কৃষক কাইছারের জমির চারপাশে যেখানে তামাক চাষে মাঠ ভরে গেছে সেখানে আধুনিক ও নতুন জাতের স্ট্রবেরি চাষ সত্যিই অকল্পনীয়। এককথায বলতে গেলে কাকারা ইউনিয়নের মোট জমির ৪ভাগের ৩ভাগ জমিই প্রতিবছর তামাক চাষে ভরে যায়।
চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত তিনি ৩ লাখ ৬৫হাজার টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন। শীতের আবাহাওয়া থাকলে খেত থেকে আরও ২ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করা যাবে। স্ট্রবেরি চাষ করতে মাঠ প্রস্তুত, চারা কেনা ও পরিচর্যা বাবদ তাঁর ১লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।
মাতামুহুরী নদীর চরে ২৫শতক জমিতে প্রস্তুত করেন কৃষক মোহাম্মদ কাইছার। রাজশাহীর এক নার্সারি থেকে উন্নত জাতের ফেস্টিভ্যাল জাতের ৩ হাজার স্ট্রবেরির চারা এনে গত ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর রোপন করেন। চারা রোপনে পর স্ট্রবেরি গাছে সাদা রঙের ফুল আসে। এনজিও সংস্থা আনন্দ ও সীপের প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় স্ট্রবেরি চাষে তিনি সফলতা অর্জন করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাতামুহুরীর চরের সবুজ মাঠে জাল দিয়ে ঘিরে রাখা একটি ফসলে মাঠ। সেখানে মালচিং পদ্ধতিতে এ স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। সবুজ পাতার মধ্যে যেদিকে চোখ গেছে, থোকা থোকায় স্ট্রবেরি ফল। কোনোটা টকটকে লাল, কোনোটার হলুদ রং ধারণ করেছে। কৃষক কায়সার ও তাঁর এক শ্রমিক স্ট্রবেরির পরিচর্যা করছেন, অন্যজন খেত থেকে তুলছেন স্ট্রবেরি ফল।
কৃষক মোহাম্মদ কাইছার বলেন, ‘২০০৭সালে প্রথম স্ট্রবেরি চাষ সম্পর্কে ধারণা পাই। দুই বছর চাষ করার পর বন্ধ করে দিই। তখন স্ট্রবেরি মানুষ চিনত না। তারপর ২০২২সালে এ ফল চাষ আবার শুরু করি। চলতি মৌসুমে রাজশাহী থেকে ফেস্টিভ্যাল জাতের স্ট্রবেরি চারা সংগ্রহ করি। গত বছর ১৭ নভেম্বর চারা রোপন করে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি প্রথম স্ট্রবেরি ফল উত্তোলন করি।’
তিনি বলেন, ‘মূলত স্ট্রবেরি শীতকালীন বিদেশী ফল। প্রথমে পাওয়ার টিলার দিয়ে মাটি ঝরঝরে করে চাষ দিতে হয়। তারপর সার, গোবরসহ নানা উপাদান ব্যবহার করে জমি প্রস্তুত করতে হয়। এখন খেত থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি পরিমাণ স্ট্রবেরির ফল উত্তোলন করা যায়। আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শীতের আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফল পাওয়া যাবে। চকরিয়া ও কক্সবাজার শহরে সুপার শপ ও ফলের দোকানে সরবরাহ করছি।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাসিম হোসেন দৈনিক চকরিয়া নিউজ কে জানান, ‘উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে স্ট্রবেরি চাষ হলেও কাইছারের এখানে বেশি হচ্ছে। বর্ষাকালে মাতামুহুরী নদীর উজান থেক নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্যাপনহারে পলি পড়ে এসব জমিতে। তাই ভালো ফলন হওয়ায় ফলের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে তাঁর স্ট্রবেরি খেত চাষ পদ্ধতির দেখা দেখিতে কৃষকেরা লাভজনকভাবে স্ট্রবেরি চাষের প্রতি উৎসাহিত হচ্ছে। আমরাও উৎসাহী কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যাতে আরো বেশী পরিমানে চাষ হয়।
পাঠকের মতামত: