ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার রেল প্রকল্পের ১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা ভন্ডুল

ডেস্ক রিপোর্ট ::
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভুমি অধিগ্রহণ (এলএ অফিস) শাখা থেকে একটি জালিয়াত সিন্ডিকেট কর্তৃক রেল প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ১১ কোটি টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা ভন্ডুল হয়ে গেছে। এই জালিয়াত চক্রটি রেল প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নিতে বহু আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গত জানুয়ারি মাসে জালিয়াত চক্রের ডেরা থেকে তিন বস্তা নকল দলিল ও খতিয়ান সহ তিন জালিয়াতকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল।
জেলা প্রশাসনের ভুমি অধিগ্রহন শাখা (এলএ অফিস) সুত্রে জানা গেছে, অল্পের জন্য জালিয়াত চক্রের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। জালিয়াত চক্রটি এলএ অফিসে ১১ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ হাতিয়ে নিতে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পর্যন্ত ক্ষমতা প্রদর্শন করার পরই সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এরপরই এই চক্রের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া এলএ অফিস বন্ধ করে দেয়।
ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করার জন্য কক্সবাজারের জালিয়াত চক্রটি রাজধানী ঢাকা থেকে পর্যন্ত নানা পরিচয়ের ‘প্রভাবশালী’ লোকজনকে ভাড়া করে আনে। সর্বশেষ গত বুধবার কক্সবাজার এলএ অফিসের কর্মকর্তাগণ ক্ষতিপূরণের ১১ কোটি টাকা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে কথিত প্রভাবশালীরা এ মর্মে হুশিয়ারিও প্রদান করেন যে-কিভাবে টাকা নিতে হয় তা দেখিয়ে ছাড়বেন।
কক্সবাজার ভুমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলএও) শাখাওয়াত হোসেন রুবেল জালিয়াত চক্রের চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গতকাল বৃহষ্পতিবার জানান-‘চক্রটি টাকার চেক নিতে চাপ প্রয়োগ সহ তাড়াহুড়ো করার কারণেই আমরা এ যাত্রায় বেঁচে গেছি।’ তিনি জানান, কক্সবাজার-ঘুংধুম রেল প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা ঝিলংজা মৌজার এক একর ৭৭ একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ১১ কোটি টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্রের সদস্যরা।
জানা গেছে, কক্সবাজার পৌর এলাকার রুমালিরছড়ার বাসিন্দা আবুল ফজলের পুত্র শামশুল হুদা ও তার বোন জান্নাতুল ফেরদৌস ১০ টি রোয়েদাদ মূলে এক একর ৭৭ শতক অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এসব রোয়েদাদগুলো যথাক্রমে ১৭১, ১৭২, ১৮০, ১৮৮, ১৮৫, ২০৫, ২০৬, ২১২, ২১৩ ও ২৩৫। এসব রোয়েদাদের অনুকুলে আবেদনকারীরা অত্যন্ত গোপনে আদালতে মামলা দায়েরের মাধ্যমে মাত্র মাস-দেড়েক সময়ের ব্যবধানে রায়-ডিক্রিও আদায় করে নেন। এমনকি রাতারাতি জমির খতিয়ানও সৃজন করা হয়। অবশ্য সেই সৃজিত খতিয়ান পরে বাতিলও করা হয়।
জেলা ভুমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে আরো জানা গেছে, কক্সবাজারের একটি জালিয়াত চক্র অনেক আগে থেকেই শত শত জমির জাল খতিয়ান ও জাল দলিল সৃজন করে রেল প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নিতে তৎপর ছিল। এমনকি গত জানুয়ারি মাসে ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান টিপু সুলতানের নেতৃত্বে পুলিশ শহরতলির লারপাড়ায় অভিযান চালিয়ে তৌহিদ নামের একজন জালিয়াত সিন্ডিকেট সদস্যের ঘরে হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল দলিল ও খতিয়ান সহ সীল মোহর উদ্ধার করা হয়েছিল।
পরে ঝিলয়ংজা চাদের পাড়ার আমিন নামের আরো একজন সদস্যের ঘরে হানা দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছিল আরো তিন বস্তা জাল দলিল। এ ঘটনায় তৌহিদ, মৌলভী সৈয়দুল হক সহ তিনজনকে আটক করা হয়। পুলিশ এ ঘটনা তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।
এসব বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজি মোঃ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন যে জেলায় বর্তমানে ৬০ টির বেশি উন্নয়ন প্রকল্পের অধিকগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপুরণের টাকা দেয়া হচ্ছে। জেলা ভূমি অধিগ্রহণ অফিসে পর্যাপ্ত সংখ্যক সার্ভিয়ার এবং ভুমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তারা দিবারাত্রি পরিশ্রম করে অত্যন্ত সর্তকর্তার সাথে ক্ষতিপূরণের টাকা যথাযথ ভাবে প্রদানের অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন ক্ষতিপূরণের টাকা নিতে কোন জালিয়তচক্র গোপনে ও সরবে তৎপরতা চালানোর সংবাদ কারও কাছে থাকলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: