ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে ২২ দিন পর মাছ ধরতে সাগরে নামছে ট্রলার

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥

দীর্ঘ ২২ দিন পর নির্ভয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে নেমেছে কক্সবাজারের অন্তত পাঁচ হাজার ট্রলার। মা ইলিশ রক্ষার জন্য গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ অক্টোবর এ ২২ দিন মাছ শিকার থেকে বিরত ছিলেন জেলেরা। সোমবার থেকে কক্সবাজারে ইঞ্জিনচালিত মাছ ধরা নৌকার দিয়ে ফের মাছ ধরা শুরু হয়েছে, ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। গত ২০ অক্টোবর জলদস্যু বাহিনীর ৪৩ জন সশস্ত্র জলদস্যু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপির কাছে আত্মসমর্পণ করার পর জেলেরা নির্ভয়ে সাগরে যাচ্ছে মাছ শিকারে।

কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, মা ইলিশ রক্ষার জন্য ২২ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। সোমবার থেকে সাগরে মাছ শিকারে নামছেন জেলেরা। একদিনে অন্তত পাঁচ হাজার ট্রলার সাগরে নেমেছে। আরও এক হাজার ট্রলার দু-এক দিনের মধ্যে সাগরে নামবে।

সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাছ ধরার ট্রলার আছে প্রায় ছয় হাজার। এসব ট্রলারের মাঝি, জেলে-শ্রমিক আছেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার।

সোমবার দুপুরে শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ৫০টির বেশি ট্রলার মাছ ধরার জন্য সাগরের দিকে ছুটছে। আরও কিছু ট্রলারের জেলেরা সাগরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জেলে আহম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘এখন সাগরে জাল ফেললেই ধরা পড়বে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশসহ নানা মাছ। কিন্তু জলদস্যু নিয়ে আতঙ্কে আছি। মাছ ধরে উপকূলে ফেরার সময় দস্যু বাহিনী লুটপাট চালাতে পারে।’

কক্সবাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা জয়নাল আবেদীন হাজারী বলেন, জেলেরা এবার নির্ভয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছে। সন্ত্রাসী জনপদ দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে ছিলো অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ছড়াছড়ি। ডাকাতি দস্যুতা সহ নানান অপরাধে মানুষ ছিলো ভীত সন্ত্রস্থ। এই জনপদের ছয় জলদস্যু বাহিনীর ৪৩ জন সশস্ত্র জলদস্যু ২০ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। উপকূলীয় দুই উপজেলা কুতুবদিয়া-মহেশখালীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ১২ জন জলদস্যু সহ ৬টি বাহিনীর এই ৪৩ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণের নেপথ্যে কাছ করেছে চ্যানেল ২৪ এর সাংবাদিক আকরাম হোসেন, তাকে ধন্যবাদ জানান এই এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। সাগর উপকুলে অনেকটা শান্তি ও স্বস্তিতে আছে জেলেরা।

শহরের নাজিরারটেক এলাকার জেলে ছৈয়দ করিম বলেন, ‘টানা ২২ দিন মাছ ধরতে পারিনি। এ কারণে সংসারে অভাব নেমে আসে। এখন ইলিশ ধরতে পারলে অভাব দূর হবে।’

শহরতলির খুরুস্কুল এলাকার জেলে আবদুল করিম বলেন, ‘গত মৌসুমে সাগরে জলদস্যুদর হামলা ও অপহরণের শিকার হয়েছেন অনেক জেলে। মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এলেও তাঁরা এখন ঋণের ভারে জর্জরিত। আমরা সাগরে নিরাপদে মাছ ধরার নিশ্চয়তা চাই।’

ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ বলেন, জলদস্যুদের লুটপাট বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। দস্যুদের উৎপাত বন্ধ করা গেলে এ মৌসুমে প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা যাবে।

জেলা পুলিশ সুপার কেএম মাসুদ হোসেন বলেন, সাগরে জেলেদের নিরাপত্তা ও জলদস্যুদের দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর।

এদিকে, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোঃ আব্দুল আলীম জানান, গত রোববার ২৮ অক্টোবর মধ্য্যরাতে নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হয়েছে। সোমবার থেকে ইঞ্জিনচালিত মাছ ধরা নৌকার সাগরে রওয়ানা দিয়েছে।

ড. মোঃ আব্দুল আলীম জানান, জেলায় তালিকাভুক্ত মাছ ধরা নৌকার সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৭০০টি। এসব ট্রলারের প্রায় ৪২ হাজার জেলে তালিকাভুক্ত ।

পাঠকের মতামত: