কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁওর ৩ ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক দরিদ্র লোক এনজিও’র ঋণের গ্যাঁড়াকল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। দিন দিন ক্ষুদ্র ঋণের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে গ্রামের সহজ সরল সাধারণ মানুষ। ক্ষুদ্র ঋণদানকারী বিভিন্ন এনজিও থেকে তারা প্রতিনিয়ত অহরহ ঋণ নিচ্ছে। একবার যে দরিদ্র লোকটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছে সে আর বছরের পর বছর পার হলেও ঐ ঋণের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। এতদ্ঞ্চলের সহজ সরল লোকজন এক এনজিওর ঋণ পরিশোধের জন্য অন্য এনজিও থেকে ঋণ নিচ্ছে। এভাবে একজন লোক ৬/৭ টি এনজিওর ঋণের জালে জাড়িয়ে ফতুর হচ্ছে। অনেকেই ঠিক মত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ আবার ভিটি বাড়ি বন্ধক দিয়ে ঋণ শোধ করছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ঈদগাঁওতে ব্র্যাক, গ্রামীন, আশা, কোষ্ট, বুরো বাংলাদেশ, প্রশিকা, মুক্তি, আইডিএস, দিগন্ত, সবুজ আঙ্গীনা, অংগন, এহেছান সোসাইটিসহ আরো বেশ কিছু এনজিও দরিদ্রদের মাঝে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে কাগজে কলমে এসব এনজিও ঋণের সুদের হার ১০% দেখানো হলেও বাস্তবে এরা ৩০% থেকে ৩৫% সুদ নিচ্ছে। আবার কোন কোন এনজিওর সুদের হার ৪০% ছাড়িয়ে গেছে। ঋণ গ্রহণকারী দরিদ্র মানুষের পক্ষে যা পরিশোধ করা নি:সন্দেহে কষ্টকর।
ক্ষুদ্র ঋণ নেয়া দরিদ্র মানুষের কথা জানতে সরেজমিন খোঁজ নেয়া হয় সদর উপজেলার ইসলামপুর-ইসলামাবাদ ও ঈদগাঁওর বিভিন্ন এলাকা। ইসলামপুর ইউনিয়নের নতুন অফিসে এসে জানা যায় এ এলাকার গ্রামে গ্রামে দরিদ্র মানুষেরা এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েছে এবং এখনো নিচ্ছে। একজন লোক একাধিক এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ঢালার ধোয়ার গ্রামে। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই গ্রামের ৬০% মানুষ এনজিও’র ঋণ নিয়েছে। সম্প্রতি ইউনিয়নের গজালিয়া এলাকার একজন লোক ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে এলাকা ছেড়েছেন। এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণকারী ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভোমরিয়া ঘোনার শফিকুল ইসলাম জানান, ১০% সুদের কথা বললেও তারা ৩০% থেকে ৩৫% পর্যন্ত সুদ নিচ্ছেন। প্রথমে না বুঝে ঋণ নিয়েছিলাম, কিন্তু এখন একটি এনজিওর ঋণ পরিশোধ করতে অন্য একটি থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এভাবে ৬টি এনজিও’র ঋণের জালে আটকে পড়েছি। একই ইউনিয়নের দরগাহ পাড়ার ঋণ গ্রহণকারী সাইফুল জানান, এনজিওরা টাকা দেয় ঠিকই কিন্তু সে টাকা খাটাবার সুযোগ দেয় না। তারা যে সপ্তাহে ঋণ দেয় তার পরবর্তী সপ্তাহ থেকে কিস্তি উঠানো শুরু করে। ঈদগাহ কলেজ গেইট এলাকার বাসিন্দা রোকসানা জানান, অনেক এনজিও ১ হাজার টাকা জমা রেখে ৫ হাজার টাকা ঋণ দেয়। ইউনিয়নের চান্দের ঘোনা- মেহের ঘোনা ও হাসিনা পাড়ায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায় একাধিক এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে বসত ভিটি বিক্রি করে কক্সবাজার শহরে ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করছেন অনেকে। ইসলামপুর হাজীপাড়ার মল্লিকা বেগম ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে গ্রাম ছেড়ে এখন চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে ভিক্ষা করছেন। একই ইউনিয়নের নতুন অফিস জওন্ন্যা কাটার আমির এনজিওর ঋণের কারনে সর্বস্বান্ত হয়ে এখন ভিক্ষা করে জীবন যাপন করছেন। এসব ঋণ গ্রহিতা হতভাগ্য মানুষ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় অনেক এনজিও দুর্যোগ- দূর্ভোগ এমনকি গত ঈদের আগের দিনও কিস্তি নিয়েছেন বলে এলাকাবাসিরা অভিযোগ করছেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন এ প্রতিবেদককে জানান, এনজিও গুলো ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ শুরুর পর হতেই গ্রামের লোকদের সঞ্চয়ের মনোভাব দূর হয়ে গেছে। এখন কারো ঘরে জমানো টাকা নেই। সকলেই এনজিওর ঋণের গানি টানছেন। এছাড়া ঋণের কিস্তি দেয়াকে কেন্দ্র করে গ্রামের দরিদ্র পরিবার গুলোতে দ্বন্দ্ব কলহ লেগেই আছে।
ঋণ গ্রহণকারীদের অভিযোগ এনজিওরা কিস্তি উঠানোর নামে কৌশলে আমাদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এনজিও কর্মকর্তা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ১০% সুদ নেয়া হচ্ছে এর বেশি নিচ্ছি না। সচেতন মহল আশংকা করছেন কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এ অবস্থা চলতে থাকলে বছরের মধ্যে ঈদগাঁওর প্রতিটি গ্রামে এ প্রভাবে গ্রামীন অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়তে পারে।
পাঠকের মতামত: