ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ঈদগাঁওতে প্রতিমা কারিগরদের চোখে ঘুম নেই!

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার প্রতিনিধি: শরতের আকাশে ছোট ছোট শ্বেতশুভ্র মেঘের ভেলা। নদীর ধারে কাশবনে বাতাসে দুলছে কাশফুল। আবার মাঝে মাঝে সাদা মেঘ কালো হয়ে বৃষ্টি রূপে ঝড়ছে ধরণীতে। এ যেন রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা। শরতের এ প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শীঘ্রই স্বর্গের দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসছেন। ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ করতে দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গা আসছেন ভক্তদের মাঝে। আগামী ১৫ অক্টোবর সোমবার মহা ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাঁচদিন ব্যাপী দুর্গোৎসব। ফলে প্রতিমা তৈরির কারিগরদের চোখে এখন ঘুম নেই। কারিগরেরা এখন যথাসময়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে ব্যস্ত। ইতিমধ্যেই তারা প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। প্রতিমার কাঠামো বানানোর কাজ শেষ হলেও সাজ-সজ্জা ও রং করা এখনো বাকি। অর্থাৎ এখন চলছে তুলির শেষ আঁচড়ের কাজ।

সরেজমিন কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে বিভিন্ন প্রতিমা তৈরির স্থান ঘুরে দেখা যায়, পুরোদমে চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহূর্তের কাজ। প্রতিমা তৈরির জন্য ইউনিয়নের পালপাড়া, হরিপুর, কালিবাড়ি, হিন্দু পাড়ার বিভিন্ন পূজা মন্ডপে কারিগর ভাড়া করে এনে লাখ টাকা ব্যায় করে প্রতিমা তৈরী করছে আয়োজকরা।

প্রতিমা কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা মাস দেড়েক ধরে প্রতিমা বানানো শুরু করেন। যেসব প্রতিমা ফরমায়েশ দিয়ে বানানো হয় সেগুলোর ফরমায়েশ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের মধ্যেই নিয়ে ফেলেন তারা। তারপর শুরু হয় শিল্পীর সুনিপুণ হাতে প্রতিমা গড়ার কাজ।

কারিগর অজিত পাল জানান, তাদের আদি বাসভূমি পটিয়ায়। বংশ পরম্পরায় তার বাবা অমিত পালের হাত ঘুরে এখন তিনি প্রতিমা বানানোর কাজ করছেন। বাপ-দাদাদের কাছ থেকেই প্রতিমা বানানো শিখেছেন। এখনো মূল পেশা হিসেবে এটিকে ধরে রেখেছেন। সারাবছর বিভিন্ন পূজার প্রতিমা বানিয়েই সংসার চালান। তবে সব সময়ই অপেক্ষায় থাকেন দুর্গাপূজার। কারণ দুর্গাপূজায় একসাথে অনেকগুলো প্রতিমা বানাতে পারেন। পারিশ্রমিকও অন্যান্য পূজার চেয়ে বেশি। তিনি জানান, এবার তিনিসহ মোট ৫জন কারিগর মিলে ইতিমধ্যে বেশক’টি প্রতিমার নির্মাণকাজ শেষ করেছেন। প্রত্যেক কারিগরকে ভিন্ন ভিন্ন কাজ দেয়া হয়। কেউ মূল কাঠামোর কাজ করলে কেউ সাজ-সজ্জার বিষয়টি দেখেন। আবার কেউ রং করার কাজ করলে অন্যজন বিভিন্ন অনুষঙ্গ যেমন দেবী ও অন্যান্য প্রতিমার বাহন, অস্ত্র ইত্যাদি বানানোর কাজ শেষ করেন।

তবে কর্মরত প্রায় সব কারিগরই বলেছেন, বেশিরভাগ সময়ই তাদের শ্রমের সঠিক মূল্য দেয়া হয়না। শুধুমাত্র ভালোবেসেই তারা এখনো এ পেশায় আছেন। কিন্তু দিন দিন যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে এর সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তারা।

কারিগর অজিত পাল ক্ষোভের সাথে বলেন, এটা তো এক প্রকার শিল্প। কিন্তু মানুষ এটাকে ছোট কাজ মনে করে। এখন জিনিসপত্রের অনেক দাম। কিন্তু প্রায় সময় দেখা যায় উৎপাদন মূল্যের কম দামে প্রতিমা তৈরী করতে হচ্ছে। সরকারের কাছে আবেদন জানাই আমাদের দিকে একটু দৃষ্টি দেয়ার জন্য। পূজা নিয়ে কত মিটিং-সেমিনার, সাংবাদিক সম্মেলন হয়। কিন্তু আমাদের কথা কোথাও বলা হয় না। এভাবে চলতে থাকলে এ পেশা থেকে মানুষ উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।

পাঠকের মতামত: