মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া: আজ ভয়াল ২৯ শে এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এ দিনে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল উপকূলীয় এলাকার বিস্তৃর্ণ জনপদ। বাঁচতে পারেনি শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধসহ লক্ষাধিক মানুষ ও কয়েক লক্ষ গৃহপালিত পশু-পাখি। ধ্বংস হয়েছিল গাছপালা, বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট, দালান-কোঠো ইত্যাদি। জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয় এদিনে।
ঘূর্ণিঝড়ের দীর্ঘ ২৭ (২০১৯ সালে ২৮) বছর পার হয়ে গেলেও উপকূলের লক্ষলক্ষ মানুষ তাদের ক্ষতি এখনও পুষিয়ে উঠতে পারেনি। ভয়াল আজকের দিনে ‘ম্যারি এন’ নামক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দেয় দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকার পুরো উপকূল। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারদিকে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছিল। দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল প্রকৃতির করুণ এই আঘাত। প্রাকৃতিক দূর্যোগের এতবড় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি এদেশের মানুষ এর আগে আর কখনো হয়নি। পরদিন বিশ্ববাসী অবাক হয়ে গিয়েছিল সেই ধ্বংসলীলা দেখে। কেঁপে উঠেছিল বিশ্ব বিবেক।
সেই ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় নিহতের সংখ্যা বিচারে পৃথিবীর ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় গুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল রাতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা এ ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় প্রায় ২৫০ কিমি (১৫৫ মাইল/ঘন্টা)। ঘূর্ণিঝড় এবং তার প্রভাবে সৃষ্ট ৬ মিটার (২০ ফুট) উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। এসময় আনুমানিক ১৩৮,৫০০ জন মানুষ, ২০ লাখ গৃহপালিত পশুপাখি মারা যায়। এসময় প্রায় এক কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয পড়ে়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক পাঁচ হাজার কোটি টাকা অধিক বলে প্রকাশিত হয়।
১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় বা ঘুর্নিবাত্যা হল ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচন্ড ঘূর্ণি বাতাস সম্বলিত আবহাওয়ার একটি নিম্ন-চাপ প্রক্রিয়া (low pressure system) যা নিরক্ষীয় অঞ্চলে উৎপন্ন তাপকে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে। সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা অনেকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দায়ী করেছেন। ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রের তাপমাত্রা ১৯৭০ সালের পর প্রায় এক ডিগ্রী ফারেনহাইট বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই এক ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এখন আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং বেশী সংখ্যায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে। এই ধরনের ঝড়ে বাতাস প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ছুটে চলে বলে এর নামকরণ হয়েছে ঘুর্নিঝড়। ঘুর্নিঝড়ের ঘুর্নন উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে। ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানলে যদিও দুর্যোগের সৃষ্টি হয়, কিন্তু এটি আবহাওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য রক্ষা করে। গড়ে পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৮০ টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এর অধিকাংশই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়, কিন্তু যে অল্প সংখ্যক ঘূর্ণিঝর উপকূলে আঘাত হানে ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করে তার একটি ১৯৯১ সালের ঘুর্ণিঝর ম্যারি এন।
বাংলাদেশ তথা উত্তর ভারত মহাসাগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয় না। তার পরিবর্তে, আরব সাগর এলাকায় উৎপন্ন ঝড়গুলোকে A এবং বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন ঝড়গুলোকে B অক্ষর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ শে এপ্রিল যে ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল তার পরিচয় TC-02B হিসেবে, তার মানে এটি ছিল ১৯৯১ সালে বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়। কক্সবাজারের উপকূলবাসী আজও ভুলতে পারেনি সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের পর নিহত মানুষের লাশ পড়েছিল উপকূলজুড়ে। শতাব্দীর প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কক্সবাজার এবং দেশের উপকূলীয় অঞ্চল মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয় কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। প্রলয়ঙ্করি এই ধ্বংসযজ্ঞের ২৮ বছর পার হতে চলেছে। এখনো স্বজন হারাদের আর্তনাদ থামেনি। ঘরবাড়ি হারা অনেকে মানুষ এখনো মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিতে পারেনি। এই ঘূর্ণিঝড়ে স্বজন হারানোর বেদনায় এখনো কাঁদে কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়ার বাসিন্দারা।
ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের এতগুলো বছর অতিবাহিত হলেও উপকূলীয় মানুষের সুরক্ষায় নেয়া হয়নি কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। নির্মাণ করা হয়নি মজবুত কোনো বেড়িবাঁধ। তাই প্রতি বছর জোয়ার ও বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় দ্বীপের শতশত একর জমির ফসল। সাগরে কোনো লঘুচাপ, নিম্নচাপ কিংবা মেঘ দেখলেই আতঙ্কে চমকে ওঠেন উপকূলবাসী। ৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ের এত বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় এলাকায় বাঁধসমূহ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের পরে নেয়া পরিকল্পনার মধ্যে স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার কিছু বাস্তবায়ন হলেও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাসমূহের বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। উপকূলীয় এলাকা ও দ্বীপাঞ্চলে যে পরিমাণ সাইক্লোন শেল্টার সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল তাও করা হয়নি। তার ওপর বিদ্যমান সাইক্লোন শেল্টারগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী। কোথাও কোথাও সাইক্লোন শেল্টার সাগর ও নদী ভাঙনের কারণে অস্তিত্ব হারিয়েছে। যার কারণে ২৭ বছর পরেও উপকূল আজও নিরাপদ নয়। ভয়াল সেই দুঃসহ স্মৃতির ২৭ বছর পেরিয়েও এসব ভাগ্যহত মানুষ কান্নায় বুক ভারী করেন আর একটি স্থায়ী বসতভিটার আশায় দিন গুনেন।
- চকরিয়ায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণরর মামলার অন্যতম আসামি ফারুককে গ্রেফতার করেছে র্যাব
- চকরিয়ায় মৎস্য অধিদপ্তরের উদোগে নৌযান মালিক ও সারেং দের নিয়ে কর্মশালা
- খুটাখালীতে শতাধিক পরিবারে শীতবস্ত্র বিতরণ
- জমজম হাসপাতালে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ডাক্তারের বক্তব্য
- চকরিয়ায় রেল স্টেশন মাস্টারকে ছুরিকাঘাত করেছে দুবৃর্ত্তরা
- চকরিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দুই দোকান পুড়ে ছাই,
- চকরিয়ায় মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলার গাড়ি চলাচল বন্ধে হাইওয়ে পুলিশের ক্যাম্পেইন
- চকরিয়ায় সংঘবদ্ধ কিশোরী ধর্ষণকাণ্ডে ৭ জন গ্রেফতার, ৩ জন জেলহাজতে
- নাইক্ষ্যংছড়িতে হতদরিদ্রদের মাঝে বিজিবির শীতবস্ত্র বিতরণ
- সঙ্গী হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত চকরিয়ায়
- কক্সবাজার প্রেসক্লাবকে বৈষম্য মুক্ত করতেই হবে
- চকরিয়ায় আ. লীগ নেতার গোয়ালঘর থেকে চোরাই গরু উদ্ধার
- চকরিয়ায় সংঘবদ্ধ কিশোরী ধর্ষণকাণ্ডে ৭ জন গ্রেফতার, ৩ জন জেলহাজতে
- রামুতে বিদ্যুৎ অফিসের দুর্নীতিবাজ আবাসিক প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরীর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
- চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারী পার্কে হাতি শাবকের ঠাঁই হলো
- জমজম হাসপাতালে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ডাক্তারের বক্তব্য
- খুটাখালীতে শতাধিক পরিবারে শীতবস্ত্র বিতরণ
- চকরিয়ায় রাতের আধারে গরীব মানুষের ঘরের দরজায় গিয়ে শীতের কম্বল দিয়েছেন ইউএনও
- চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে বার্ষিক পুনর্মিলনী ও অভিষেক
- চকরিয়ায় মাটির টপ সয়েল কেটে বিক্রি : অভিযানে স্কেভেটর ও তিনটি ডাম্পার গাড়ি জব্দ
- সঙ্গী হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত চকরিয়ায়
- ফুলছড়িতে ৪৬ টুকরো গর্জন কাঠ ভর্তিগাড়ী জব্দ আটক-১
পাঠকের মতামত: