মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজারের চকরিযা উপজেলার জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল চকরিয়া নিউজ ডটকমে ‘ পেকুয়ায় কারিগরি প্রশিক্ষণের নামে বিতর্কিত এনজিও ‘রিসডা বাংলাদেশ’র অনিয়ম-দূর্নীতি’’ শীর্ষক একটি বস্তুনিষ্ট ও তথ্যনির্ভর সংবাদ প্রকাশিত হলে পেকয়াসহ পুরো জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রাতে সংবাদটি চকরিয়া নিউজ ডটকমে প্রকাশিত হলে মুহুর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। সংবাদটি প্রকাশের পর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন প্রকল্প ও পেকুয়ায় কারিগরি প্রশিক্ষণের নামে রিসডা বাংলাদেশ’র আরো অনিয়ম-দূর্ণীতির চাঞ্চল্যেকর তথ্য পাওয়া গেছে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের নামে বিতর্কিত এনজিও ‘রিসডা বাংলাদেশ’ কর্তৃক অনিয়ম-দূর্নীতির সংক্রান্ত সংবাদটি দৈনিক ইনানীর ১ম পৃষ্টায় গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়েছে। সংবাদটি প্রকাশের পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উক্ত এনজিওর বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছে বলে বিশ^স্থ্য সূত্রে জানা গেছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বিতর্কিত এনজিও রিসডার কতিপয় কর্মকর্তা সংবাদ প্রকাশের পর পেকুয়ায় কারিগরি প্রশিক্ষণের নামে অনিয়ম-দূর্নীতির গুরুতর ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যাপক দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে। ওই সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তা ২৩ জানুয়ারী দিনব্যাপী দূর্নীতি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন ভূঁয়া কাগজপত্র সৃজনে ব্যস্ত ছিল। এছাড়াও পেকুয়ায় কর্মরত বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছেও ধর্ণা দিচ্ছে রিসডার কর্মকার্তারা।
এদিকে এনজিও রিসডার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২৩ জানুয়ারী ইউনিসেফ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টরের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পেকুয়ার কয়েখজন সচেতন ব্যক্তি। লিখিত অভিযোগে কক্সবাজারের রোঙ্গিা ক্যাম্পসহ পেকুয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে দাতা সংস্থা ইউনিসেফের টাকা লুটপাট বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি ওই বিতর্কিত এনজিওতে ফান্ড প্রদান বন্ধ করার জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌমুহুনী এলাকায় সাকিব-সিহাব ভবনের ২য় তলায় কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে দাতা সংস্থা ইউনিসেফের অর্থায়নে দায়সারা কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে বরাদ্দের সিংহভাগই লুঠে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে রিসডা বাংলাদেশ। দাতা সংস্থা ইউনিসেফ ও সরকারী কোন সংস্থার তদারকী না থাকায় পেকুয়ায় রিসডা বাংলাদেশ যেনতেনভাবে দায়সারা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে।
জানা গেছে, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় বিতর্কিত এনজিও ‘রিসডা বাংলাদেশ’ ইউনিসেফের আর্থিক সহযোগীতায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে টেইলারিং (দর্জি) ও মোবাইল সার্ভিসিং প্রক্ষিনের নামে গত কয়েক মাস পূর্বে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী নামের একটি প্রকল্প চালু করে। দুইটি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে দাতা সংস্থা ও সরকারের নিয়ম মানেননি রিসডা বাংলাদেশ। টেইলারিং (দর্জি) প্রশিক্ষণের জন্য ১২০ জন ছাত্রীকে তারা ভর্তি করিয়েছেন। এখানে ঝরে পড়া দরিদ্র অনগ্রসর ছাত্রীদের ভর্তি করা হয়নি। ভর্তিকৃত অধিকাংশ ছাত্রীই পেকুয়া সদরে অবস্থিত আনোয়ারুল উলুম ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত নিয়মিত ছাত্রী। ৬০ জন ছাত্রীকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেইলারিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রিসডার পেকুয়ার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি কক্ষে সেলাই মেশিন রয়েছে ১২টি। আর ৬০ জন ছাত্রীকে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত নামমাত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ১২ টি সেলাই মেশিন দিয়ে দায়সারা ট্রেনিং দিচ্ছে ওই সংস্থা। প্রতিজন প্রশিক্ষণার্থীকে প্রতি মাসে ৮শত টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হয়। গত তিন মাসের দুই হাজার ৪ শত টাকা করে কিছু প্রশিক্ষণার্থীকে বৃত্তির টাকা প্রদান করা হলেও অধিকাংশ প্রশিক্ষণার্থীকে এখনো বৃত্তির টাকা পরিশোধ করা হয়নি বলে কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থীদের সূত্রে জানা গেছে। বিতর্কিত এনজিও রিসডা কর্মকর্তারা নিয়মিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অবস্থান করে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী তদারকি করেনা। একরামুল হক নামের এক ব্যক্তি টেকনিক্যাল অফিসার পদে পেকুয়ায় নামেমাত্র দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবে রিসডা বাংলাদেশ নামেমাত্র প্রশিক্ষণ সেন্টার খুলে ইউনিসেফের টাকা লুটপাট করছে।
পাঠকের মতামত: