চট্রগ্রাম প্রতিনিধি :::
নগরীতে গভীর রাতে ‘মাতাল অবস্থায়’ হোটেলে ঢুকে পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়ার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন নগর পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহারের কাছে জমা দিয়েছেন।
বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদনটি আগামী রবিবার (১৬ জুলাই) আইজিপি শহীদুল হকের কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার।
তিনি বলেন, কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে এবং এটি আমি হাতে পেয়েছি। এটা আমি যতটুকু দেখেছি তাতে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বেশকিছু তিনি সংঘটিত করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তার যেটুকু স্খলন আছে কিংবা যতটুকু তিনি করেছেন সেই অনুযায়ী তিনি যেন শাস্তি পান তার জন্য আমি সুপারিশ করে এটা পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠাব।
সিএমপি কমিশনার জানান, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাবার পর আইজিপি একজন অতিরিক্ত আইজিপিকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেবেন। তখন অতিরিক্ত আইজিপি অভিযুক্তকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবেন। নোটিশ অনুযায়ী অভিযুক্ত কর্মকর্তা তার জবাব উপস্থাপন করবেন। জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি সন্তুষ্ট হলে বিষয়টি নথিভুক্ত থাকবে। আর সন্তুষ্ট না হলে বিভাগীয় মামলা হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তির চেয়ে সিনিয়র একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত হবে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর লঘু অথবা গুরু দ– দিয়ে অতিরিক্ত আইজিপি মহোদয় বিষয়টি নিষ্পত্তি করবেন। ’
দ– কেমন হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে পুলিশ সদর দপ্তর যদি মনে করে এই কর্মকর্তাকে চাকুরিতে রাখা বিপজ্জনক, তাহলে প্রয়োজনীয় যে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে।
তদন্ত কমিটির সদস্য নগর পুলিশের ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার এবিএম ফয়জুল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ মোট ২৪ জনের বক্তব্য নিয়েছে। প্রত্যেকের বক্তব্য প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। তেরো পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে ভিডিও ফুটেজ থেকে নেয়া ১০টি স্থির ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে। গত ৩ জুলাই গভীর রাতে নগরীর আগ্রাবাদের অভিজাত আবাসিক হোটেল সেন্টমার্টিনে ঢুকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটান আলোচিত–সমালোচিত পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি ওই হোটেলের চারজন কর্মী এবং ডবলমুরিং থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ আলমকে পেটান।
দুই বছর আগে নগরীর সদরঘাটে হোটেল থেকে বিনা অপরাধে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটকের পর মারধর করে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন সদরঘাট থানার সাবেক পরিদর্শক (ওসি) মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া। বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের পর বর্তমানে তিনি নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছেন।
সেদিন যা ঘটেছিল : গত ৩ জুলাই গভীর রাত দেড়টায় ওসি মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার হোটেল সেন্টমার্টিনে যান। আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা হোটেলের চারতলায় ৪১৫ নম্বর কক্ষে অবস্থান করে তিনি মদপান করতে থাকেন। রাত আনুমানিক দুইটার পর আরও মদের অর্ডার দেয়া নিয়ে তার সঙ্গে হোটেলের এক কর্মীর কথা কাটাকাটি হয়। মাইনুল ওই কর্মীকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজের পর মারতে মারতে হোটেলের নিচতলায় অভ্যর্থনা কক্ষে নিয়ে যান। ওসির হাত থেকে সহকর্মীকে রক্ষা করতে এসে মারধরের শিকার হন হোটেলের আরেক কর্মী।
ঘটনা দেখে বাইরে থেকে নিরাপত্তা রক্ষীদের একজন দৌঁড়ে আসেন। ওসি মাইনুল তাকে দেখে পিস্তল বের করে মেরে ফেলার হুমকি দেন এবং চড়–থাপ্পড় দেন। প্রায় ৬০ বছর বয়সী হোটেলের নিরাপত্তা রক্ষীদের প্রধান অভ্যর্থনা ডেস্কের সামনে আসলে তিনিও লাঞ্ছিত হন।
খবর পেয়ে হোটেলের বাইরে থেকে আসা মাইনুলের প্রাইভেট কারের চালক নিয়ে যেতে চাইলে তাকেও গালিগালাজ করেন মাইনুল। তবে বিল পরিশোধ করে মাইনুলকে হোটেল থেকে বের করে নিয়ে যান গাড়িচালক। রাত আনুমানিক তিনটার দিকে ডবলমুরিং থানার এসআই সৈয়দ আলমের নেতৃত্বে একটি টিম হোটেল সেন্টমার্টিনে যায়। তারা হোটেলে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপ্তার বিষয়টি তদারকির জন্য গিয়েছিলেন। এ সময় প্রাইভেট কার নিয়ে ওসি মাইনুল আবারো হোটেলে সামনে আসেন। একজন নিরাপত্তা রক্ষী গিয়ে সৈয়দ আলমকে বলেন, ওসি স্যার এসেছেন। প্রাইভেট কারের ভেতর ডবলমুরিং থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম আছেন ভেবে এসআই সৈয়দ দ্রুত বেরিয়ে যান এবং ওই গাড়ির সামনে দাঁড়ান। গাড়ি থেকে ওসি মাইনুল বের হয়ে এসআই সৈয়দ আলমের শার্টের কলার চেপে ধরে বলেন, ‘তুই উঁকি দিস কেন?’ একথা বলেই এসআইকে চড়–থাপপড় মারা শুরু করেন। সৈয়দ বার বার নিজের পরিচয় দিয়েও ওসি মাইনুলকে নিবৃত্ত করতে পারেননি। মাইনুল তার চাকুরি খাওয়ার হুমকিও দেন।
এসআই সৈয়দ বিষয়টি নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ–কমিশনার (ডিসি) ফারুকুল ইসলামকে ফোন করে জানান। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলের ভিডিওফুটেজ ও হোটেল কর্মকর্তা কর্মচারী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেন। গত ৫ জুলাই নগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করেন। বিষয় জানার পর অভিযোগ তদন্ত করতে নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের অতিরিক্ত উপ–কমিশনার নাজমুল হাসানকে প্রধান ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার এবং গোয়েন্দা পুলিশের একজন পরিদর্শককে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
পাঠকের মতামত: