ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

মাতামুহুরী নদীর দুটি রাবারড্যাম মাটির নিচে চাপা: নেমে গেছে মিঠাপানি, আতঙ্কে কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::   কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা ও রামপুর-পালাকাটা পয়েন্টে নির্মিত রাবারড্যাম দুটির রাবার মাটির নিচে চাপা পড়েছে। এতে কয়েকদিন ধরে চেষ্টা চালানোর পরও ড্যাম দুটির রাবার ফোলানো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় নদীর মিঠাপানি ভাটির দিকে নেমে যাওয়ার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক কৃষক। চলতি শুষ্ক মৌসুমে ইরি-বোরো চাষাবাদের জন্য নদীর মিঠাপানি ধরে রাখতে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্যাম দুটি নির্মাণ করেছিল ইতোপূর্বে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম আসলেই কোনো না কোনো কারণে ড্যাম দুটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় কৃষকদের। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার ড্যাম দুটির রাবার মাটির নিচে চাপা পড়ায় চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার একর জমির চাষাবাদ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

কৃষক জানিয়েছেন, চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর উপর নির্মিত বাঘগুজারা রাবারড্যামের রাবার ব্যাগটি মাটির নিচে চাপা পড়ে গেল বর্ষা মৌসুমে। ড্যাম দুটির এই দুরবস্থার কারণে চলতি ইরি-বোরো মৌসুম শুরু হলেও কৃষক চারা রোপণের কাজ এখনো পর্যন্ত শুরুই করতে পারেননি। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার একর জমির চাষাবাদ।

জানা গেছে, মাতামুহুরী সেচ প্রকল্পের আওতায় কয়েকবছর আগে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঘগুজারা ও রামপুর-পালাকাটা পয়েন্টে নদীর ওপর রাবারড্যাম (ব্যারেজ) দুটি নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ড্যাম দুটি নির্মাণের সময় নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ায় মূলত বার বার অকার্যকর হয়ে পড়ছে ড্যাম দুটি। এনিয়ে কালের কণ্ঠ পত্রিকায় অসংখ্য সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়।

অভিযোগ ওঠেছে, গতবছর জানুয়ারি মাসে বোরো মৌসুমের শুরুতে বাঘগুজারা রাবারড্যামের রাবার ব্যাগ ছিড়ে গেছে এমন অজুহাত দেখিয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড রাবার মেরামতের জন্য সরকারের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ নেন। পরবর্তীতে জরুরিভাবে ড্যামের উভয়পাশে পানি আটকানোর জন্য দুটি অস্থায়ী মাটির বাঁধও নির্মাণ এবং পরে ড্যাম মেরামত কাজ সম্পন্ন করেন। কিন্তু চলতি শুষ্ক মৌসুমেও বাঘগুজারা ড্যামটির রাবার ব্যাগ চাপা পড়ে মাটির নিচে।

কৃষকরা জানান, বাঘগুজারা রাবারড্যামের রাবার ব্যাগ মাটির নিচে চাপা পড়ায় এখনো পর্যন্ত রাবার ফোলাতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। কথা ছিল গেল ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ড্যামের রাবার ফোলানো হবে। এখনও পর্যন্ত ড্যামের রাবার ফোলাতে না পারায় মিঠাপানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। এতে চকরিয়া ও পেকুয়ার কৃষকরা এখনও চাষাবাদের কাজ শুরুই করতে পারেনি। ইতোমধ্যে কৃষকদের অধিকাংশ বীজতলাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেচের অভাবে।

কোনাখালীর কৃষক ছলিম উল্লাহ, বরইতলীর আমির হামজাসহ কৃষকেরা জানান, মাঘ মাসের শুরুতেই বোরো ধানের চারা রোপণকাজ শেষ করতে হয়। এতে ফলনও ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ড্যামের রাবার না ফোলানোর কারণে নদীর মিঠাপানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। এতে দুই উপজেলার কৃষকেরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সরেজমিন বাঘগুজারা রাবারড্যামস্থলে দেখা গেছে, এই ড্যামের চার স্প্যানের মধ্যে তিন স্প্যানের রাবার ব্যাগ মাটির নিচে চাপা পড়ে রয়েছে। এ সময় কথা হয় ড্যাম তদারকের দায়িত্বে থাকা আবদুর রহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গেল বর্যায় ড্যামটির চার স্প্যানের মধ্যে তিন স্প্যানের রাবার ব্যাগ পলিমাটির নিচে চাপা পড়েছে। এ কারণে রাবার ব্যাগগুলো ফুলিয়ে নদীর মিঠাপানি আটকানো যাচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান জানান, বাঘগুজারা ও রামপুর-পালাকাটা পয়েন্টের রাবারড্যাম দুটির রাবার ব্যাগ পলিমাটির নিচে চাপা পড়েছে গেল বর্ষায়। তবে ড্যাম দুটি সচল করতে তারা বেশ তৎপর রয়েছেন। তিনি আশা করছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই ড্যাম দুটির রাবার ব্যাগের ওপর থেকে মাটি অপসারণ করে সচল করা যাবে।

পাঠকের মতামত: