পেকুয়ায় এক ব্যবসায়ীকে আটকিয়ে ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর আদায়ের চেষ্টা করেছে উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক এহতেসামুল হক। গত কয়েকদিন ধরে ব্যবসায়ীকে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিল ছাত্রলীগ সম্পাদক। টাকা না দেয়ায় ওই ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে একাধিকবার হুমকি দেয়। ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে কয়েকবার দেখা করতে বলে। কিন্তু সম্পাদকের কথায় সায় না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে দোকানের একটি কক্ষে প্রায় আধঘন্টা আটকিয়ে রাখে। এ সময় তার কাছ থেকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনশত টাকার একটি ননজুডিশিয়াল অলিখিত ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায়ের চেষ্টা করে।
এদিকে ব্যবাসায়ীকে ছাত্রলীগ সম্পাদক কর্তৃক আটকানোর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পেকুয়া কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের (পেকুয়া বাজার) ব্যবসায়ীরা ওই ঘটনায় প্রতিবাদ মুখর হন। এক পর্যায়ে জিম্মি দশা থেকে উদ্ধারের জন্য তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। মুর্হুতের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ব্যবসায়ীদের রোষানল থেকে বাচতে ছাত্রলীগ পেকুয়া উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক এহতেশামুল হক দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করেন।
খবর পেয়ে পেকুয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে হন্য হয়ে খুঁজছিলেন। এ সময় ফাশিয়াখালী ব্রিজ এলাকায় তার সন্ধ্যান পেলে পুলিশ সেখানে যান। এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে ধাওয়া দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন গত বৃহষ্পতিবার রাত ১০টার দিকে পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ী সদর ইউনিয়নের জালিয়াখালী এলাকার সৌদি প্রবাসি জহিরুল ইসলামের ছেলে মো.সোয়াইবকে বাজার থেকে কথা আছে বলে ডেকে নিয়ে যান উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক এহতেশামুল হক। এ সময় বাজারের পরিস্থান টেইলার্সের একটি কক্ষে তাকে আটকিয়ে রাখে।
ব্যবসায়ী মো.সোয়াইব জানিয়েছেন আমি বাজারে কেনাকাটা করছিলাম। হঠাৎ একটি ছেলে এসে আমাকে কথা আছে বলে পরিস্থান টেইলার্সে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যায়। সেখানে এহতেশামসহ আরো ছয়জন ছেলে ছিল। তারা দরজা বন্ধ করে আমার মুঠোফোন বন্ধ করে ফেলে। পরে একটি ষ্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করে। আমার কাছ থেকে টাকা চায়। ছাত্রলীগ সম্পাদকের নাকি ইদানিং খরচ বেড়ে গেছে। তার একটি সংগঠন আছে। ওই সংগঠনের ছোট ভাই-ব্রাদারকে চালাতে হয়। তাই অনেক টাকার প্রয়োজন তার। তিনি আরো জানায় গত কয়েকদিন ধরে তার মুঠোফোনে ছাত্রলীগ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে দেখা করতে বলে। আমার আতœীয় স্বজন বাজারে চলে আসলে আমি ওইদিন কৌশলে পরিস্থান দোকান থেকে নেমে পড়ি।
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক এহতেশামুল হক এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা জানায় এহতেশাম এক সময় ছাত্র শিবির করত। এখন ছাত্রলীগের নীতি নির্ধারক। সাধারন সম্পাদক পরিচয় দিয়ে এখন তিনি ব্যাপক চাঁদাবাজিতে মেতেছে। খোঁজ নিলে তার বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগ বেরিয়ে আসবে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম.কফিল উদ্দিন জানায় বিষয়টি আমি স্থানীয়দের কাছে শুনেছি। কতটুকু সত্য জানিনা। তবে এ ধরনের ঘটনায় ছাত্রলীগের মান ক্ষুন্ন হয়েছে। উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মো.বারেক জানায় পুলিশ ছাত্রলীগ সম্পাদক এহতেশামকে রাতে খুঁজছিল শুনেছি। তবে কি হয়েছে জানিনা।
উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কাসেম জানায় বিষয়টি আমাকে বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী ফোনে জানিয়েছে। জিম্মি করে টাকা নেয়ার চেষ্টা ছাত্রলীগের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করেছে। পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি.এর সেক্রেটারী ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মো.মিনহাজ উদ্দিন জানায় এহতেশামের সাথে ওই ব্যবসায়ীর সামান্য ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। জোর করে ষ্ট্যাম্প নেয়ার বিষয়টি তিনি অবগত নয় বলে জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: