কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় রাজাখালী ইউনিয়নে এবার ত্রাণের চালও হরিলুট হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতাও পাওয়া গেছে। গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ছোবলে পেকুয়ার মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর সরকারের ত্রাণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মাধ্যমে পেকুয়ার রাজাখালী ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো মাঝে বিতরনের জন্য ৭ মে.টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব চাল গত কয়েক দিন পূর্বে পেকুয়ার পিআইও অফিস থেকে বরাদ্দের ছাড়পত্র নিয়ে চকরিয়া খাদ্য গুদাম থেকে রাজাখালীর বহুল আলোচিত নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর। খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করে ওই চালগুলো রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে রাখা হয়। গতকাল ৩০ মে রাজাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে এসব চাল দায়সারাভাবে বিতরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর এখনো সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুললের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেননি। দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বেই ত্রাণের চাল বিতরনের নামে লুটপাটে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজাখালীর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন।
এ প্রসঙ্গে রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল অভিযোগ করেছেন, নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর তার কাছ থেবে এখনো তার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেননি। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল আরো জানায়, সরকারীভাবে বরাদ্দের ত্রাণের চাল লুট করতেই চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর অতি উৎসাহী হয়ে সরকারী টেক অফিসারের উপস্থিতি ছাড়াই গতকাল ৩০ মে ত্রাণের চাল বিতরণ করেছেন। ছৈয়দ নুর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ত্রাণের চাল বিতরণে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনাটি তিনি সরকারীভাবে তদন্ত দাবী করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজাখালীর ৯টি ওয়ার্ড়ে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ৭ মে. টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও চেয়ারম্যান ও তার লোকজন এসব চাল বিতরনে আশ্রয় নিয়েছেন নানান অনিয়ম দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির। চেয়ারম্যান ইচ্ছেমতো চাল বিতরণ করে বিপুল পরিমান চাল লোপাট করা হয়েছে বলে ইতিমধ্যে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের ২য় তলায় ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর, ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া ও আজম উদ্দিন চাল বিতরণ করছেন। কিন্তু এসময় সরকারীভাবে নিযুক্ত টেক অফিসারের দেখা মেলেনি। এছাড়াও ওই ইউনিনের ইউপি সচিবও চাল বিতরনের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। মাষ্টার রোলে স্বাক্ষর গ্রহণ ছাড়াই যেনতেনভাবে লোকজনের মাঝে গড়ে ৬-৭ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারীভাবে প্রতিজনকে ১০কেজি করে চাল বিতরনের নিয়ম থাকলেও রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য ইউপি সদস্যরা সেটা মানেননি।
রাজাখালী সুন্দরী পাড়া ও বকশিয়া ঘোনা থেকে ত্রানের চাল পাওয়া গৃহবধূ মর্জিনা বেগম, আছমা খাতুন, রেজিয়া বেগম, সফুরা ্েবগম, আবদুল গফুরসহ আরো কয়েকজন লোক অভিযোগ করেছেন, তাদের ৬-৭ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা বলে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন এসব দরিদ্র লোকজন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর বলেন‘ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য তার ইউনিয়নে ৭ মে.টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব চাল আমার ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড়ের প্রায় ৭ হাজার জনকে বিতরণ করা হবে। ১০কেজির পরিবর্তে প্রতিজনকে ৬-৭ কেজি করে কেন দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের সদুত্তর দিতে পারেনি। টেক অফিসার ও ইউপি সচিবের অনুপস্থিতে কেন চাল বিতরণ করা হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর বলেন‘আমিই এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান; সুতরাং আমি যা করি তাই নিয়ম। এর বাইরে আমি আর কিছুই মানিনা।’
পেকুয়ার ইউএনও মো. মারুফুর রশিদ খানের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেক অফিসারের উপস্থিতি ছাড়া ত্রাণের চাল বিতরণ করার নিয়ম নেই। রাজাখালীতে ত্রানের চাল বিতরণে কোন ধরনের অনিয়ম হলে তিনি বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। gupp
পাঠকের মতামত: