ঢাকা,শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

উখিয়া হিসাব রক্ষণ অফিসে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়েনা

উখিয়া প্রতিনিধি ::::durniti

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তার নাম সুগত সেবক বড়–য়া। নামের সাথে সেবক যুক্ত থাকলেও জনগনের সেবক হিসেবে তিনি কোন কাজ করছেন না। যা করছেন তা সেবক নয় অর্থের বিনিময়েই করছেন। উখিয়া উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ঘুষ বাণিজ্যে কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে প্রশাসনের এ গুরুত্বপূর্ণ অফিসটি। এখানে টাকা ছাড়া কোন ফাইল নড়েনা। বর্তমান সরকার ঘোষিত উন্নীত বেতল স্কেলে সরকারী চাকুরীজীবিদের অর্ন্তভূক্ত করার জন্য সার্ভিস বই প্রতি ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে হিসাব রক্ষন অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। তবে কর্মকর্তা সুগত সেবক বড়–য়ার দাবী, তিনি সার্ভিস বই প্রতি ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা নয়, ৫ হাজার টাকা করেই আদায় করছেন।
সরেজমিন উখিয়া হিসাব রক্ষণ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, হিসাব রক্ষণ অফিসের কয়েকজন কর্মচারী অফিসটিকে ঘিরে বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। এ প্রতিবেদক সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অফিসের ভিতরে প্রবেশ করে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সুগত সেবক বড়–য়ার কাছে সার্ভিস বই প্রতি টাকা দেওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে, তিনি উল্টো ধমক দিয়ে বলেন, আপনাকে এগুলো জানার অথরটি কে দিয়েছে। আপনি আমাকে চেনেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এ আমার এক নিকটাত্মীয় সাংবাদিক রয়েছে, সুতারাং আমার বিরুদ্ধে লিখে কোন কাজ হবেনা। আপনারা ভূল শুনেছেন, আমি আড়াই হাজার টাকা নয়, সার্ভিস বই প্রতি ৫ হাজার টাকা করে নিচ্ছি। উখিয়ার অনেক সাংবাদিক প্রতি সপ্তাহ আমার কাছে আসে দেখা করতে। আপনি ও আগামী সপ্তাহে আমার সাথে যোগাযোগ করিয়েন। এখন এগুলো বলিয়েননা। আর যদি আমার বিরুদ্ধে আপনি পত্রিকায় লিখেন তাহলে আমার কিছু হবেনা, পত্রিকা থেকে উল্টো আপনার প্রতিনিধিত্ব চলে যাবে। টাকা না নিলে অফিস খরচ কিভাবে চলবে, তাছাড়া আমি কক্সবাজার থেকে আসি, আমার একটা খরচ আছেনা। আমার ছবি নেন, যা পারেন আমার বিরুদ্ধে লিখেন। এভাবেই কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে গেছেন এ কর্মকর্তা।
অভিযোগ রয়েছে, উখিয়া উপজেলার মনখালী চাকমাপাড়া সরকারী (সদ্য জাতীয়করণকৃত) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছৈয়দ আলম ১৯৮৯ সালে বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। অল্প টাকায় চাকুরী করে পরিবারের ভরন পোষন করতে না পারায় সে ২০০৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে চলে যান। পরবর্তীতে বর্তমান সরকার সরকারী চাকুরীজীবিদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করলে ২০০৯ সালে সে দেশে চলে আসে। দীর্ঘ সময় বিদেশে থাকা কালীন সময়ে তৎকালীন শিক্ষা অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার তার সমস্ত বেতন-ভাতা উত্তোলনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক ছৈয়দ আলম বলেন, উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনের অর্ধেক টাকা দিয়ে আমার বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছি। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল হক বলেন, তখন বেতন-ভাতা কম হওয়ায় এত বেশি কড়াকড়ি ছিলনা। তাই ছৈয়দ আলম বিদেশে থাকা কালীন সময়ে বেতন-ভাতা উত্তোলন সম্ভব হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পালংখালী ইউনিয়নের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করে জানান, উপজেলার ৭৬ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ¯্রাধিক শিক্ষক ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট থেকে উন্œীত বেতন স্কেলে অর্ন্তভূক্ত করার জন্য ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা করে আদায় করেছে হিসাব রক্ষণ অফিসে কর্মকর্তা সুগত সেবক বড়–য়া- ও কর্মচারীরা। তিনি আরো বলেন, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উক্ত অফিসের মাধ্যমে বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে হয় বিধায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মূখ খুলতে পারছেনা। এমন কি সমস্ত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী এই অফিসের কাছে একপ্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের এসব অনিয়ম,দুর্নীতি বন্ধ করতে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল।

পাঠকের মতামত: