মোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও, কক্সবাজার ::
বৃহত্তর ঈদগাঁওর দেড় ডজনাধিক স’মিলে এখনো চোরাই কাঠ চেরাই অব্যাহত রয়েছে। কয়েকটি স’মিলে প্রশাসনের লোক দেখানো ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা আদায় করা হলেও অধিকাংশ স’মিল এর আওতার বাইরে রয়ে গেছে। এতে বনাঞ্চল উজাড়ের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শন ও খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, বৃহত্তর ঈদগাঁওর বিভিন্ন ইউনিয়ন ও প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন দেড় ডজনেরও বেশি অবৈধ স’মিল রয়েছে। এসব স’মিলের নেই কোন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। চোরাই কাঠে ভরপুর থাকে স’মিল ও এর আশপাশ এলাকা। স্থানীয় বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তা, পুলিশ ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে মালিকরা দিব্যি চালাচ্ছে এসব স’মিল। অতীতে বনবিভাগ, বিজিবি, পুলিশ, প্রশাসনে ঘন ঘন যৌথ অভিযানে লক্ষ লক্ষ টাকার অবৈধ ও চোরাই কাঠ উদ্ধার হলেও কয়েক বছর যাবত স্থানীয়ভাবে এ ধরণের দৃশ্য দেখাই যাচ্ছে না। আবার প্রশাসন অভিযান চালালেও স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ তাতে সুযোগমত হস্তক্ষেপ করে। এতে অনেক সময় অভিযানের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। অভিযোগ রয়েছে কাঠ ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে বনবিভাগ অতীতে সুযোগ নিয়েছিল। তারা অন্য প্রশাসনের সহায়তায় বহুবার এখানকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রহীন স’মিল গুলোতে অতীতে অভিযান চালিয়ে লাখ লাখ টাকার কাঠ ও স’মিল জব্দ করে ব্যবসায়ী ও স’মিল মালিককে পথে বসিয়েছে। বনবিভাগের সাথে যেসব স’মিল মালিক ও কাঠ ব্যবসায়ীদের টাকার সম্পর্ক ও ঘনিষ্টতা রয়েছে সেসব স’মিল ও কাঠ ব্যবসায়ীদের কাঠের স্তুপে হানা দেয়া হত না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদগাঁওর ২ শতাধিক ফানির্চার দোকানদারদের সাথে বনবিভাগের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক অর্থ লেনদেনের ব্যাপার রয়েছে। টাকা দেয়া বন্ধ করলেই বন কর্তৃপক্ষ অভিযানের নামে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী জানান, পুলিশ ও বনবিভাগের অবৈধ টাকা দাবীর কারণে তারা ঠিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছেন না। একদিকে কাঠের উর্ধ্বমূল্য অন্যদিকে দক্ষ শ্রমিক সংকট এ নিয়ে তাদেরকে কোনমতে চালাতে হচ্ছে ফার্নিচার ব্যবসা। অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর প্রশাসনের স’মিল বিরোধী ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালিত হলেও তা নিয়ে এলাকায় চলছে নানা কথাবার্তা। মাত্র ৪টি স’মিলে লোক দেখানো জরিমানা করা হলেও অপরাপর স’মিল মালিকরা পার পেয়ে যায়। বিজ্ঞজনরা বলছেন, যেখানে দেড় ডজনেরও বেশি করাত কল রয়েছে সেখানে মাত্র ৪টিতে অভিযান চালানো রহস্যজনক বটে। বনাঞ্চল উজাড় বা কাঠ নিধনের জন্য কেবল এ ৪টি স’মিল কর্তৃপক্ষই কি দায়ী? উল্লেখ্য, ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় ঈদগাঁও বাজারের ৪টি স’মিলে ভ্রাম্যমান আদালতের আকষ্মিক অভিযান পরিচালিত হয়। স’মিলগুলোর মালিক হচ্ছে হুমায়ুন, নইমুদ্দীন, আবুল হোসেন ও কামাল সওদাগর। অভিযানের সময় এসব স’মিল মালিকদের নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা হারে জরিমানা আদায় করা হয়। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযানটি পরিচালিত হয়। সহযোগিতায় ছিল ঈদগাঁও পুলিশ। অভিযানে উত্তর বনবিভাগের মেহেরঘোনা রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তারা অংশ নেন।
পাঠকের মতামত: