ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মগনামায় আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি: শত শত মানুষ ঘরছাড়া

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::  কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন মগনামায় সম্প্রতি সময়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। আইন শৃঙ্খলা অবনতির ফলে মগনামা ইউনিয়নের বাসিন্দারা চরম আতংকে ভূগছে। আতংকিত হয়ে ইতিমধ্যে অনেক মানুষ এলাকা ছাড়া হয়ে অন্যত্র বসবাস করছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটনায় খুব একটা শান্তিতে নেই মগনামার বাসিন্দারা। এলাকায় আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মগনামা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় সময় সংঘর্ষ-মারামারি হয়, মামলা হয়। এচাড়াও মগনামার বিভিন্ন গ্রামের কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতও আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্টপোষকতায় রয়েছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী। মগনামায় মাদক ব্যবসায়ীদের উৎপাতও বেড়েছে। মগনামা ঘাট কেন্দ্রীক চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সর্দার নুরুল আলম প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবস্থান করে দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবার কারবার। অপরদিকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সেবন করে মগনামার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ধ্বংসের পথে। চুরি-ছিনতাইও বেড়েছে। গ্রেফতারী পরোয়ানা নিয়ে কিছু অপরাধী মগনামার সর্বত্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মগনামার অপরাধী চক্র এলাকার কিছু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবস্থান করে নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংগঠিত করলেও তারা বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত চার দিনের ব্যবধানে গণিমতের মালের মতো মগনামার ব্যাঙ্গল ঘোনার মাছ হরিলুট, ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই ও মামাতো ভাইয়ের উপর বর্বর হামলা করে ১০ লাখ ছিনতাই, মুহুরী পাড়া গ্রামবাসীদের উপর সন্ত্রাসীদের ন্যাক্করজনক হামলা, মুহুরী পাড়া মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে পেকুয়া থানা পুলিশের উপর হামলা, নুন্যার পাড়া গ্রামে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মকুছদ আহমদের পরিবারের উপর বেপরোয়া হামলা, মগনামা ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ির সড়কের পাশে অবস্থিত মগনামা আদর্শ শিক্ষা নিকেতনে দূর্র্ধর্ষ চুরিসহ আরো নানা কারণে মগনামার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে পেকুয়া থানায় পৃথক পৃথক দুইটি মামলা রেকর্ড করা হযেছে। মামলা রেকর্ড এর মগনামার মুহুরী পাড়া গ্রাম থেকে গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে গেছে শত শত নারী পুরুষ।

ঘটনার বিবরনে জানা গেছে, গত ২৪ আগষ্ট সকাল ৭ টার দিকে মগনামার বেঙ্গল ঘোনার বিপুল পরিমান মাছ লুট করা হয়। মগনামা আফজলিয়ায পাড়া গ্রাামের বাসিন্দা সোনাইয়া নামের এক দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে এসব মাছ লুুট করা হয়েছে বলে প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে। মাছ লুটের ১ ঘন্টা পর মগনামার ইউপি চেয়ারম্যানে ছোট ভাই ও চকরিয়া সরকারী হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট এনায়েত উল্লাহ চৌধুরী ও তার মামাতো ভাই আরফাত উদ্দিন মোটর সাইকেল যোগে পেকুয়ার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথিমধ্যে মগনামা বাজার পাড়া সড়কে মুহুরী পাড়া গ্রামের একদল সন্ত্রাসী তাদের উপর বর্বর হামলা করে। এসময় আরফাতের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই করে নেন হামলাকারীরা। পরে এনায়তে উল্লাহ ও আলফাতকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে পেকুয়া সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হলে চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়। হামলাকারীরা এনায়েতের দুই চোখ উপড়ে ফেলার জন্যও চেষ্টা করে।

স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যানের দুই ভাইয়ের উপর হামলার ঘটনার মগনামা আফজলিয়াপাড়া, মৌলভী পাড়া, মাঝির পাড়া, মিয়াজি পাড়া থেকে চেয়ারম্যানের কিছু অনুসারী মগনামা মুহুরী পাড়া গ্রামে গিয়ে হামলার চেষ্টা চালায়। অপরদিকে মগনামা মুহুরী পাড়া গ্রামের একদল সন্ত্রাসী জড়ো হয়ে মগনামার চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমের বাড়ি-ঘরে হামলার চেষ্টা চালায়। ঘটনার দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকাল ১০ টার দিকে পেকুয়া থানার একদল পুলিশ সদস্য মগনামা মুহুরী পাড়া গ্রামে যায়। এসময় পুলিশ নাছির উদ্দিন বাদশা নামের এক সওদাগরকে আটক করে। পুলিশের কাছ থেকে নাছিরকে ছাড়িয়ে নেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নাজেম উদ্দিন নাজু। এ অভিযোগে নাজুকে আটক করে পুলিশ। তবে নাছির উদ্দিন বাদশা সওদাগর পালিয়ে যায়।

অপরদিকে মগনামা মহুরী পাড়া গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে পুলিশের উপর হামলা করার উসকানিমূলক ঘোষনা দেয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক। এরপর মগনামা মুহুরী পাড়া গ্রামের শত শত নারী পুরুষ বাড়ী-ঘর থেকে বের হয়ে পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়। দুপুরে কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামন সরেজমিন মগনামা মুহুরী পাড়া গ্রাম পরিদর্শন করে সবাইকে শান্ত থাকতে বলেন এবং তিনি গ্রামবাসীদের বিভিন্ন অভিযোগ শুনেন।

জানা যায়, মগনামা মুহুরী পাড়া গ্রামে সংঘর্ষ চলাকলে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র ও ধারালো দা কিরি নিয়ে মগনামা নুন্যার পাড়া গ্রামের আহমদ কবির প্রকাশ পোড়া বদর বাড়ীতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের চেষ্টা চালায়। এসময় সন্ত্রাসীদের হামলায় আহমদ কবিরের এক মেয়ে গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে নুন্যার পাড়া গ্রামের শত শত নারী পুরুষ একযোগে এগিয়ে এসে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে। মগনামার চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরীর বাড়ির প্রবেশ সড়কের পাশে অবস্থিত মগনামা আদর্শ শিক্ষা নিকেতনে ২৪ আগস্ট রাতের আধারে দূর্ধর্ষ চুরি সংগঠিত হয়েছে। দরজার তালা ও বেড়া কেটে চোরের দল স্কুলের ভিতরে প্রবেশ করে ৮টি বৈদ্যুতিক পাকা, ৮টি সিসি ক্যামেরা, চেয়ার-টেবিলসহ অন্তত লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

মগনামা আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের পরিচালক আশেক বিন জলিল জানান, ২৪ আগষ্ট মুহুরী পাড়ায় সংগঠিত ঘটনায় থাকে অন্যায়ভাবে মামলার আসামী করা হয়েছে। এরপর রাতের আধারে তার স্কুলের মালপত্র পরিকল্পিতভাবে লুটপাট করা হয়েছে।

জানা যায়, মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে মগনামা মুহুরী পাড়ায় পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় থানার এস আই খায়ের উদ্দিন ভূঁইয়া বাদী হয়ে পেকুয়া উপজেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি মমতাজুল ইসলামকে প্রধান আসামী করে তিনিসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৮০/৯০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে থানায় বেআইনী জনতা গঠন করত: সরকারী কাজে বাধাদান পুলিশের উপর করে আক্রমণ, অপরাধমূলক বল প্রয়োগ, সাধারান ও গুরুতর জখম, চুরি ও হুকুম প্রদানের অপরাধে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং পেকুয়া থানা ১২, তাং ২৫-০৮-২০২১ইং।

মুহুরী পাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, পুলিশের দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামী ছাত্রলীগ নেতা গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় অবস্থান করছে। ঘটনার সময় তিনি ও মামলার আসামী সাংবাদিক হাসেমের দুই স্কুল/কলেজ পড়ুয়া ছেলে চট্টগ্রামে ছিলেন। এরপরেও তাদের আসামী করা হয়েছে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মমতাজুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনার সময় এলাকার বাইরে ছিলেন। তিনি ঢাকায় আছেন। এরপরেও তাকে মামলার আসামী করা হয়েছে।

পেকুয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, মগনামার চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমের ছোট ভাই ও চকরিয়া হাসপাতালের ফার্মাসিষ্ট এনায়েত উল্লাহ চৌধুরী (৩২) কে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে পেকুয়া থানায় মামলা হয়েছে। যার মামলা নং ১৩ ও জিআর ৯৮/২১ইং।

পেকুয়া থানার ওসি সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, মগনামা মুহুরী পাড়া গ্রামে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। মামলার আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা করছে।

পাঠকের মতামত: