ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

কারাগারেই বিয়ে করানোর রায়

স্ত্রী’র স্বীকৃতি পেলেন সেলিনা, শিশু পেলো বাবার পরিচয় চকরিয়ায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: অবশেষে বিজ্ঞ আদালতের রায়ে কক্সবাজারের চকরিয়ায় সেলিনা বেগম নামের এক নারী পেলেন স্ত্রী’র স্বীকৃতি। আর তাঁর তিনমাসের (শিশু সন্তান) ছেলে পেলো বাবার পরিচয়।

১৯ জুলাই বিকেলে চকরিয়া সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজীব কুমার দেব এক মামলায় অভিযুক্ত ও বিবাদীকে কারাগারেই বিয়ে করানোর রায় দেন।

চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের একটি যুগান্তকারী আদেশের ফলে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি সংসার। একই আদেশে সেলিনা বেগম নামের অসহায় মহিলা স্ত্রীর স্বীকৃতি এবং শারিরিক সম্পর্কের ফলে জন্ম নেওয়া তিনমাসের সন্তানও পেতে যাচ্ছে পিতৃ পরিচয়। গতকাল সোমবার চকরিয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রাজীব কুমার দেব কর্তৃক দেওয়া হয়েছে যুগান্তকারী এই আদেশ।

একইসাথে এই আদেশে আসামী দিদারুলকে জামিন দিয়ে কক্সবাজার জেল কর্তৃপক্ষকে (জেল সুপার) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জেল সুপারের উপস্থিতিতে কারাগারে বিয়ের আয়োজন করে আসামী দিদারুল ইসলাম প্রকাশ শকুর সাথে মামলার বাদী সেলিনা বেগমকে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ে পড়াতে। এর পর দিদারুলকে মুক্তি দিয়ে আদালতকে বিষয়টি অবহিত করতে।

মামলার বাদী ভুক্তভোগী সেলিনা বেগমের কৌশলী চকরিয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের আইনজীবী মো. মিজবাহ উদ্দিন এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বাদীর আইনজীবী মিজবাহ উদ্দিন আরও জানান, চকরিয়ার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঢেমুশিয়া বাজার পাড়ার আকতার আহমদের কন্যা সেলিনা বেগমকে (২৫) বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে পালিয়ে যায় একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খাসপাড়ার মোহাম্মদ কালুর ছেলে দিদারুল ইসলাম প্রকাশ শকু (৩৫)। এর পর চকরিয়ার বাটাখালী এলাকায় জনৈক গিয়াস উদ্দিনের ভাড়া বাসায় তুলে পাঁচমাস ধরে শারিরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। এইসময়ে সেলিনা বিয়ের কাবিননামা সম্পাদন করতে চাপ দেয় দিদারুলকে। কিন্তু সচতুর দিদারুল ভাড়া বাসায় সেলিনাকে ফেলে নিরুদ্দেশ হয়ে পড়ে।

এই অবস্থায় সেলিনা স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে ২০২০ সালে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ মামলা করেন (সিআর-৮১৯/২০২০, দণ্ডবিধি-৪৯৩) উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। বিজ্ঞ বিচারক সেলিনার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে উঠে আসে সেলিনা এবং দিদারুলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে শারিরিক সম্পর্ক হয়। এতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সেলিনা বেগম। বিষয়টি আদালত আমলে নিয়ে আসামী দিদারুল ইসলাম প্রকাশ শকুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করলে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। বর্তমানে দিদারুল ইসলাম কক্সবাজার কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

আসামী দিদারুল ইসলাম প্রকাশ শকুর পক্ষের আইনজীবী মো. মুজিবুল হকও এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজ আসামীর জামিন আবেদন করা হয় আদালতে। আসামী জামিন পেলে পলাতক হওয়ার আশঙ্কায় শুনানীর সময় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার জেল সুপারের সাথে সংযুক্ত হন এবং আসামী দিদারুলকে উপস্থিত করিয়ে বিজ্ঞ বিচারক তার স্বীকারোক্তি এবং সম্মতি নেন। এ সময় আসামী দিদারুল আদালতকে কথা দেন সেলিনাকে বিয়ে করার।’

আইনজীবী মুজিবুল হক আরও বলেন, ‘এসব শর্তে আসামীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হয় এবং জেল সুপারের উপস্থিতিতে কারাগারের ভেতর দুইজনের মধ্যে ধর্মীয় রীতিমতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে আদালতকে অবহিত করারও আদেশ দেন আদালত।’

মামলার বাদী ভুক্তভোগী সেলিনা বেগম আদালতের এই আদেশের ফলে মহাখুশি এখন। তিনি সোমবার রাতে বলেন, ‘আমি আদালত এবং বিচারকের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি কল্পনাও করিনি অল্প সময়ের মধ্যে এই ধরণের আদেশ পেয়ে যাবো। আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের মহানুভবতার কারণে আমি স্ত্রীর স্বীকৃতি এবং আমার তিনমাসের পুত্র মো. তামিম পিতৃ পরিচয় পেয়ে গেছে। এজন্য আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে দুই হাত তুলে দোয়া করেছি বিচারকের জন্য।’

পাঠকের মতামত: