ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় গাঁজা বিক্রির টাকা না পেয়ে মাদ্রাসা ছাত্রকে অপহরণ

পেকুয়া প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের সীমান্ত ব্রীজ থেকে হাসিবু্ল ইসলাম (১৭) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে অপহরণের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে।

অপহরণের শিকার মাদ্রাসা ছাত্র টৈটং ইউপির পন্ডিত পাড়া এলাকার ওসমাণ গণির ছেলে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে টৈটং সীমান্ত ব্রীজ থেকে তাকে অপহরণ করে চট্টগ্রামের আনোয়ারার দিকে নিয়ে গেছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে পেকুয়া থানার পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেছে।

অভিযোগে জানা যায়, চট্টগ্রামস্থ মইজ্যারটেক এলাকা থেকে সকালে বাঁশখালীর পুঁইছড়ির মনির নামে এক সিএনজি চালকের গাড়িতে ওঠেন এক মেয়ে ও এক ছেলে। সাথে ছিল বস্তাবর্তি গাঁজা। রিজার্ভ ভাড়া করে তারা টৈটংয়ের সীমান্ত ব্রীজে আসেন। সীমান্ত ব্রীজে নুর মুহাম্মদ নামে এক সিএনজি চালককে সাথে নিয়ে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন টৈটং ইউপির পন্ডিত পাড়া এলাকার আবুল বশর কালুর ছেলে গাঁজা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ও আবদুল খালেক।

ওই সময় তারা গাঁজাবর্তি বস্তাটি গাড়ি পরিবর্তন করে টৈটংয়ের বটতলি মাদ্রাসা পাড়াস্থ গাঁজা ব্যবসায়ী সাইফুলের বোন রুজিনার বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই সময় সাইফুল মাদ্রাসা ছাত্র হাসিবুলকেও তার বোনের বাড়িতে ডেকে নেন। তাদের সাথে ছিলেন আনোয়ারা থেকে আসা গাঁজা ব্যবসায়ীরা। এক পর্যায়ে টৈটংয়ের গাঁজা ব্যবসায়ী সাইফুল গাঁজাবর্তি বস্তাটি নিজের কব্জায় নিয়ে সরে পড়েন। গাঁজা বিক্রির টাকা না পেয়ে আনোয়ারা ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে মাদ্রাসা ছাত্রকে অপহরণ করে আনোয়ারায় নিয়ে যায়।

এদিকে টৈটংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী নিরহ মাদ্রাসা ছাত্র হাসিবুলকে উদ্ধার করার জন্য দুপুর থেকেই চেষ্টায় নামেন। একদল চৌকিদার নিয়ে সাইফুলের বাড়িতে গিয়ে বস্তাবর্তি গাঁজা ফেরত দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে সাইফুল ও তার পিতা কালুর নেতৃত্বে একদল গাঁজা ব্যবসায়ী তাদের উপর হামলার চেষ্টা করে। তাদের বেপরোয়া আচরণে সাবেক চেয়ারম্যান জাহেদ সহ চৌকিদারেরা ফেরত আসেন।

অপহরণের শিকার হাসিবুলের ভাই রাকিব বলেন, তার ভাই মাদ্রাসা ছাত্র। কোন ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত নয়। কিন্তু আনোয়ারার গাঁজা ব্যবসায়ীরা সাইফুলকে না পেয়ে তার ভাইকে অপহরণ করে চট্টগ্রামের দিকে নিয়ে গেছে। ভাইয়ের মোবাইল থেকে ফোন দিয়ে দেড় লাখ টাকা দাবী করছেন। ২য়বার ফোন দিয়ে বলছেন গাঁজাবর্তি বস্তাটি সাইফুলের কাজ থেকে উদ্ধার করে আবদুল খালেক বরাবর জমা দিলে হাসিবকে ছেড়ে দিবেন।

এ ঘটনার পরপরই পেকুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর পেকুয়া থানার এএসআই সবুজের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেছে।

টৈটং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম বলেন, কালু ও তার ছেলে সাইফুল গাঁজা ব্যবসায়ী। তারা এলাকাটিকে মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। গাঁজা ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারায় অমিল হওয়ায় নিরহ এক ছাত্রকে অপহরণ করেছে। সাইফুলকে স্থানীয়রা প্রথমে ধরে আমার বরাবর নিয়ে আসলে তিনি জানান গাঁজার বস্তাটি তার পিতার কাছে রক্ষিত রয়েছে। তার পিতার কথায় বিশ্বাস করে সাইফুলকে ছেড়ে দেয়ার পর গাঁজার বস্তাটি সরিয়ে রাখেন। আমি গ্রাম পুলিশ নিয়ে তাদের বাড়িতে গেলে কালুর পরিবার আমাদের উপর হামলার চেষ্টা করে। আমি বলেছি গাঁজার বস্তাটি হাজির করলে নিরহ ছেলেটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। তারপরও সম্ভব না হওয়ায় থানায় ঘটনাটি অবগত করা হয়। সাইফুল, আবদুল খালেক ও আনোয়ারার গাঁজা ব্যবসায়ীরা নিরহ ছেলে হাসিবুলকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবী করছেন। প্রশাসন দ্রুত কালুকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মাদ্রাসা ছাত্র হাসিবকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে করছি।

পেকুয়া থানার ওসি মুহাম্মদ সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, এমন অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেছে। যারাই দোষী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: