ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

সামান্য বৃষ্টিতে কোমর পানি বার্মেজ মার্কেটে

ভাল নেই কক্সবাজার পৌরবাসী

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: মোটেই ভাল যাচ্ছে না কক্সবাজার পৌরবাসীর দিনকাল। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক নিয়ে অবর্ণনীয় দূর্ভোগে রয়েছে জনসাধারণ। খোঁড়াখুড়ির পর সংস্কারের জন্য রাখা হয়েছে নালাগুলো। বর্ষার শুরুতেই নালাগুলো এখন টইটুম্বুর। নালায় জমা ময়লা-আবর্জনাগুলো এখন শহরবাসীর গলার কাঁটা। সড়কের কাদা ও নালার ময়লা পানি মিশে গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে প্রতিটি সড়ক ও উপসড়ক।

এই জলাবদ্ধতার কারণে ঘুম হারাম এখন শহরবাসীর। বাড়ছে রোগ-ব্যাধি। ছড়াচ্ছে ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও পানিবাহিত রোগ সহ নানান ব্যাধি। মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ইতিমধ্যে মাস্টার প্ল্যান অনুসরণ না করায় চলমান উন্নয়ন কাজে ধীরগতি নেমে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ।

বৌদ্ধ মন্দির সড়কের শামসুল হক নামের এক ব্যক্তি জানান, গত ৬ জুন সিটি হাসপাতালের সামনের নালায় দীর্ঘদিন জমে থাকা পঁচা-দুর্গন্ধ ময়লা পানি সরায় কর্তৃপক্ষ। জমে থাকা পঁচা দুর্গন্ধ পানিগুলো কী যে বিশ্রি গন্ধ তা বলে বোঝানো যাবে না। ওই পানিগুলো কোন রকম ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করেই সরাসরি ফেলানো হয় রাস্তার উপর। তার উপর চালিয়ে যাচ্ছে যানবাহন। বুঝতেই পারছেন; কাদাগুলো আর কাদা নেই। এগুলোর প্রকট ভ্যাপসা গন্ধে বাসা-বাড়িতে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।

বৈদ্যঘোনা এলাকার নুর নবি নামে এক ব্যক্তি জানান, এক পসলা বৃষ্টিতে ডুবে থাকে বৈদ্যঘোনা ও ঘোনার পাড়ার মোড়। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির পানিতেই ময়লায় ভরপুর হয়ে যায় এখানে। রাস্তার উপর জমা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। আর এখান থেকেই ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে হচ্ছে। তার উপর পোকা-মাকড়ের কারণে চলাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়ছে এসব পোকা-মাকড়। মশার বংশবিস্তারও বেড়েছে কয়েকগুণ। এতো পোকা-মাকড় বংশ বিস্তার করেছে যে; স্প্রে করেও বিতাড়ন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রায় সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান সড়কের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ প্রতিটি সড়ক এখন মিনি পুকুরের মতো মনে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়ে রাখা ড্রেনের মাটিগুলো এখনো সরানো হয়নি। সংস্কারের জন্য খোঁড়া নালার পানিগুলো জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। কালো দুর্গন্ধযুক্ত পানি থেকে উড়ছে পোকা-মাকড়।

টেকপাড়ার সাইফুল আলম নামের এক ব্যক্তি জানান, টেকপাড়ার প্রতিটি সড়ক হাঁটু পরিমাণ কাদা। তার উপর জলাবদ্ধতা। এসব জলাবদ্ধে মিশ্রিত হচ্ছে বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা, বিভিন্ন মরা প্রাণি। ফলে কী পরিমাণ যে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তা বোঝানোর মতো নয়। এই এক অন্যরকম শহর। এতো বৎসর জলাবদ্ধতা দেখেছি কিন্তু এই বৎসরের জলাবদ্ধতা অন্যরকম।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের একাধিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জানান, জলাবদ্ধতায় বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। ময়লা-দুর্গন্ধ জলাবদ্ধতার কারণে ঘটতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয়। শিশু এমনকি নারী-পুরুষরাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে পঁচা দুর্গন্ধের কারণে। এসময় চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে।

পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের সংক্রমন ঘটতে পারে পঁচা-দুর্গন্ধ ময়লাযুক্ত জলাবদ্ধতার কারণে। সবচেয়ে বেশি দ্র‍ুত বংশবিস্তার করতে পারে মশার। যার কারণে শিশু সহ নানান বয়ো-বৃদ্ধদের ম্যালেরিয়া রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের কারণে বাড়তে পারে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি। দুগর্ন্ধের কারণে পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিতে পারে।
এদিকে শহরে চলমান উন্নয়ন কাজের ধীরগতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দরা। তারা মাস্টার প্ল্যান অনুসরণ না করায় এমন দূর্ভোগ বলে জানিয়েছেন। কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দরা জানান, কক্সবাজার শহরে সড়ক ও ড্রেইনসহ চলমান উন্নয়ন কাজে ধীরগেিত স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলে প্রতিদিন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মাস্টার প্ল্যান অনুসরণ না করে এভাবে কাজ করে দূর্ভোগ তৈরি করায় এনিয়ে কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গতকাল ১৬ জুন সন্ধ্যায় নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ.ন.ম হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এই উদ্বেগ জানানো হয়।

পাঠকের মতামত: