ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

“সততার কপালে ঢিল”

:: এম.আর মাহামুদ ::

গল্পটি কাল্পনিক হলেও বাস্তবতার সাথে প্রচুর মিল রয়েছে। গল্পটির মূল আলোচ্য বিষয় বেশি সৎ হলে কপালে যে ঢিল পড়ে তার একটি জলন্ত প্রমাণ। কলকাতার সিটি কর্পোরেশন এলাকার হরিজন সম্প্রদায়ের এক যুবক চরম দারিদ্রতার মধ্যেও লেখাপড়া করে এস.এস.সি পাশ করে। পরে পরিবারের ঘানি টানতে গিয়ে তার একটি চাকুরীর প্রয়োজন। পরে বাধ্য হয়ে জীবিকার তাড়নায় ছোট মানের চাকুরীর জন্য অনেক দপ্তরে দৌঁড়াদৌঁড়ি করার পরও কোন সফলতার মুখ দেখেনি। পরে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে গিয়ে তার পরিবারের দুঃখের কথা বর্ণনা করে একটি ছোট মানের চাকুরী চাইলেন। মেয়র মহোদয় তাকে বললেন সিটি কর্পোরেশনে মানসম্মত কোন পদ খালি নেই। শুধুমাত্র বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের জন্য একজন কর্মীর পদ খালি রয়েছে। তুমি যদি রাজি হও সে পদে চাকুরী করতে পার। তখন অসহায় ওই বেকার যুবক মেয়র মহোদয়কে সম্মতি জানিয়ে বললেন আমি সে পদে চাকুরী করতে ইচ্ছুক। তখন মেয়র মহোদয় তাকে সে পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিলেন। এসএসসি পাশ করা সে যুবক বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। উদ্দেশ্য ছিল তার চাকুরীটা স্থায়ী হবে। সে এক বছরের মধ্যে সিটি কর্পোরেশন এলাকার সব কুকুর নিধন করেছে। পরে মেয়র মহোদয়ের কাছে জানালেন হুজুর আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছি। সিটি কর্পোরেশন বর্তমানে কোন বেওয়ারিশ কুকুর নেই। এখন আমার চাকুরীটা স্থায়ী করার ব্যবস্থা করুন। তখন মেয়র মহোদয় বললেন, তুমি প্রতিদিন কয়টি কুকুর নিধন করেছ? ওই যুবক বলল ২০-২২টি। মেয়র সাহেব বললেন প্রতিদিন একটি করে কুকুর নিধন করলে তোমার চাকুরীটা স্থায়ী করা যেত। এখন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোন কুকুর না থাকার কারণে তোমার চাকুরীটা স্থায়ী করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি হিসাব শাখায় গিয়ে তোমার পাওনা বেতন নিয়ে চলে যেতে পার। হতদরিদ্র হরিজন সম্প্রদায়ের বেকার যুবকটি এক বছর চাকুরী করে রিক্তহস্তে চাকুরী ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় মেয়র মহোদয়কে একটি কথায় বললেন ‘হায়রে সততার কারণে আমার কপালে চাকুরী হারানোর ঢিলটা পড়ল’। হয়তো প্রতিদিন একটি করে কুকুর নিধন করলে আমার এ পরিণতি হত না। সমাজের সব ক্ষেত্রে বর্তমানে এমন অবস্থাই চলছে। তাই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করাও বিপদ।

পাঠকের মতামত: