ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রচন্ড খরতাপে পুড়ছে মানুষ: বাড়ছে রোগ ব্যধি ও লোডশেডিং

eeeeeফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার থেকে ::

প্রচন্ড খরতাপে পুড়ছে শিক্ষার্থীরা। একই সাথে গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং। মৌসুমী রোগ ব্যধি ও ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। ফলে হাসপাতাল ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের চেম্বারে তিল ধরণের ঠাঁই নেই। অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজার বিদুৎ অফিস নগদ উৎকোচে জেলার আলোচিত টমটম গ্যারেজ, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের গোয়াল ঘরসহ অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন স্থানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সহ হরেক অপকর্মের সাথে জড়িত থাকলেও রাত দিন ২৪ ঘন্টায় অগনিত বার লোডশেডিং করে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এঅবস্থায় বিদ্যুতের এমন বিমাতাসূলভ আচরণই চরম অমানবিক। শুধু গরম ও ঋতু পরিবর্তন জনিত কারণেও এ অবস্থাটি ক্রমশ প্রকট আকার ধারণ করছে। এদিকে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন আছে তবুও বর্তমান পরিস্থিতিতে মর্নিং শিফট স্কুল চালু করছে না কক্সবাজারের শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রানালয় এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপন দেওয়া আছে বিশেষ পরিস্থিতিতে সকাল ৭ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২ টা অথবা সাড়ে ৭ টা থেকে ১ টা এবং ৮ টা থেকে দুপুর দেড় টা পর্যন্ত মর্নিং শ্ফিট স্কুল কাযক্রম চালু করা যেতে পারে। স্থানিয় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন।

কিন্তু এবার স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ গরম পড়লেও শিক্ষা কর্মকর্তারা সে আদেশ অনুসরন করেননি। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত লেখাপড়ার চরম ব্যাঘাত ঘটছে। সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত এক নাগাড়ে প্রচন্ড গরমের মধ্যে স্কুল করতে গিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কাহিল অবস্থার মধ্যে পড়ছে। অনেক জায়গায় শিক্ষার্থী অজ্ঞান হওয়ার মত ঘটনাও ঘটছে। কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল হক বলেন, দেশে এখন স্বরণ কালের সবচেয়ে বেশি গরম পড়ছে। এর ফলে আমরা বড়রাও রুমে বসে থাকতে পারছি না। সেখানে কোমল মতি শিশুরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রুমে বসে ক্লাস করছে তারা কতটুকু মানসিকতা ঠিক রাখতে পারবে ? তার উপর স্কুলে অনেক শ্রেনী কক্ষে পর্যপ্ত পাখা নেই তাই অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস রুমে বসতে চায় না। অনেকে স্কুলেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আমার মনে হয় স্কুল মর্নিং শ্ফিট করতে পারলে খুবই ভাল হতো। খুরুশকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম জাবের বলেন, গরমের কারনে এমনিতেই স্কুলে শিক্ষার্থী আসা কমে গেছে। তার উপর টিফিন ছুটির পর আরো কমে যায়। কারণ বাচ্চারা আর বসে থাকতে পারে না। কিছু মেয়ে আছে অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা হয়ে যায়। আর ২/৩ টা বাজলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বেঞ্চের উপর ঘুমিয়ে পড়ে। অনেক অভিভাবক বাচ্চাদের ছুটি নিতে চাইলে কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমাদের কিছুই করার নেই। যদি মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন দিয়ে থাকে তাহলে এর চেয়ে বিশেষ পরিস্থিতি আর কি হতে পারে। জরুরী ভিত্তিতে সব স্কুল মর্নিং শিফট করা দরকার। শহরের আমেনা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রেহেনা বেগম বলেন, আমাদের ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ৯৫ জনের মত শিক্ষার্থী। এক বেঞ্চে ৫ জন করেও বসে। এই প্রচন্ড গরমে তারা হাপিয়ে উঠে। রুমে ফ্যানও নাই তাই অনেকে ঘেমে গিয়ে চরম খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। মোট কথা এই গরমে এত দীর্ঘ সময় স্কুলে বসে থেকে আমার মনে হয়না মানসম্মত লেখাপড়া আদায় হবে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা করা দরকার। যদি সকাল ৮ থেকে দেড় পর্যন্ত স্কুল হয় তাহলে সবার জন্য খুবই ভাল হবে। আলাপকালে বাংলাবাজার ছুরুতিয়া মাদ্রাসার ১০ শ্রেনীর এক ছাত্রী বলেন, আমাদের ক্লাস রুমটি উপরে টিন যার ফলে কি পরিমাণ গরম পড়ে আমি বলে বুঝাতে পারবো না। এছাড়া আমাদের মাদ্রাসায় মেয়েদের মুখের নেকাব খোলার নিয়ম নাই বোরকা তো অনেক দূরের কথা। তাহলে বুঝতেই পারছেন আমরা কিসের মধ্যে আছি। অনেক মেয়ে গরম সহ্য করতে না পেরে নিরবে কান্না করে। আমাদের যদি অন্তত মুখের নেকাব খোলার ব্যবস্থাও হয় তাহলে অনেক উপকার হতো। আমি যদি ঠিক মত নিঃশ্বাসও নিতে না পারি তাহলে কিভাবে মানসম্মত লেখাপড়া করবো। আর মাদ্রাসা এক শিফট হলে আমাদের জন্য খুবই ভাল হতো।

মহেশখালী হোয়ানক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্র একরাম হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতে ১১ টার পর স্কুলে বসে লেখাপড়া করার কোন পরিবেশ নেই। আমরা ক্লাসে ছাত্র সংখ্যা বেশি তাই সবার শরীরের গরম আরো বেশি। এতে ক্লাস করা একেবারে দুঃস্বাধ্য হয়ে পড়েছে। যদি শিক্ষা মন্ত্রনালয় মর্নিং শিফট স্কুল সময়সূচি ঠিক করে দিয়ে থাকে সেটা যদি স্থানিয় কর্তৃপক্ষ না করে থাকে তাহলে উনারা আমাদের সাথে বড় অন্যায় করছে। কারণ উনাদের নিজের ছেলে মেয়েদের নিশ্চয়ই দুপুর হলে ঘরে নিয়ে গিয়ে রোদ থেকে বা গরম থেকে নিরাপদে রাখে। তাহলে আমরা কেন দুপুর বেলায় একটু বিশ্রাম নিতে পারাবো না। এদিকে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, আমাদের স্কুলে এমনিতেই দুই শিফট স্কুল চালু আছে। সেখানে দেখা যায় যারা প্রাত শাখা অর্থাৎ সকালে স্কুলে আসে তারা অনেকটা সাচ্ছ্যন্দে ক্লাস করছে। আর যারা দিবা বা বিকালে হয়ে তারা খুবই ক্লান্ত ক্লাস করছে কারন গরমে মেয়েদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। তিনি বলেন সরকারের গ্রীস্ম কালিন ছুটি শুরু হবে ১৪ মে থেকে আমার মনে হয় তখন বর্ষা শুরু হবে। এসব বিষয় সরকারের বিবেচনায় নেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে কক্সবাজার সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল আজম বলেন, মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপন আছে এটা সত্য তবে কেউ আমাদের কাছে আবেদন করেনি। যদি কোন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবেদন করেন তাহলে আমরা মর্নিং শিফট চালু করার ব্যবস্থা করবো।

আর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবিএম ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি সোমবারে শেষ হলে সে দিনই মর্নিং শিফট চালুর সিন্ধান্ত দেওয়া হবে। জেলা শিক্ষা অফিসার রাম মোহন সেন বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন আমি দেখেছি। আরো আগে উদ্যোগ নিতে পারলে ভাল হতো, অবশ্যই মর্নিং শিফট চালু করা হবে।

পাঠকের মতামত: