ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় ৭০ নারী শ্রমিকের কাছ থেকে এলজিইডি কর্মচারীর ঘুষ নেয়ার অভিযোগ

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে একটি প্রকল্পে নিয়োজিত ৭০ জন অসহায়-দরিদ্র নারী শ্রমিকের কাছ থেকে বেতনের টাকা উত্তোলনকালে এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঘুষ আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ওই কর্মচারীর নাম মো: আয়াতুল হক। তিনি পেকুয়া এলজিইডি
কার্যালয়ে কার্য-সহকারী পদে কর্মরত রয়েছে।

আজ ২৯ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) সকালে কৃষি ব্যাংক পেকুয়া শাখায় উপজেলার ৭
ইউনিয়নের ৭০ জন নারী শ্রমিক তাদের মজুরি হিসেবে তিন মাসের বেতনের টাকা উত্তোলনের সময় এলজিইডি কার্যালয়ের কর্মচারী আয়াতুল প্রতিজন নারী শ্রমিকের কাছ থেকে ‘অফিস খরচ’ এর কথা বলে ৬’শ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। অবশ্য এ দিন বিকালে এ প্রতিবেদকের কাছে প্রত্যেক নারী শ্রমিকের কাছ থেকে ৬’শ টাকা করে ঘুষ আদায়ের কথাও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৭০ জন এলজিইডির গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নারী শ্রমিক রয়েছে। তিন মাস অন্তর অন্তর তাদের বেতন প্রদান করা হয়। বেতনের কাগজপত্রগুলো জেলা অফিসে ঠিকটাক করতে ঘুষদিতে হয়। ট্রেজারী অফিসেও ঘুষ দিতে হয়। তাই তিনি বাধ্য হয়েই প্রতিজন নারী শ্রমিকের কাছ থেকে ৬’শ টাকা করে আদায় করেছেন। টাকা আদায়ের জন্য কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে আয়াতুল হক কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি-৩
(আরইআরএমপি-৩) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের ন্যায় পেকুয়া উপজেলার
সাত ইউনিয়নে (প্রতি ইউনিয়নে ১০ জন করে) মোট ৭০ জন নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল গেল বছরের জুন মাসে। গত বছরের বছরের জুন মাস থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে পেকুয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার
বিভাগ/স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। উপজেলার ৭ ইউপি চেয়ারম্যানদের
সুপারিশের ভিত্তিতে ওই নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রত্যেক নারী শ্রমিকের মাসিক বেতন ৫হাজার টাকা। তিন মাস অন্তর অন্তর এলজিইডির ওই
প্রকল্প থেকে তাদের বেতন কৃষি ব্যাংক পেকুয়া শাখার মাধ্যমে প্রদান করা হয়। আর উক্ত প্রকল্পে সুপারভাইজার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন
পেকুয়া এলজিইডি কার্যালয়ের কর্মরত কার্য-সহকারী আয়াতুল হক।

অভিযোগ উঠেছে, ২০২০ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই দফায় পেকুয়ার ৭০
জন নারী শ্রমিককে ৬ মাসের বেতন প্রদান করা হয়। আর ২০২১ ইংরেজীর জানুয়ারী
থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের বেতন আজ ২৯ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) প্রদান
করা হয়। প্রতিবারই বেতন প্রদানের সময় অফিস খরচের কথা বলে ওই প্রকল্পের
সুপারভাইজার আয়াতুল হক প্রতিজন নারী শ্রমিকের কাছ থেকে ৬’শ টাকা করে ঘুষ
আদায় করেন। সে হিসেবে তিনি ওই দরিদ্র নারী শ্রমিকের কাছ থেকে তিন দফায় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেছেন।

এছাড়াও গেল বছরের জুন মাসে নারী শ্রমিক নিয়োগের সময়ও অধিকাংশ নারী
শ্রমিকের কাছ থেকে নানান উপায়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। সেসময় টাকা হাতিয়ে
নেওয়ার ঘটনায় আয়াতুল হকের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগও করেছিল
উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের কয়েকজন নারী শ্রমিক। কিন্তু তারা কোন প্রতিকার পায়নি। এরফলে দিন বেপরোয়া হয়ে নানান অনিয়ম-দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছে ওই কর্মচারী।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে) কমল কান্তি পাল বলেন, নারী শ্রমিকদের বেতনের টাকা প্রদানের সময়
কোন ধরনের টাকা নেওয়ার নিয়ম নাই। তার কার্যালয়ের কর্মরচারী আয়াতুল হকের
বিরুদ্ধে নারী শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা
হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ প্রকল্পে নারীকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং নারী প্রধান পরিবারের নারী শ্রমিক, ভূমিহীন বা
শূন্য দশমিক ৫ একরের কম জমির মালিকানাসম্পন্ন এবং মেরামতের জন্য তালিকাভুক্ত সড়কের কাছে বসবাসকারী নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু পেকুয়ার অধিকাংশ ইউনিয়নে নারী শ্রমিক নিয়োগে এসব নির্দেশনা মানা হয়নি। কয়েকটি ইউনিয়নে দরিদ্র নারী শ্রমিকদের কাছ থেকে নিয়োগ পেতে ঘুষ নেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্টরা পেকুয়া এলজিইডির অসাধু কর্মচারী আয়াতুল হককে ম্যানেজ করে গোপনে গত জুন মাসে নারী শ্রমিক নিয়োগের কাজ সম্পন্ন করেছিল। ইউনিয়ন পরিষদ এবং পেকুয়া উপজেলা
এলজিইডির প্রকৌশলীর কার্যালয়ের নোটিস বোর্ডে নারী শ্রমিক নিয়োগের কোনো নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়নি।

পাঠকের মতামত: