ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

অন্ধকারের ‘বাদশাহ’ জাহাঙ্গীর

ছোটন কান্তি নাথ, নিজস্ব প্রতিবেদক ::

দিনের বেলায় মানুষের সঙ্গে কথা বলেন অমায়িক ভাষায়। তাঁর ব্যবহারে মনে হবে, নীরিহ মানুষ। কিন্তু সন্ধ্যার পর সেই মানুষটিই হয়ে ওঠেন অন্ধকারের ‘বাদশাহ’। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার পাঁচটি গ্রামে চলে তাঁর অপরাধের ‘বাদশাহি’।
তাঁর নাম জাহাঙ্গীর আলম। বারবাকিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। অথচ এলাকার মানুষ তাঁর নাম শুনলে ভয় পায়। কারণ তাঁর নেতৃত্বে রয়েছে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। পুলিশের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় রয়েছে তাঁর নামও।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে ভারুয়াখালী গ্রামে বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় শাব্বির আহমদের ছেলে কাঠ ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিনকে। জাহাঙ্গীর এই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ করেছেন নেজামের স্ত্রী শামিনা বেগম।

গত বছরের শেষ দিকে জাহাঙ্গীরকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয় ছোট ভাই আলমগীরের স্ত্রী সালমা বেগমকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায়।

এর আগে ২০২০ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের ছাত্র মো. আনছার উদ্দিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় পেকুয়ায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে ১৩টি সামাজিক সংগঠন। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে সর্বস্তরের মানুষ। এরপর চট্টগ্রামেও কর্মসূচি পালন করা হয় জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তাঁর বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি মামলার রেকর্ড পুলিশের সিডিএমএসে (ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) রয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, জাহাঙ্গীরকে অনেকে চেনে বনদস্যু হিসেবে। তাঁর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বারবাকিয়া ইউনিয়নের ছনখোলার জুম, ছনখোলাপাড়া, পুটিবিন্না, পাশের টৈটং ইউনিয়নের হারকিলারদারা ও আবাদিঘোনার পাহাড়বেষ্টিত অন্তত ২০ হাজার মানুষ। তাঁর বাহিনীতে রয়েছে অস্ত্রধারী ও ডাকাত প্রকৃতির অন্তত ৩০ জন সন্ত্রাসী যুবক। খুন, ডাকাতি, বনের জায়গা দখল-বেদখল, চুরি, বনের গাছ পাচার, চাঁদাবাজি, বালু পাচার, নারীদের সম্ভ্রমহানিসহ নানা অপরাধে জড়িত এই বাহিনী। বাহিনীতে রয়েছেন ছনখোলার বাবু মিয়া, ছাবের আহমদ, জাকের আহমদ, জসিম উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন ও হেলাল উদ্দিন।

জাহাঙ্গীর বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী ছনখোলা গ্রামের জাফর আলমের ছেলে। তাঁর বাবাও এলাকায় ডাকাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া থানা এবং আদালতে খুন, ডাকাতি, অস্ত্র কারবারি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ, বনদস্যুতা, গাছ কাটা, বনের জায়গা দখল-বেদখলসহ নানা অপরাধের দায়ে মামলা রয়েছে। এর আগে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে বেশ কয়েক বছর জেল খেটেছেন।

২ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক সচেতন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জাহাঙ্গীর একসময় ডাকাত ছিলেন। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যখন তিনি ভোটে দাঁড়ান তখন এলাকাবাসীকে কথা দেন, খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবেন। তাই তাঁকে এলাকার মানুষ বিপুল পরিমাণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। এলাকাবাসী মনে করেছিল, জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর থেকে তিনি অন্ধকার জগৎ থেকে সরে আসবেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

বারবাকিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, ‘২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ ওঠায় আমরাও বিব্রত।’

পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘বারবাকিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আওতাধীন ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বছরখানেক আগে। ওই সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য গোপন ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সর্বাধিক ভোট পেয়ে সভাপতি হন জাহাঙ্গীর আলম। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দলীয় ফোরামে আলোচনা করা হবে।’

পেকুয়া থানার পরিদর্শক মো. সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

 

পাঠকের মতামত: