ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পেকুয়ায় ‘গৃহহীন’ হিসেবে দুর্যোগ সহনীয় ঘর পাচ্ছে পাকা বাড়ির মালিক!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে দুর্যোগ সহনীয় বসতঘর পাচ্ছে একতলা পাকা বাড়ির মালিক আবদুল মোনাফ নামের এক ‘ভাগ্যবান’ ব্যক্তি! এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পেকুয়া উপজেলায় গৃহ নির্মাণের জন্য গঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) এই ঘর নির্মাণ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাজের বিনিময়ে টাকা-কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় বিশেষ খাতের বরাদ্দের অর্থ দিয়ে উপজেলার সদর ইউনিয়নের মিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা একতলা পাকা বাড়ির মালিক আবদুল মোনাফকে ‘গৃহহীন’ দেখিয়ে দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কথিত গৃহহীন আবদুল মোনাফ স্থানীয় বাজারের একটি রাইচ মিলে দীর্ঘ ২০/২৫ বছর ধরে ম্যানেজার পদে চাকুরীতে কর্মরত রয়েছে। পেকুয়া সদরের মিয়া পাড়া গ্রামে তার একতলা বিশিষ্ট একটি পাকা বাড়ি রয়েছে। বড় ছেলে এনজিওতে ভাল বেতনে চাকুরী করে। স্ত্রী ও তার নামে কিছু জায়গা-জমিও রয়েছে। আবদুল মোনাফের পরিবারটি এলাকার স্বচ্ছল পরিবার হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। এরপরেও তার পাকা বাড়ির পাশে ‘গৃহহীন’ হিসেবে পাকা বাড়ি নির্মাণের ঘটনা বড় ধরনের দূর্নীতি।

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুন নুর ও ইকবাল হোসেন জানান, পেকুয়ার বহু দরিদ্র লোকের বসবাসের ঘর নাই। প্রকৃত গৃহহীনরা ঘর পায়না। আর আবদুল মোনাফের একতলা পাকা বড়ি থাকার পরেও কিভাবে তিনি সরকারী ঘর পেলো বিষয়টি তাদের বোধগম্য হচ্ছেনা। তারা আরো জানান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম মিনুর সুপারিশের ভিত্তিতেই আবদুল মোনফকে অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে দূর্যোগ সহনীয় ঘরটি বরাদ্ধ প্রদান করেছিল গৃহ নির্মাণের জন্য গঠিত কমিটির সভাপতি ও পেকুয়ার সাবেক ইউএনও সাইকা শাহাদাত ও বর্তমান পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও কমিটির সদস্য সচিব মো: আমিনুল ইসলাম।

স্থানীয় সামাজিক সংগঠন আমরা পেকুয়া বাসী সংগঠনের মহাসচিব মো: হামিদ অভিযোগ করেছেন, সাবেক ইউএনও সাইখা শাহাদাত ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম অনিয়ম-দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে গৃহহীন না হওয়ার সত্ত্বেও আবদুল মোনাফকে দূর্যোগ সহনীয় ঘরটি প্রদান করা হয়েছে। এ ধরনের দূর্নীতি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ আখ্যায়িত করে সামাজিক সংগঠক আবদুল পাকা বাড়ির মালিক আবদুল মোনফকে সরকারী ঘর বরাদ্দ দেওয়ার ঘটনায় যে সব কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সেমিপাকা বসতঘরে থাকছে দুটি কক্ষ, বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার। বসতঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও দুর্যোগে ঝুঁকি হ্রাসকল্পে গৃহহীন পরিবারের জন্য সরকার দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের দূর্যোগ অধিদপ্তর।

পাকা বাড়ি থাকার পরও ‘গৃহহীন’ হিসেবে সরকারী ঘর কিভাবে পেলেন জানতে জানতে চাইলে আবদুল মোনাফ বলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুপারিশ করায় তিনি ঘর পেয়েছেন।

একতলা পাকা মালিক আবদুল মোনাফ ‘গৃহহীন; হয় কিভাবে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেল প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম এ বিষয়ে কোন ধরনের কথা বলতে রাজি হননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাচ্ছেম বিল্লাহ জানান, ঘরটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল সাবেক ইউএনওর আমলে। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি আরো বলেন, ঘরটি উপকারভোগীকে এখনো হস্তান্তর করা হয়নি।

 

পাঠকের মতামত: