ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

লামার বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলেন উপজেলা প্রকৌশলী

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ::  লামা উপজেলার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের মাতামুহুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মান কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণ কাজের শুরুতে ব্যাপক অনিয়ম দেখা গেলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও শতাধিক এলাকাবাসি কাজ বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি, এলাকাবাসি ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা মিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলীর নিকট গত সোমবার অভিযোগ করেন।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওসমান গণি বলেন, অনিয়নের বিষয় গুলো বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও এলাকাবাসি হাতেনাতে ঠিকাদার ও এলজিইডি অফিসের লোকজন দেখিয়ে দিলে স্থানীয়দের মারধরের চেষ্টাসহ মিথ্যা মামলার হুমকি দেয়। পরে এলাকাবাসির সম্মিলিত হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত নির্মান কাজ বন্ধ করে বাস্তবায়ন সংস্থা এলজিইডি।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার ৮০৬ টাকা ব্যয়ে দ্বিতল ৫ কক্ষ বিশিষ্ট ৯৮ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩১ ফুট প্রস্ত মাতামূহুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মান কাজ শুরু হয়। মেসার্স নাহার এন্টার প্রাইজ নামের কক্সবাজারের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মান কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। এ পর্যন্ত ৩৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ খালেকুজ্জামান জানান, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে স্থানীয় সাংবাদিকদের অনেক লেখালেখির পরে চলতি বছরের জুন মাসের শেষের দিকে এলজিইডি বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ শুরু করে। নির্মাণ কাজে অনিয়ন হাতেনাতে ধরে ফেলে স্থানীয় জনগণ।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক মো. কাউছার, মংচিং মার্মা ও শফিউল আলম সহ অনেকে বলেন, বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ শুরু থেকে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সহায়তায় ঠিকাদার আজিজুর রহমান ভবনের বেইচ ঢালায়, সর্ট কলাম ঢালায়, গ্রেড বিম ঢালায় কাজে অনিয়ম করে আসছে। এসব কাজে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার সহ রড কম দেওয়া হয়েছে। নির্মাণকাজের মিশ্রণে এক বস্তা (৫০ কেজি) সিমেন্টের বিপরীতে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি বা চার টুকরি ইটের কংকর ও ১ ফুট দশ ইঞ্চি বা দুই টুকরি বালু দেয়ার কথা রয়েছে। সেখানে ৮/৯ টুকরি ইটের কংকর ও ৪/৫ টুকরি বালু দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে ৫০ কেজি সিমেন্টের জায়গায় ৩২ থেকে ৪০ কেজি সিমেন্ট দেয়া হচ্ছে। আমরা হাতেনাতে ৩২ থেকে ৪০ কেজির সিমেন্টের ১০টি বস্তা আটক করে প্রমাণের জন্য আমাদের হস্তগত করেছি। এ কারণে ভবনটির ফাউন্ডেশন ঢালাইয়ের গ্রেডবিম, সর্ট কলাম ও বেইস ঢালায় অংশে সামান্য কিছু দিয়ে বাড়ি দিলে ভেঙ্গে যাচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে লামা এলজিইডির সার্ভেয়ার জাকের হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মানে আমরা সার্বক্ষনিক উপস্থিত ছিলাম। সোমবার শেষ মুহুর্তে চলে আসলে মিস্ত্রিরা কিছু অনিয়ম করেছে বলে স্থানীয়রা আমাদের জানায়। শুনামাত্র কাজটি বন্ধ করতে বলেছি। পরিবর্তিতে সরেজমিনে উপস্থিত থেকে বাকী ঢালায় কাজ করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ঠিকাদার মো. আজিজুর রহমান বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ভবনের কাজ করছি। আরো কাজ থাকায় সব সময় এখানে থাকতে পারিনা। মিস্ত্রিরা কয়েক বস্তা সিমেন্ট বাঁচানোর জন্য অনিয়মটি করতে পারে।

লামা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, অনিয়মের বিষয়ে জানতে পেরে ভবন নির্মান আপাতত বন্ধ করে দিয়েছি। সর্ট কলাম ঢালায়ের শেষদিকে আমার লোক হয়ত ছিলনা। সেই ফাঁকে মিস্ত্রিরা সামান্য নয় ছয় করতে পারে। একজন ঠিকাদার এত সামান্য চুরি করবেনা।

বিষয়টি নিয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ জান্নাত রুমি সাংবাদিকদের বলেন, এলাকাবাসির অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: