ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৩টি হাট বাজার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের লোকসান

রফিকুল ইসলাম, উখিয়া :
উখিয়ার কুতুপালং থেকে শফিউল্লাহ কাটা ক্যাম্প পর্যন্ত প্রায় ৯লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অবস্থান। এ ১৬টি ক্যাম্পকে ঘিরে রোহিঙ্গারা উল্লেখ যোগ্য ১৩টি হাট বাজার গড়ে তুলেছে। এসব হাট বাজারের পাশাপাশি রয়েছে আরো অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ বলে জানা গেছে। এ যেন মিয়ানমারের রাখাইনের কোন অংশ। কারণ এখানে বাংলাদেশী পণ্যের চেয়ে মিয়ানমারের পণ্যে এসব হাট বাজার সয়লাব হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এসব বাজারের দোকানগুলোতে কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। এরপরও চলছে অবাধে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ এক বছরের বেশী সময় ধরে নানা ভাবে লোকসান দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বালুখালী ২ নং ক্যাম্পের ময়নারঘোনা এলাকায় রাখাইনের বলি বাজার এলাকায় আব্দুল জব্বার খুলে বসেছে বিশাল পাইকারী দোকান। সে জানালো কাউকে কোন ভাড়া দিতে হয়না। সরকারী বন ভূমির উপর গড়ে উঠা বাজারে সে গড়ে তুলেছে এ দোকান। আব্দুল জব্বার জানালো রাখাইনেও তার বড় দোকান ছিল। অধিকাংশ মালামাল মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা রাতের অন্ধকারে চুরি করে গিয়ে আনা। চুন সুপারি, প্রসাধনি সহ কাপড় চোপড় কোন কিছুই বাদ নেই। সবই মিয়ানমারের পণ্য। প্রতিদিন বাংলাদেশী টাকায় ৩০-৩৫ টাকা বেচা বিক্রি করে বলে সে জানান।
উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ১৩টির  অধিক অবৈধ হাটবাজার বসিয়ে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গাদের দিয়ে এসব জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ নিয়ো  প্রশাসনের কোন মাথা নেই। ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব।  এসব হাট বাজার আইনগত ভাবে কোন বৈধতা না থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন এসব হাটবাজার বৈধতার আওতায় এনে রাজস্ব আদায়ের কোন উদ্যেগ নিচ্ছে না। এসব হাটবাজারকে ঘিরে রোহিঙ্গা অপরাধী ও স্থানীয় অপরাধীরা নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটিয়ে চলছে।
সরজমিনে দেখা যায়, উখিয়ার থাইংখালী, জামতলী, বাঘঘোনা, হাকিমপাড়া, ময়নার ঘোনা, কুতুপালং লম্বাশিয়া, মধুর ছড়া, ইরানী পাহাড়, মক্কা মদিনা পাহাড়, মদিনার ঘোনা, বাশেঁর কেল্লা, টিভি রিলে কেন্দ্র, রাবার বাগান, নৌকার মাঠ, বালুখালী, তেলিপাড়া, পানবাজার, পশ্চিম বালুখালী, তাজনিমারখোলা, শফিউল্লাহকাটা ক্যাম্পে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তুলেছে ২০টির অধিক হাটবাজার। প্রতিটিবাজারে অন্তত কয়েক শতাধিক দোকান বসিয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি বনভূমির জায়গায় স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও জনপ্রতিনিধিরা রাতারাতি ফায়দা লুটার কু-উদ্দ্যেশে রোহিঙ্গাদের দিয়ে দোকান বসিয়ে হাটবাজার নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণের চাঁদা আদায় করে আসছে। এসব বাজার গুলোতে রয়েছে, মুদির দোকান, ফার্মেসি, কাঁচা তরি তরকারি, হোটেল, টি স্টল, গ্যাস স্টেপের দোকান, রকমারি স্টোর, মাছ ও মাংসের দোকান, কাপড়ের দোকান, মোবাইল বিক্রয়ের দোকান, জুয়েলার্সের দোকান ঔষুধের দোকান (ফার্মেসী)। যার একটিরও বৈধ ট্রেড লাইসেন্স ও সংশ্লিষ্ট বৈধ কর্তৃপক্ষের ছাড় পত্র নেই।
ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসানো হাটবাজারে দোকান গুলোতে ব্যবসা পরিচালনা করছে রোহিঙ্গা মাঝি থেকে শুরু করে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। ওই বাজারের দোকান গুলোতে কোন বৈধ কাগজ ও ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স নেই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাট বাজার গুলোতে নিরাপত্তার অভাবে স্থানীয় লোকজন আগ্রহী থাকলেও ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে না। এসব বাজার বসার কারনে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এমন কি স্থানীয়দের সাথে রোহিঙ্গাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন থাইংখালী জামতলি বাজার কমিটির সভাপতি জামাল উদ্দিন সওদাগরসহ অনেকে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গারা কিভাবে প্রশাসনের সামনে ক্যাম্পে বাজার বসিয়ে দোকানে ব্যবসা পরিচালনা করছে তা আমার জানা নেই। শুধু তাই নয়, শত শত  রোহিঙ্গা যুবক এনজিওতে চাকরি করছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের মাঝে ক্ষোভ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকুরীর সুযোগ দিলে আগামীতে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাড়াবে। কারণ রোহিঙ্গারা এখানে এসব সুযোগ সুবিধা পেলে মিয়ানমারে ফেরত চাইবেনা। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে গড়ে উঠা দোকান ও বাজারের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানানো হয়েছে। উপরের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পাঠকের মতামত: