ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

প্রসঙ্গ: মাতামুহুরী সেতু সংস্কার! ঘঁষা-মাজা করে রূপচর্চা হয়না

এম.আর. মাহামুদ ::

বরেণ্য শিল্পী মনির খানের হৃদয়গ্রাহী গানের একটি কলি বার বার নাড়া দেয়, গানের কলিটি হচ্ছে- ‘চুলে কলপ দিয়ে বয়স কমাই, আত্মারে কষ্ট দিয়ে টাকা জমাই’। গানের মাধ্যমে তিনি সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। অনুরূপভাবে না বলে পারছিনা-রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে পুরনো সেতু রং ও উপরের অংশে খানা-খন্দ ভরাটের নামে সরকারি অর্থ নষ্টের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ কারো কাছে কোনদিন গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। কথায় আছে- “ধরে বেঁধে যেমন সংসার হয়না, তেমনি ঘঁষা মাজা করে রূপ চর্চা হয়না”।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্র চিরিংগার উত্তর-পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত মাতামুহুরী নদীর উপর পাকিস্তান আমলে নির্মিত সেতুটি বর্তমানে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ স্থানীয় যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করছে। কয়েকবছর আগে সেতুটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে হৃদয়ের মাঝখানে বাইপাস সার্জারী, চলতি বছর নিচের অংশে কৃত্রিম হাটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তাতে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছেনা। এ খাতে জুনের আগে প্রায় তিন কোটি টাকার কম-বেশী ব্যয় হয়েছে। যা না করলে হয়তো সেতুটি সচল রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ত। রমজানের শেষ ও ঈদের আগে অতি বর্ষণজনিত কারনে সেতুর উপরের অংশে ব্যাপক ক্ষতচিহ্ন পরিলক্ষিত হয়েছে। এতে কি পরিমাণ জনভোগান্তি হয়েছে তা যাত্রীরাই অনুধাবণ করতে পেরেছেন। সওজ কর্তৃপক্ষ বিটুমিন মিশ্রিত কংকরের প্রলেপ দিয়ে ক্ষতচিহ্ন ঢাকার ব্যর্থ প্রয়াস কম করেনি। ক’দিন বৃষ্টি হলেই পুনরায় ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠে। সেতুর উপরের অংশ দেখলে যে কেউ মন্তব্য করবে ‘এ যেন-হুতুম পেঁচার মাথা’। একি কখনো নতুন সেতু ছাড়া ময়ূঁরের পেখমের মতো হবে না।

কক্সবাজারের সর্বস্তরের মানুষ মাতামুহুরী নদীর সেতু নতুনভাবে নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসলেও এখনো পর্যন্ত এ সেতু নির্মাণের কোন তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। তবে কেউ কেউ দাবী করছে, একনেকে সেতুটির জন্য বিশাল অংকের টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নতুন সেতু নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত এ সেতু দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে হবে। অন্যথায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

সেদিন এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে এক বয়স্ক রোগী গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। ওই রোগী তার সব সমস্যার কথা বলার পর ডাক্তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। রোগী ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় প্রবেশ করে ডাক্তারকে বলে বসলেন- ‘আমি একটু ভুল করেছি, আরেকটি সমস্যার কথা বলিনি’। তখন ডাক্তার সাহেব বয়স্ক রোগীর কথা শুনে বিনয়ের সাথে বললেন, চাচা কি সমস্যা, রোগী বললেন পানি খাওয়ার সময় হাত কাপে, তবে পানি পড়ে যায়না। ডাক্তার সাহেব বললেন- চাচা কিছু মনে করবেন না, ঢাবের পানি নড়ে কিনা? রোগী বললেন, না। নারিকেলের পানি নড়ে কিনা, রোগী বললেন- হ্যাঁ। তখন ডাক্তার ওই বয়স্ক রোগীকে উপদেশ দিলেন আপনি এখন আর ডাব নেই, নারিকেল হয়ে গেছেন। মন্তব্য- নি®প্রয়োজন। মাতামুহুরী সেতুর অবস্থাও অনুরূপ।

পাঠকের মতামত: