ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মায়ানমারে মুসলিম নির্যাতন বন্ধের দাবিতে রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

ramu coxsbazar pic (2) 31.08.17সোয়েব সাঈদ, রামু :::

কক্সবাজারের রামুতে মায়ানমার সরকার কর্তৃক আরাকান রাজ্যে মুসলিমদের প্রতি চলমান বর্বর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে বৌদ্ধ (বড়–য়া ও রাখাইন) সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 আজ বৃহষ্পতিবার (৩১ আগষ্ট) বিকাল চারটায় রামু চৌমুহনী স্টেশন চত্বরে আয়োজিত বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ সাইমুম সরওয়ার কমল।

সাংসদ কমল বলেন, মায়ানমার সরকার কর্তৃক মুসলিমদের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা, ধর্ষন, বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ বিশ^বাসীকে হতবাক ও মর্মাহত করেছে। মুসলমান কেন, কোন ধর্ম-বর্ণের মানুষের উপর এমন নির্যাতন মেনে নেয়া যায় না। তিনি অবিলম্বে বর্বরতা বন্ধের আহবান জানিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে মায়ানমার সরকারের নেতৃত্বে চলমান এ রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বিশ^ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

 সমাবেশে রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর বর্বরোচিত নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, শান্তি স্থাপনের মাধ্যমে সকল সমস্যা সমাধান সম্ভব। সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সমস্ত অন্যায়-অত্যাচারের চিত্র ফুটে উঠেছে তা হৃদয় বিদারক ও নিন্দনীয়।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংঘনায়ক, একুশে পদক প্রাপ্ত এ ধর্মীয় গুরু মায়ানমার সরকারকে অমানবিক নির্যাতন বন্ধের জন্য দাবি জানান। পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক বিশ্বকে এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহনের অনুরোধ জানান। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের সকল ধর্মের সকল মানুষকে ধৈর্যের সাথে অবস্থান করে শান্তি রক্ষার আহবান জানান।

 রামু কেন্দ্রিয় সীমা বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুন বড়–য়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ উল আলম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সদস্য ও বাংলাদেশ স্কুল ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান বিজন বড়–য়া, রামু কেন্দ্রিয় সীমা বিহারের উপাধ্যক্ষ শীলপ্রিয় ভিক্ষু, রাখাইন জনগোষ্ঠির পক্ষে মং ক্যা হ্লা রাখাইন, কাউয়ারখোপ হাকিম রকিমা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কিশোর বড়–য়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ ঐক্য কল্যাণ পরিষদ রামুর সহ সভাপতি অলক বড়–য়া, রামু উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নীতিশ বড়–য়া, যুবলীগ নেতা পলক বড়–য়া আপ্পু, নবীউল হক আরকান, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি রামুর সভাপতি স্বপন বড়–য়া, রামু চৌমুহনী বণিক সমবায় সমিতি লি. এর সহ সভাপতি রুহুল আমিন, সদস্য স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আজিজুল হক আজিজ, ইউপি সদস্য লিটন বড়–য়া, বৌদ্ধ নেতা বিমল বড়–য়া, সন্তোষ বড়–য়া, ব্যোমকেশ বড়–য়া, সাধন বড়–য়া মহাজন, বিপুল বড়–য়া আব্বু প্রমূখ।

 সমাবেশে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল আরো বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানরা শত শত বছর ধরে আরাকান রাজ্যে বসবাস করে আসছে। তাদের সাথে সংলাপ না করে কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কর্মকান্ডের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মায়ানমার সরকার এখন গণহত্যায় নেমেছে। বাংলাদেশে হলি আর্টিজানের ঘটনার সময় কিছু জঙ্গী ২২ জন দেশী বিদেশীকে হত্যা করে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে শুধু জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিয়েছে। বাংলাদেশে শতবার জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে। এখানে তাদেরকে দমন করতে গিয়ে কোন সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। অথচ মায়ানমারে মাত্র ১২ জন পুলিশ নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে তারা কোন বিদ্রোহীকে না ধরে হাজার হাজার শিশু-নারী-পুরুষকে হত্যা করেছে এবং করে যাচ্ছে। এটা কোন সভ্য দেশে হতে পারেনা। কোন মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না।

মায়ানমারের ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে কাউকে সম্প্রীতি নষ্ট না করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, কোন ব্যক্তির দোষের জন্য তার সমাজকে দায়ি করা যাবেনা। আবার কোন সমাজের দোষের জন্য তার জাতিকে দোষি করা যাবেনা। মায়ানমারের বার্মিজ সরকার বা রাখাইন গোষ্ঠী দোষ করতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের রাখাইন সমাজ বা বৌদ্ধ গোষ্ঠী নিরপরাধ। এজন্য এখানে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাওয়া কোন ভাবে ঠিক হবে না।

 মানববন্ধন ও সমাবেশে কক্সবাজার-রামুর বড়–য়া ও রাখাইন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ শত শত নারী-পুরুষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তুরের জনতা অংশ নেন।

পাঠকের মতামত: