ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে সরিষা চাষে নতুন সম্ভাবনা!

তাজুল ইসলাম পলাশ :: কক্সবাজার জেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলনে ভাগ্য খুলে যেতে পারে কয়েক হাজার কৃষকের। সরিষার এই ফলনে কৃষকের চোখেমুখে আনন্দের আভা ফুটে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠে এখন হলুদের ঢেউ।

চাষিরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ৪-৫ মন সরিষা উৎপাদন হবে বলে ধারণা করছেন তারা। যেখানে বিঘা প্রতি কৃষকের খরচে পড়েছে ২-৩ হাজার টাকা’র মতো।

সাধারণত ছয়টি জাতের সরিষা আবাদ হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের কৃষকেরা এবার উচ্চফলনশীল (উফশী) সরিষা বারী-৯, বারী-১৪, জাতের সরিষা চাষ করেছেন। আমন ধান কাটার পর খালি পড়ে থাকা জমিতে কৃষকেরা সরিষা ক্ষেত করেছেন।

অল্প খরচে বেশি লাভবান হয়ে থাকবেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সরিষা চাষিরা, এমনটাই জানালেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ কবির হোসেন।

তিনি বলেন, আমন ধান কাটার পর পড়ে থাকা কৃষি জমিতে কৃষকেরা সরিষার চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমি থেকে কৃষকেরা ৫ মন পর্যন্ত সরিষা তুলতে পারবেন। যেখান থেকে বিঘা প্রতি আয় হতে পারে ৫০ হাজার টাকা। প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ২ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হবে। ১০০ টাকা করে হিসেবে দেখা যায় ৯২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ কৃষকের আয় হবে ১০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে দেওয়া তথ্য দেখা যায়, জেলায় এবার সরিষার আবাদ হয়েছে ৯২৫ হেক্টর। যেখানে ২০২৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৫২৫ হেক্টর। ৪০০ হেক্টর জমিতে বাড়তি সরিষার আবাদ হয়েছে। যাকে কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২২ সালে জেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ করা হয়েছিল। যেখানে ফলন হয়েছিল ৫৫০ মেট্রিক টনেরও বেশি। কৃষকেরা ভালো মূল্য পাওয়ায় এবার সরিষার চাষাবাদ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষা চাষ করা হয়েছে ৯২৫ হেক্টর জমিতে। যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২৫ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ৪০০ হেক্টর বেশি।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সরিষা চাষাবাদ হয়েছে চকরিয়ায় ৪২৫ হেক্টর। তারপর পেকুয়া ২১৫ হেক্টর, রামু ১০০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৭০ হেক্টর, মহেশখালী ৫০ হেক্টর, টেকনাফ ৩০ হেক্টর, উখিয়া ২০ হেক্টর এবং কুতুবদিয়া ১৫ হেক্টর।

উপপরিচালক বলেন, সাধারণত সরিষা ফলনের ৯০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বকুল আসতে শুরু করে। তিনি বলেন, এটি কৃষকের বাড়তি আয়। আমান আবাদের পর পড়ে থাকা জমি থেকে কৃষকেরা লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করবে। এতে কৃষকেরা স্বাবলম্বী’র পাশাপাশি দেশও স্বণির্ভর হবে।

খুরুলিয়া মকবুল সওদাগরের বাড়ির ছুরুত আলম ৪ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। কথা হলে তিনি জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতা তিন কানি জমিতে সরিষার চাষ করেছি? দুই মাস হয়েছে। এখন বকুল শুকিয়ে আসছে। আর একমাস পর সরিষা সংগ্রহ করতে পারবো। ফলন ভালো হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। তার এই ক্ষেতে তিনি ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি আশাবাদী, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দুই লাখ টাকার মতো সরিষা বিক্রি করতে পারবেন।
রশিদ আহমেদ ও মনির হোসেন জানান, এই বার প্রথম বারের মতো সরিষার চাষ করেছেন। সামান্য পুঁজিতে অধিক ফলন আশা করছেন তারা। এখন সরিষা কেটে বিক্রির আশায় বুক বেঁধে আছেন তাদের মতো হাজারো কৃষক।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হাসান চকরিয়া নিউজকে বলেন, গেলো বছর সদর উপজেলায় মাত্র ৬ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে ৭০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। অন্যান্য ফলনের চেয়ে সরিষার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এজন্য আমরা কৃষকদের প্রণোদনার পাশাপাশি সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি, যাতে কৃষকেরা ক্ষেত করে লাভবান হয়। কারণ এই সময়টা অনেকে জমি খালি রাখে। এই পড়ে থাকা জমি থেকে কৃষকেরা নিসন্দেহে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন। এজন্য কৃষকদের সময়মত সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে। রোগবালাই থেকে রক্ষা করতে আমাদের মাঠ কর্মীরা সার্বক্ষণিক তাদের দেখভাল করছেন।

পাঠকের মতামত: