ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ায় পরীক্ষা ছাড়াই বার্মাইয়া অসুস্থ ও মরা গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগ, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সদরের সোসাইটি কাঁচাবাজার ও বিভিন্ন হাটবাজারে মায়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা অসুস্থ ও মরা গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মাংস বিক্রেতাদের একটি সিন্ডিকেট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ফাঁকি দিয়ে গত দুইমাস ধরে আলীকদম থেকে অসুস্থ ও মরা গরু জবাই করে চকরিয়া উপজেলায় এনে দিব্যি ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, গরু জবাই করার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা পরবর্তী উপজেলা বা পৌরসভার স্যানেটারী পরিদর্শক ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামুলক থাকলেও চকরিয়া পৌরসভার সোসাইটি কাঁচাবাজারের মাংস বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট তা অমান্য করে চলছেন দীর্ঘদিন ধরে। এতে বেশিরভাগ সময় রোগাক্রান্ত গরু জবাই করে বিক্রি করা হচ্ছে জনগণের মাঝে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সময়ে মায়ানমার ( বার্মা) থেকে বান্দরবানের আলীকদম হয়ে প্রতিদিন চোরাই পথে আসছে মায়ানমারের গরু মহিষের চালান। এসব চালান আসার পথে প্রতিদিন অসংখ্য গরু মহিষ অসুস্থ হচ্ছেন, আবার পথে মারা যাচ্ছেন অনেক গরু।

অভিযোগ উঠেছে, পাচারকারী চক্রের লোকজন পথে মারা যাওয়া বা অসুস্থ হয়ে পড়া এসব গরু পাহাড়ের ভেতরে জবাই করে দিচ্ছেন। রাতের বেলায় এসব গরু জবাই করে পরদিন ভোর সকালে গাড়িতে করে চকরিয়া নিয়ে আসছেন অসাধু মাংস বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট। এরপর চকরিয়া পৌরসভার সোসাইটি কাঁচাবাজার ও বিভিন্ন হাটবাজারে দেশীয় গরুর মাংস হিসেবে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

অবশ্য বিষয়টি গোপনে জানতে পেরে ইতোমধ্যে চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী চকরিয়া উপজেলা সদরের সোসাইটি কাঁচাবাজারে ১৮ মাংস বিক্রেতাকে নোটিশ দিয়ে তার অফিসে ঢেকে পাঠিয়েছেন। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ( পৌর সচিব) মাস উদ মোর্শেদ। তিনি বলেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ বা চকরিয়া পৌরসভার স্যানেটারি পরিদর্শকের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই গরু জবাই পরবর্তী মাংস বিক্রি করছেন বেশিরভাগ মাংস ব্যবসায়ী।

আবার অতিসম্প্রতি মায়ানমার ( বার্মা) থেকে চোরাই পথে আসা মায়ানমারের অসুস্থ ও মরা গরু আলীকদমে জবাই চকরিয়া উপজেলায় নিয়ে এসে দেশীয় গরুর মাংস হিসেবে বিক্রি করছেন তারা। এইধরনের অভিযোগ পেয়ে সোসাইটি কাঁচাবাজারের মাংস বিক্রেতাদের মধ্যে আবদুস শুক্কুর, মোজাম্মেল হক, মানিক, মিনহাজ উদ্দিন, জয়নাল আবেদীন, গোলাম মোস্তফা, রুবেল, এরফানসহ মোট ১৮জনকে নোটিশ দেওয়া হয় চকরিয়া পৌরসভার বাজার শাখা থেকে।

পৌর সচিব মাস উদ মোর্শেদ আরও বলেন, মঙ্গলবার বিকালে চকরিয়া পৌরসভা কার্যালয়ে মেয়র আলমগীর চৌধুরী মাংস বিক্রেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে অনেকের বিরুদ্ধে মায়ানমারের অসুস্থ ও মরা গরুর মাংস এনে বিক্রি করার সত্যতা পাওয়া গেছে।

সভায় মেয়র আলমগীর চৌধুরী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, এখন থেকে চকরিয়া পৌরসভার সোসাইটি কাঁচাবাজার ও পৌরসভার অধীন বিভিন্ন বাজারে গরু জবাই করার আগে পৌরসভার স্যানেটারী পরিদর্শক উপস্থিত থাকবেন। স্যনেটারী পরিদর্শক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সীল মারলে ওই গরু জবাই করে বিক্রি করা যাবে। যদি কেউ মরা গরুর মাংস বিক্রি করছে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, চকরিয়ায় মাংস বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ওজনে কারচুপির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এখন থেকে কেউ মাংস বিক্রিতে ওজনে কম দিলে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং কেউ বাসী মাংস হিসেবে করলে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি মাংস জব্দ করা হবে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, আমিও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। শুনেছি, উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই এইধরনের গরু মহিষ জবাই করে বিক্রি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাজার ইজারাদারকে নোটিশ দিয়েছি। এইধরনের ঘটনা পেলে তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনকে জানাতে। পাশাপাশি উপজেলার সকল মাংস বিক্রেতাকে ঢেকে নিয়ে এব্যাপারে চকরিয়া প্রশাসনের কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: