ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

‘হত্যা মামলার আসামি’ উপজেলা আ.লীগ সভাপতি!

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম শাহাব উদ্দিন ফরাজীকে ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় আসামি হয়ে কারাভোগ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

এছাড়া বিগত নির্বাচনসহ টানা দুবার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছেন শহীদুল্লাহ। এরপরও তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে পুরস্কৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অপরদিকে নিহতের পরিবারের সদস্যদের মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম শাহাব উদ্দিন ফরাজী পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এখনো সেই একই কমিটি বহাল আছে। ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর ভোরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ঘটনায় মামলা হয়। তদন্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি একই ইউনিয়নের বাসিন্দা মাস্টার নুরুল হকের ছেলে মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কথা বেরিয়ে আসে।

পুলিশ ওই বছরই শহীদুল্লাহকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। জেল থেকে বেরিয়ে ২০১৬ সালে টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গেল ইউপি নিবাচনেও তিনি নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ঘোড়া মার্কা নিয়ে ১৪৫ ভোট পেয়েছেন। সম্প্রতি শহীদুল্লাহ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত্যার শিকার শাহাব উদ্দিন ফরাজীর পরিবারকে ডেকে নিয়ে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা হাঁটলেন ঠিক তার উল্টো পথে!

শাহাব উদ্দিন ফরাজীর ছেলে পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান ফরাজী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার বাবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সবকিছু জানার পরও জেলার আওয়ামী লীগের নেতারা আসামি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে আমার বাবার ৪০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছেন।

তিনি আরো বলেন, জেলা-উপজেলার যেসব নেতা শহীদুল্লাহকে ফরাজীর খুনি বলে সম্বোধন করে সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিতেন; তারাই এখন তাকে সঙ্গে নিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন।

শাহাব উদ্দিন ফরাজীর স্ত্রী জেবুরুন্নেছা বলেন, আমার স্বামী পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। এখনো সেই আগের কমিটিই বহাল আছে। সেই কমিটিতে স্বামীর হত্যাকারীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে বসিয়ে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে এবং আমাদের চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ওই হত্যাকারী এখন আমাদের মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন।

টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, যিনি সভাপতি ফরাজীকে হত্যা করেছেন, সেই হত্যাকারীকে আবার তার পদে বসিয়ে দেওয়াটা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অপমাণিত করার শামিল।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিমের সদস্য এসএম গিয়াস উদ্দিন বলেন, মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী এবং শাহাব উদ্দিন ফরাজী হত্যার আসামি। হত্যা মামলার আসামি পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে বাদীর পরিবার হতাশায় পড়বে- এটাই স্বাভাবিক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, শহীদুল্লাহ্ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোয়ন নিলেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এ কারণে তাকে পেকুয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে।

তৎকালীন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাব উদ্দিন ফরাজী হত্যার আসামি হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শহীদুল্লাহ হত্যা মামলার আসামি হলেও অভিযোগ এখনো প্রমাণিত হয়নি। তাই নিয়ম অনুযায়ী তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নজরে আনা হলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক টিমের প্রধান হুইপ স্বপন আহমেদ এমপি যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত যথাবিহিত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যই পুলিশ আটক করেছিল। এর বাইরে কিছু নয়।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলে কারাগারে কেন পাঠানো হয়েছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

শহীদুল্লার দাবি- উপজেলার নেতাদের সর্বসম্মতিক্রমে পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের অনুমতিক্রমে তাকে পেকুয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে।

পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ আলী জানান, পুলিশ ঘটনার সম্পৃক্ততা পেয়েছিল বলে তাকে (শহীদুল্লাহ) আসামি করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। শুধু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউকে আটক করা হলে এবং ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে কারাগারে পাঠানোর প্রশ্নই আসে না। যুগান্তর।

পাঠকের মতামত: