ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাসায় ঢুকে পিটিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা

লিবিয়ায় সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হলেন চকরিয়ার বাবুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সাড়ে আট বছর আগে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় যান কক্সবাজারের চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ঈদমণি পশ্চিম পাড়ার ইব্রাহিম খলিল বাবুল (৪৪)। লিবিয়ার রাজধানীর ত্রিপলিতে কাজ করেছেন এতদিন। কথা ছিল আর কিছুদিন পর দেশে ফিরে নিজের বড় মেয়ে বিয়ে দেবেন। পাত্রও ঠিক করা হয়েছে। এরপর বাড়ি নির্মাণ করবেন। এজন্য মোটামুটি প্রস্তুতিও চলছিল। প্রবাস থেকে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ছিল পরিবারের সাথে। কিন্তু লিবিয়া প্রবাসী ইব্রাহিম খলিল বাবুলের স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বৃহস্পতিবার ভোররাতে ত্রিপলিতে একটি ডাকাতচক্র বাসায় ঢুকে শ্বাসরোধে এবং পিটিয়ে হত্যা করে বাবুলকে। এ সময় টাকা, দামি জিনিসপত্রও লুট করে তারা। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে গ্রামের বাড়িতে খবর আসে। ইব্রাহিম খলিল বাবুল ঈদমণি পশ্চিম পাড়ার মাস্টার হাকিম আলীর (৮০) পুত্র।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে নিহত বাবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, খবর পেয়ে স্বজনেরা আসছেন। বাড়ির উঠানে বসে কান্না করছিলেন ছোট বোন আরজু মিনা। বাড়ির ভেতর থেকেও ভেসে আসছিল কান্নার আওয়াজ। বড় ছেলে খুন হওয়ার খবরে নির্বাক হয়ে পড়েছেন বাবা হাকিম আলী।

বাবুলের স্ত্রী বুলবুল আক্তার বলেন, সর্বশেষ গত বুধবার রাত দশটার দিকে প্রবাস থেকে ভিডিও কলে আমার সাথে কথা বলেন তিনি। তখনও বুঝতে পারিনি এই কথা যে, শেষ কথা, শেষ দেখা। সাত বছরের শিশুকন্যাকে দেখিয়ে বুলবুল আরও বলেন, আমার এই মেয়ে সরাসরি তার বাবার চেহারাটা পর্যন্ত দেখতে পারেনি। তাকে আমার গর্ভে রেখে লিবিয়ায় কাজের সন্ধানে চলে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে যাওয়ার একমাস পর এই মেয়ের জন্ম হয়। সে এখনো বুঝতে পারছে না বাবা যে তাদের ছেড়ে চলে গেছে। এই জীবনে আর তাকে ফিরে পাবে না।

নিহত বাবুলের দুই কন্যা উম্মে সালমা মিশু ও উম্মে কুলসুম মিলি বলেন, বাবা যখন বিদেশ যায়, তখন আমরা ছোট ছিলাম। সেখানে যাওয়ার পর প্রথমদিকে বাবা তেমন কাজ পাচ্ছিল না। বছর দুয়েক পর বাবা জানাল, তিনি এখন খুব ভালো পজিশনে আছেন। কাজও বেশ মিলছে। দেশে ফিরে আমাদের জন্য নতুন বাড়ি করবেন। লিবিয়ার ত্রিপলীতে ডাকাত-সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ছিল বেশ। এনিয়ে বেশ দুশ্চিন্তাও করতেন বাবা। তবে আমাদেরকে সবসময় হাসিখুশিতে রেখেছিলেন। প্রতিনিয়ত ভিডিও কলে কথা বলতেন আমাদের সাথে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডাকাত-সন্ত্রাসীরা আমার বাবাকে বাঁচতে দিল না। এখন আমরা কাকে বাবা ডাকব? কার আশায় অপেক্ষা করব?

পরিবার সদস্যরা লিবিয়া থেকে বাবুলের লাশ দেশে ফেরত আনতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন দাবি করেছেন। বাবুলের বৃদ্ধা মা রাবেয়া বেগম বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, আমি আর কিছুই চাই না। শুধু আমার ছেলের লাশটা ফেরত চাই। আল্লাহ কি আমার ছেলের মুখ দেখাবে। আমি সরকারের প্রতি দাবি জানাই, আমার ছেলের লাশ যাতে দেশে ফেরত আনতে সহায়তা করে।

পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারহানা আফরিন মুন্না দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমরা জেনেছি, পাসপোর্টসহ বাবুলের লাশ সেই দেশের পুলিশ উদ্ধার করেছে। বর্তমানে সেখানকার হাসপাতালের মর্গে লাশটি রয়েছে। তার লাশ দেশে ফেরত আনতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, খবরটি আমি মৌখিকভাবে শুনেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এরপর লাশটি দেশে ফেরত আনতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: