ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

তামাকের মরণ থাবা-৪

স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ৪ কোটি ব্যবহারকারী

শামীমুল হক :: মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের প্রায় ৪ কোটি তামাক ব্যবহারকারী। হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই তারা ব্যবহার করছে তামাক। সহজলভ্য হওয়ায় ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগই এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো বলছে, খুচরা বিক্রি তামাকপণ্যের সহজলভ্যতা বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া কর পদক্ষেপ ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা বাস্তবায়ন অনেকটাই দুর্বল করে দেয়। বিড়ি-সিগারেট এবং গুল-জর্দা খোলা বা শলাকা হিসেবে বাজারে পাওয়া গেলে বিশেষ করে তরুণ, কিশোর ও স্বল্প আয়ের মানুষ সহজে এবং অল্প খরচে কেনার সুযোগ পায়। বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। এ ছাড়া ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ছাত্রছাত্রীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৯.২ শতাংশ। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘ইকোনমিক কস্ট অব টোব্যাকো ইউজ ইন বাংলাদেশ: এ হেলথ কস্ট অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক গবেষণা ফলাফলে দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ, ভারত ও ফিলিপাইনে বেশির ভাগ ধূমপায়ী প্যাকেটের পরিবর্তে খুচরা শলাকা হিসেবে সিগারেট কিনে থাকে। এই খুচরা বিক্রি তরুণ ও স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে ধূমপান সহজলভ্য করে তোলে। এ কারণে তাদের মধ্যে ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা হ্রাস পায়। এ ছাড়া ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য খোলা অবস্থায় বাজারজাতকরণের সুযোগ থাকায় এগুলোর উৎপাদন খরচ কমে যায়। তাছাড়া কর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। ফলে সহজলভ্য হয়ে ওঠায় স্বল্প আয়ের মানুষ ও নারীরা এসব পণ্য ব্যবহারে বেশি উৎসাহিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের তথ্যমতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিয়ানমার ও নেপালের পরেই বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দামে সস্তা ব্র্যান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য এখানে আরও সস্তা। খুচরা শলাকা ও খোলা তামাকপণ্য বিক্রির ফলে এই সহজলভ্যতা ক্রমশ বাড়ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ অবস্থায় দেশে খুচরা শলাকা ও খোলা তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো।
এ ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক এক প্যাকেট সিগারেট ব্যবহারকারী একজন ধূমপায়ী সিগারেট কেনা ও ব্যবহার করার সময় দিনে কমপক্ষে ২০ বার, বছরে ৭,০০০ বার সিগারেটের প্যাকেটে ছাপানো ছবি দেখে থাকে। অথচ খুচরা শলাকা বিক্রি হলে ক্রেতারা স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা দেখতে পায় না। ফলে তামাক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা তামাকপণ্যের ব্যবহার হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে না। এ অবস্থায় বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ সংশোধন করে বিড়ি-সিগারেটের সিঙ্গেল স্টিক বা খুচরা শলাকা এবং প্যাকেট ব্যতীত বা খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করলে এর সুফল পাওয়া যাবে।
বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য খোলা অবস্থায় বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলে জনগণের মধ্যে বিশেষ করে কিশোর, তরুণ, নারী ও স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের সহজলভ্যতা ও ব্যবহার হ্রাস পায়। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান সহ বিশ্বের ১১৮টি দেশ সিঙ্গেল সিগারেট স্টিক বা ছোট প্যাকেট বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিড়ি-সিগারেটের খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।

পাঠকের মতামত: